ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও শিক্ষায় এগিয়েছে দেশ

মাহবুব আলম; স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও শিক্ষায় এগিয়েছে দেশ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/(ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: ২০১৩ সাল জুড়ে সহিংসতা আর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও শিক্ষায় এগিয়েছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপানী অথবা ইবতেদায়ী থেকে শুরু করে মাধ্যমিকেও পিছিয়ে নেই তারা।



২০১৩ সালের বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসব পরীক্ষায় পাশের হার বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহও বেড়েছে। একই সঙ্গে ঝরে পড়াদের সংখ্যা যেমন কমছে তেমনি বেড়েছে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও।


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছর জুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীরা যে সাফল্য দেখিয়েছে তা সত্যিই প্রসংশনীয়। যা শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আগ্রহ ও মনোযোগী করে তুলছে।

তবে এ ক্ষেত্রে ফলের পাশাপাশি শিক্ষার মানোন্নয়নের বিষয়টির দিকেও জোর দিয়েছেন তারা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,‘পুরো বছরই সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে পার করতে হয়েছে। একারণে পরীক্ষা যেমন স্থগিত করতে হয়েছে তেমনি ক্লাসও অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। এরপরও  শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্থাৎ শিক্ষার প্রতি অভিভাবক শিক্ষার্থীদের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যা খুবই ইতিবাচক। ’

প্রাথমিকে কমেছে ঝরে পড়ার হার:
শিক্ষা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে প্রণীত নতুন শিক্ষানীতি ও পাঠ্যক্রম অনুসারে গত বছর থেকে প্রাথমিকে প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে দুটি নতুন পাবলিক পরীক্ষা।

এরমধ্যে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিএসসি) পরীক্ষায় এবছর চট্টগ্রাম জেলায় ৯৮ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাশ করেছে। অন্যদিকে ইবতেদায়ীতেও এবার পাশের হার ৯৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

২০১০ সালে প্রাথমিক সমাপনীতে ৯২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, ২০১১ সালে ৯২ দশমিক ৩১ শতাংশ, ২০১২ সালে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে।

আর অন্যদিকে এ জেলায় ২০১০ সালে ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২০১১ সালে ৭৫ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং ২০১২ সালে ৮৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ইবতেদায়ীতে পাস করে।

ফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে প্রাথমিকে জেলায় পাশের হার কমলেও এর পরের বছর থেকে ধারাবাহিকভাবে পাসের হার বেড়েছে যথাক্রমে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২ দশমিক ২৬ শতাংশে।

আর ২০১০ সালে শুরু হওয়া ইবতেদায়ীতে যথাক্রমে শূন্য দশমিক ০৬ শতাংশ, ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়েছে।

ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার শতভাগের নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। যা সহস্রাব্ধ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে। ’

এগিয়েছে জেএসসিতেও:
জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেটতেও (জেএসসি) চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে গত তিন বছরের তুলনায় সামগ্রিকভাবে পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। এবার পাশের হার ৮৬ দশমিক ১৩ শতাংশ।

গতবার এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ হিসেবে পাশের হার ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া শতভাগ পাশ করেছে ১০৫ বিদ্যালয়। যা গত বছর ছিল ৫৮।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. পিযূষ দত্ত বলেন,‘বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষায় ক্রমান্বয়ে পাশের হার বাড়ছে। জেএসসি পরীক্ষা শুরুর পর থেকে চট্টগ্রাম বোর্ডে সর্বোচ্চ ফলাফল এবার সর্বোচ্চ। ফলাফলের এ ধারাবাহিক উন্নতিতে মনে হচ্ছে, শিক্ষার্থীরা শিক্ষামুখী হচ্ছে। ’

এগিয়েছে মফস্বলের শিক্ষার্থীরা:
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও জেএসসি-এসএসসিতেও নগরী থেকে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভাল ফল করেছে।

ফলাফলে দেখা যায়, পিএসসিতে চট্টগ্রাম জেলায় নগরী থেকে গ্রামের বিদ্যালয়গুলো ভাল করেছে। এবার ৯৯ দশমিক ৯৮ পেয়ে প্রথম হয়েছে চন্দনাইশ এবং ৯৯ দশমিক ৯০ শতাংশ পয়েন্ট অর্জন করে দ্বিতীয় হয়েছে রাঙ্গুনিয়া।  

অন্যদিকে জেএসসিতে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলো বেশ ভাল করেছে। পাশের হার বেড়েছে পার্বত্য জেলাগুলোতেও।

রাঙ্গামাটি জেলায় এবার পাশের হার ৮৪ দশমিক ১ গতবার এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাগড়াছড়িতে এবার পাশের হার ৮৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ, বান্দরবানে ৮১ দশমিক ০৫ শতাংশ। এ দুই জেলায় গতবার পাশের হার ছিল ৭০ দশমিক ৩৫ ও ৭১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. পিযূষ দত্ত বাংলানিউজকে বলেন,‘শিক্ষার ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলেও সমান গুরুত্ব দেয়ায় সেখানে পাশের হার বেড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও শিক্ষায় মনোযোগী হচ্ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। ’

তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) চট্টগ্রাম বোর্ডে ফলাফল বিপর্যয় ঘটেছে।  

ভালো’র পথে প্রতিবন্ধকতা সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি :
পিএসসি থেকে শুরু করে সব পাবলিক পরীক্ষায়ই হরতাল-অবরোধের কারণে স্থগিত করতে হয়েছে। এমনকি নিয়মিত ক্লাসও অনুষ্ঠিত হতে পারেনি কোন প্রতিষ্ঠানে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. পিযূষ দত্ত বলেন,‘রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে বোর্ডে এসব পরীক্ষার ফল আরও ভালো হতে পারতো। ’

তিনি বলেন,‘হরতালের কারণে পরীক্ষার মধ্যে যে বিরতি ছিল তা শিক্ষার্থীরা পায়নি। বরং লাগাতার পরীক্ষা দিতে হয়েছে। ফলে প্রস্তুতির সময় পায়নি। এছাড়া নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই  তারা পরীক্ষা দিয়েছে। না হলে হয়তো ফলাফল আরো ভালো হতো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।