ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিএনপি-জামায়াতের কৌশলে চাপের মুখে নদভি-মোস্তাফিজ

রমেন দাশগুপ্ত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
বিএনপি-জামায়াতের কৌশলে চাপের মুখে নদভি-মোস্তাফিজ

চট্টগ্রাম: ভোটের মাঠে প্রকাশ্যে না থাকলেও চট্টগ্রামের দু’টি আসনে আধিপত্য ধরে রাখতে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা প্রকাশ্যে না থাকলেও কর্মীরা নেতাদের নির্দেশে আওয়ামী লীগবিরোধী প্রার্থীদের পোস্টার লাগানো, মাইকিং থেকে শুরু করে জোরদার প্রচারণা চালাচ্ছে।



আসন দু’টি হচ্ছে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী)। বিএনপি-জামায়াতের কৌশলী ভূমিকার কারণে প্রায় খালি মাঠেও শেষ মুহুর্তে এসে চাপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের দু’প্রার্থী ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি এবং মোস্তাফিজুর রহমান।


সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে গত ‍নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জামায়াতের আ ন ম শামসুল ইসলাম। ১৯৯১ সালের পর থেকে এ আসন জামায়াতের দখলে আছে।

এবার এ আসনে জামায়াতের ‘কাছের লোক’ হিসেবে পরিচিত ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভিকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আছেন নবগঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রণ্টের (বিএনএফ) জয়নাল আবেদিন কাদেরি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর প্রায় এক সপ্তাহ পর জয়নাল আবেদিন কাদেরি সাতকানিয়া-লোাহাগাড়ায় যান। শুরুর দিকে কাদেরির জন্য পোস্টার লাগানোর মতও কেউ ছিল না। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে কাদেরির পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে যাচ্ছে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকা।

অন্যদিকে নদভির লাগানো পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। গত ২৬ ডিসেম্বর মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন মির্জারখিল প্রচারণায় যাওয়ার সময় গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নদভির সমর্থকদের বিভিন্ন স্থানে হুমকিধমকি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি স্বীকার করে ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন বলেন, ‘সাতকানিয়া-লোাহাগাড়ায় যারা আওয়ামী লীগের বিরোধী তারা সরাসরি বিএনএফ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। বিভিন্নস্থানে আমাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে তারা। অন্যদিকে বিএনএফ প্রার্থীর পোস্টার লাগাতে সহযোগিতা করছে। ’

নদভি প্রচার-প্রচারণায় বাধা পেলেও নির্বিঘ্নে এবং খোশমেজাজেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন জয়নাল আবেদিন কাদেরি। তিনি প্রতিদিন নির্বিঘ্নে সাতকানিয়া-লোাহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গণসংযোগ করছেন।

মঙ্গলবার তাকে  চরতী, কাঞ্চনা, আমিলাইষসহ বিভিন্নস্থানে গণসংযোগ করতে দেখা গেছে। এসময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্থানীয় লোকজন কাদেরির সঙ্গে ছিলেন। অন্যদিকে নদভি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে মঙ্গলবার লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।

জয়নাল আবেদিন কাদেরি বাংলানিউজকে বলেন, শুধু জামায়াত-শিবির নয়, সাতকানিয়া-লোাহাগাড়ার সবাই আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। যেখানেই গণসংযোগে যাচ্ছি মানুষ আমাকে স্বত:স্ফূর্তভাবে সমর্থন দিচ্ছে। আমি লোকজনের খুব সাপোর্ট পাচ্ছি তো, তাই নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।

অথচ মাত্র দু’দিন আগে জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে এক সমন্বয় সভায় জয়নাল আবেদিন কাদেরি নিজের এবং তার বাড়িঘরের নিরাপত্তা নিয়ে শংকা প্রকাশ করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আর্ন্তজাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নদভির ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে সাতকানিয়া-লোাহাগাড়ার ধর্মভীরু মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউণ্ডেশন থেকে বিপুল সংখ্যক মসজিদ নির্মাণ, দান-খয়রাতসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কারণে মানুষের সহানুভূতিও আছে নদভির প্রতি।

তার শ্বশুড় মমিনুল হক চৌধুরী জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য হওয়ায় দলটির স্থানীয় উদারপন্থী একটি অংশেরও তার প্রতি পরোক্ষ সমর্থন আছে। এসব বিষয়কে নিজেদের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন জামায়াতের মূল অংশ এবং শিবির। তাই যে কোন মূল্যে নদভিকে ঠেকিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে বিদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছে দলটি।

