ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম বোর্ডে বেড়েছে পাশের হার ও জিপিএ-৫

মো.মহিউদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩
চট্টগ্রাম বোর্ডে বেড়েছে পাশের হার ও জিপিএ-৫ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে গত তিন বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই বেড়েছে। এবার পাশের হার ৮৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

গতবার এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ হিসেবে পাশের হার ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে।


চট্টগ্রাম বোর্ডে এবছর উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে জিপিএ- ৫। গত বছর ৩ হাজার ৫৩৩ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবার এ সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৪ হাজার ১০৫ জনে।

জেএসসি পরীক্ষায় এবার পাশের দিক থেকে ছেলেরা এগিয়ে থাকলেও মেয়েরা পিছিয়ে পড়েছে। ছেলেদের পাশের হার যেখানে ৮৭ দশমিক ৩৪ সেখানে মেয়েদের পাশের হার ৮৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। তবে জিপিএ- ৫ পাওয়ার দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা।

৭ হাজার ৬৫৬ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেলেও এক্ষেত্রে ছাত্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৪৪৯ জন। এছাড়া সেরা তিন বিদ্যালয়ের মধ্যে দুটিই বালিকা বিদ্যালয়।
ctg-JSC-4sm
এবার শতভাগ পাশ এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১০৫ এ। যা গত বছর ছিল ৫৮। গত বারের মতো এবারও পাশের হার শূণ্য এমন কোন বিদ্যালয় নেই।

রোববার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. পীযুষ দত্ত। এসময় বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক সুমন বড়ুয়া, উপ-সচিব মাহবুব হাসান, বিদ্যালয় পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সামগ্রিক ফলাফলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় ক্রমান্বয়ে পাশের হার বাড়ছে। জেএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকে চট্টগ্রাম বোর্ডে সর্বোচ্চ ফলাফল এবার।

সব ক্ষেত্রে পাশের হার বেড়েছে জানিয়েছে তিনি বলেন, অন্যান্যবার তিন পার্বত্য জেলায় পাশের হার কম থাকায় সামগ্রিক ফলাফলে চট্টগ্রাম বোর্ড পিছিয়ে থাকতো। কিন্তু এবার তিন পার্বত্য জেলার পাশাপাশি মফস্বল এলাকায়ও পাশের হার বেড়েছে।

পিযূষ দত্ত জানান, জেএসসি পরীক্ষা শুরুর প্রথম বছর (২০১০) চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ছিল ৭০শতাংশ। তার পরের বছর কিছুটা বেড়ে ৭২ শতাংশ এবং ২০১২ সালে পাশের হার ৭৮ শতাংশ।

তিনি বলেন, জেএসসিতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তার মানে শিক্ষার্থীরা শিক্ষামুখি হচ্ছে। তার প্রমাণ ফলাফলের ধারাবাহিক উন্নতি।

চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার পাশাপাশি তিন পার্বত্য জেলায় পাশের হার বেড়েছে। এবার চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাশের হার ৯১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ১৭।
JSC-result-01
চট্টগ্রাম জেলায় গত বার পাশের হার ৭৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ হলেও এবার তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশে। মহানগর সহ চট্টগ্রাম জেলার পাশের হার ৮৬ দশমিক ২৬। গত বার এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

কক্সবাজার জেলায় এবার পাশের হার ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৮০ দশমিক ৮০।

গ্রামাঞ্চলে পাশের হার বাড়ায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলেও সমান গুরুত্ব দেয়ায় সেখানেও পাশের হার বেড়েছে। যাতে সবাই শহর কেন্দ্রীক হয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ফলে এখন গ্রামের একজন শিক্ষার্থী সেখানেই পড়তে পারছে। সেখানেও শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।

তিনি বলেন,‘গ্রামাঞ্চলে ফলাফলের উন্নতি হলেই বুঝবো শিক্ষার উন্নয়ন হয়েছে। ‘

এগিয়েছে তিন পার্বত্য জেলা:
এবার পাশের হার বেড়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে পিছিয়ে থাকা জনপদ তিন পার্বত্য জেলায়। ফলে এ বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফল বেড়েছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

রাঙ্গামাটি জেলায় এবার পাশের হার ৮৪ দশমিক ১ গতবার এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাগড়াছড়িতে এবার পাশের হার ৮৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বান্দরবানে ৮১ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ দুই জেলায় গতবার পাশের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩৫ ও ৭১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

তিন পার্বত্য জেলায় পাশের হার বাড়ায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড.পিযূষ দত্ত বলেন, অন্যান্যবার চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় পাশের হার বেশি থাকলেও তিন পার্বত্য জেলার কারণে সামগ্রিকভাবে পিছিয়ে থাকতাম আমরা। কিন্তু সেখানেও এখন পাশের হার বাড়ছে। যা এ বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলে ইতিবাচক দিক।

উল্লেখযোগ্য জিপিএ-৫
এবার জেএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। গত বছর তিন হাজার ৫৩১ জন জিপিএ-৫ পেলেও এবার পেয়েছে ১৪ হাজার ১০৫ জন শিক্ষার্থী। ২০১১ সালে ২ হাজার ১৯১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এবার জেএসসি পরীক্ষায় ঐচ্ছিক বিষয়ের নাম্বার যুক্ত হওয়ার কারণেই জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে।  

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক জানান, অন্যান্য বার ঐচ্ছিক বিষয়ের কোন মার্ক শিক্ষার্থীদের মোট নাম্বারের সঙ্গে যুক্ত হতো না। কিন্তু এবার পাঁচ নম্বরের মধ্যে যারা ২ নম্বরের অতিরিক্ত পেয়েছে তাদের ওই নাম্বার মোট ফলাফলে যুক্ত হয়েছে। ফলে বেড়েছে জিপিএর সংখ্যা।

এছাড়া জেএসসির সিলেবাসে এবার দুটি নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে বলেও জানান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক।

আরো ভালো হতে পারতো:
জেএসসিতে সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার বাড়লেও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হরতাল অবরোধ না থাকলে এ ফল আরো ভালো হতে পারতো বলে মনে করছেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা।
JSC-result-02
তারা বলছেন, ১১ দিনের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হলেও উত্তর পত্র সংগ্রহ ও বিতরণে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। শিক্ষক ও বোর্ডের কর্মকর্তাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, আমাদের ফলাফল ভালো হয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে আরো ভালো হতে পারতো।

তিনি বলেন, হরতালের কারণে পরীক্ষার মধ্যে যে বিরতি ছিল তা শিক্ষার্থীরা পায়নি। বরং লাগাতার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ফলে প্রস্তুতির সময় পায়নি।

‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেই  পরীক্ষা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। না হলে হয়তো ফলাফল আরো ভালো হতো। ‘

শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের জেএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ১৯৪টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে ১ লাখ ৪০ হাজার ৫৭৯ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা ৬২ হাজার ৬৪৮। ছাত্রীর সংখ্যা ৭৭ হাজার ৯৩১ জন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।