ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ মে ২০২৪, ০১ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিএনপির আইনজীবীদের বাধায় এজলাস ছাড়লেন ১৭ বিচারক

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
বিএনপির আইনজীবীদের বাধায় এজলাস ছাড়লেন ১৭ বিচারক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: আদালতের কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মিছিল ও বাধার মুখে এজলাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য হয়েছেন চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো.মশিউর রহমান চৌধুরী। এরপর কমপক্ষে আরও ১৬টি আদালতের বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান।



মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনার পর কার্যত বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের আন্দোলনের মুখে অচল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম আদালতের কার্যক্রম।

এদিকে বিচারককে এজলাস ছাড়তে বাধ্য করার ঘটনায় চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় আওয়ামীপন্থী এবং বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
দুু’পক্ষের আইনজীবীরা পাল্টাপাল্টি মিছিল-সমাবেশ করেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মুহাম্মদ রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে বলেন, সিএমএম মহোদয় এজলাস থেকে নেমে যাবার ঘটনার পর আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আরও এক প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য বিরোধীদলের গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচী চলাকালে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবীদের উপর হামলার ঘটনায় মঙ্গলবার বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সারাদেশে আদালত বর্জন কর্মসূচী পালন করছে।

চট্টগ্রাম আদালতের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে এজলাসে উঠেন সিএমএম। এসময় সিএমএমসহ মহানগর ও জেলা আদালতের প্রায় ১৭ জন বিচারকও এজলাসে ছিলেন।

১১টা ২৬ মিনিটের দিকে আদালত ভবনের দোতলায় মিছিল নিয়ে যান বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। তারা এজলাসে সিএমএমকে দেখতে পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্লোগান দিতে দিতে কক্ষের ভেতরে ঢুকে যান। আইনজীবীরা উচ্চস্বরে সিএমএমকে এজলাস থেকে নেমে যাবার কথা বলেন। এসময় এজলাস ছেড়ে সিএমএম খাস কামরায় চলে যান।

সোয়া ১১টার দিকে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতের বিচারক মশিউর রহমান চৌধুরীর আদালতে বিচারিক কার্যক্রম চলছিল। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে গিয়ে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ করে বিচারককে নেমে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে বিচারক এজলাস কক্ষ ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিএমএম এজলাস থেকে নেমে গেছেন-এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সিএমএম’র অধীন ৭টি এবং চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অধীন ৯টিসহ মোট ১৬ আদালতের বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান। তবে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, বেশ কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আগে থেকে এজলাসে ছিলেন না।

ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বাইরে দু’টি ট্রাইব্যুনাল থাকলেও সেখানে বিচারকরা এজলাসে ছিলেন না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এছাড়া অন্যান্য আদালতগুলোতে শীতকালীন অবকাশ চলছে।

এদিকে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা সিএমএম এজলাস থেকে নেমে যাবার পরও তার কক্ষের সামনে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরাও মিছিল নিয়ে সিএমএম আদালতের সামনে যান।

এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ গিয়ে দু’পক্ষকেই দোতলায় সিএমএম আদালতের সামনে থেকে নিচে নামিয়ে দেন।

নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) এস এম নূরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, দু’পক্ষের আইনজীবীরা মুখোমুখি হওয়ার পর একটু উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে আমরা গিয়ে দু’পক্ষকে দু’দিকে পাঠিয়ে দিয়েছি।

এরপর বিএনপি-জামায়াতপন্থী অর্ধশতাধিক আইনজীবী চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন এবং সেখানে শ্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের সামনে অবস্থান নিয়ে মিছিল-সমাবেশ করেন।

বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার বাংলানিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্টে একজন নারী আইনজীবীকে লাঞ্চিত করার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এবং আদালত বর্জন কর্মসূচীর সমর্থনে আমরা মিছিল করছিলাম। আমরা সিএমএম সাহেবকে এজলাস থেকে নেমে যেতে বলিনি। মিছিলের শব্দ শুনে তিনি নিজেই নেমে যান।

অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল বাংলানিউজকে বলেন, আদালত অঙ্গনে কিছু আইনজীবী বন্ধু যে ঘটনা ঘটিয়েছেন তা ন্যাক্কারজনক। আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ড ভবিষ্যতে বরদাশত করবনা।

বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক পিপি আব্দুস সাত্তার, এস ইউ নূরুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম সাজ্জাদ মিছিলে নেতৃত্ব দেন।

আর আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, মহানগর পিপি কামালউদ্দিন আহমেদ, জেলা পিপি আবুল হাশেম, অ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।