তবে বিষয়টি অস্বীকার করে দক্ষিণ জেলা ছাত্রশিবিরের প্রচার সম্পাদক আজাদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমরা একদলীয় নির্বাচনের বিরোধী। আমরা কাউকে সমর্থন দিইনি কিংবা কারও সঙ্গে প্রচার-প্রচারণায়ও অংশ নিচ্ছিনা। যেহেতু জামায়াত-শিবিরের গণভিত্তি আছে, অনেক সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে মিছিল-সমাবেশ করেন। তারাই হয়ত টাকাপয়সা নিয়ে কোন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন। এতে মানুষ কিছুটা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে গত নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। ১৯৯১ সালে সুলতানুল কবির চৌধুরী সর্বশেষ এ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন। এরপর থেকে আসনটি বিএনপির দখলে আছে।

বাঁশখালীতে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে আছেন সাইকেল মার্কায় জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু) দলের প্রার্থী অ আ ম হায়দার আলী চৌধুরী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঁশখালীর বর্তমান সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী’র বড় ভাই হায়দার আলী। আত্মীয়তার সুবাদে বিএনপির নেতাদের পরোক্ষ এবং কর্মীদের প্রকাশ্য সমর্থন আছে হায়দার আলীর প্রতি। বাঁশখালীতে অনেকটা আগন্তুক হায়দার আলীর গণসংযোগ, পোস্টার লাগানো, মাইকিং থেকে শুরু করে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সব কাজই করছেন বিএনপি।

এছাড়া বাঁশখালীতে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিতি চাম্বল, শেখেরখীল ও পুঁইছড়ি ইউনিয়নেও নির্বিঘ্নে গণসংযোগ করছেন হায়দার আলী। সেখানে তার সঙ্গী হচ্ছেন বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরাই।

হায়দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাঁশখালীতে নৌকার বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের ভোট বেশি। বাঁশখালীর মানুষ রগচটা, অবুঝ, অশিক্ষিত। তাদের মাথায় রাগ উঠে গেছে। নির্বাচনের দিন তারা দলে দলে ভোটকেন্দ্রে এসে দলে দলে নৌকার বিরুদ্ধে আমাকে ভোট দেবেন।

বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের নিয়ে প্রচারণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বললাম তো, এখানে আওয়ামী লীগবিরোধী মানুষ বেশি। তারা আমার সঙ্গে আসছেন। আমাকে সমর্থন দিচ্ছেন। ’

আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, হায়দার আলী সাহেবকে এলাকায় কেউ চেনেন না। তার বোনের জামাই জাফরুল ইসলাম চৌধুরী তাকে সমর্থন দিয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত মুখে বলছেন, নির্বাচন করছেন না। কিন্তু মাঠে কর্মীদের নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নামিয়ে দিয়েছে। হায়দার আলীকেও আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন জাফরুল ইসলাম সাহেব।

হায়দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী আমার বোনের স্বামী একথা সত্য। কিন্তু তিনি যেহেতু একটি দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আছেন, তার পক্ষে তো আমাকে সমর্থন দেয়া সম্ভব না। আমার নির্বাচনে তার কোন ভূমিকা নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাঁশখালীতে বিএনপি-জামায়াতের কৌশল হচ্ছে, ভোট ঠেকানোর চেয়েও নৌকার বিরোধী প্রার্থীকে জিতিয়ে আনা। আর আওয়ামী লীগের বিবদমান দু’গ্রুপের মধ্যে একাংশ মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে মাঠে নামেনি। এসব সুবিধা নিয়ে হায়দার আলী এখন জয়ের স্বপ্ন দেখছেন।

হায়দার আলী বাঁশখালীর পাশাপাশি চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসন থেকেও প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু তিনি একদিনের জন্যও সেখানে প্রচারণা চালাতে যাননি।

হায়দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাঁশখালীতে আমার জেতার সম্ভাবনা শতভাগ। সেজন্য আর সীতাকুণ্ডে যাচ্ছিনা। আর সীতাকুণ্ডে আওয়ামী লীগের যে প্রার্থী আছেন তার টাকাপয়সা বেশি। তার সঙ্গে পারব বলে মনে হচ্ছেনা। তাই বাঁশখালী নিয়েই আছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৩
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।