ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গোপনে সিডিএ’র প্লট পেলেন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীরা

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৪
গোপনে সিডিএ’র প্লট পেলেন মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালীরা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নিয়ম না মেনে কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী’র উপদেষ্টা, মন্ত্রী ও এমপিসহ প্রভাবশালীদের প্লট বরাদ্দ দিয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। নজিরবিহীন অনিয়মের মাধ্যমে সিডিএ’র ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো কোন ধরনের বিজ্ঞপ্তি এবং লটারি ছাড়াই দেওয়া হয়েছে এ সব প্লটের বরাদ্দ।

প্লটের মূল্যও নির্ধারণ করা হয়েছে কম।

তবে সিডিএ কর্তৃপক্ষের দাবি, শতভাগ নীতিমালা মেনে ও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষেই এসব প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নীতিমালায় এভাবে প্লট বরাদ্দের কোনো নিয়মই নেই।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আইন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সালেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন,‘কোন আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দিতে হলে আবেদন আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছাড়া কাউকে প্লট বরাদ্দের সুযোগ নেই। পত্রিকায় আবেদন আহ্বানের পর সংরক্ষিত কোটায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে প্লট বরাদ্দ দেও‍য়া যেতে পারে। ’  

বরাদ্দপত্র পাওয়া মন্ত্রীরা হলেন- জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও নির্বাচনকালীন সরকারের পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদার।

প্লট পাওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই মহাজোটের সংসদ সদস্যরাও। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদল, এবিএম আবুল কাশেম মাস্টার, নুরুল ইসলাম বিএসসি, সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, আবদুল লতিফ, শামসুল হক, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চেমন আরা তৈয়ব।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর সিডিএ’র ৪০৫তম বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনন্যা আবাসিক এলাকায় ৬০ জনকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২১ নভেম্বর সিডিএ থেকে বরাদ্দপত্র পাঠানো হয়। ২৬ ডিসেম্বর বোর্ড সভায় আবাসিক এলাকার সংশোধিত লে আউট অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি কাঠায় দাম রাখা হয় ৬ লাখ টাকা।

অথচ এর আগে নগরী থেকে দূরে সিলিমপুর আবাসিক প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে কাঠা প্রতি ১০ লাখ টাকায়। লে আউট অনুমোদনের আগে প্লট বরাদ্দও নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছেন সিডিএ কর্মকর্তারা। এছাড়া বরাদ্দ প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশেরই সিটি করপোরেশন এলাকায় একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট রয়েছে। অনেকে বেনামেও প্লট ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) আবাসিক প্লট বরাদ্দ প্রবিধানমালা, ১৯৯৮ এর ৫ ধারা অনুযায়ী, ‘প্লট বরাদ্দ করার উদ্দেশ্যে আবেদনপত্র আহ্বান করিয়া সিডিএ চারটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করিবে।

এছাড়া সিডিএ’র বরাদ্দপত্রের ৯ নং শর্তাবলী অনুযায়ী, ‘বরাদ্দ গ্রহীতার প্রদত্ত হলফনামায় পেশকৃত তথ্য ভুল বা অসত্য হইলে বা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় বা সিডিএ’র কোন আবাসিক প্রকল্পে তাহার স্বনামে বেনামে কোন আবাসিক প্লট বরাদ্দ থাকার বা অতীতেও সিডিএ হইতে উক্তরূপে প্লটের ইজারা তাহার বা তাহার পরিবারের কোন সদস্যের স্বনামে বা বেনামে আছে বা ছিল প্রমাণিত হইলে তাহার বরাদ্দ বা ইজারা বাতিল ও জামানতের টাকা বাজেয়াপ্তসহ সিডিএ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। ’

তবে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, ‘শতভাগ নিয়ম মেনেই অনন্যা আবাসিকের প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ’

সিডিএ’র প্লট বরাদ্দ কমিটি’র আহবায়ক ইউনুছ গণি চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন,‘বোর্ডের ক্ষমতাবলে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে সিডিএ’র। এক্ষেত্রেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোন ধরনের লুকোচুরির আশ্রয় নেওয়া হয়নি। ’ তবে অধিকাংশ প্লটই মন্ত্রী এমপি’রাই বরাদ্দ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন তিনি।     

আরো যারা বরাদ্দ পত্র পেয়েছেন- একেএম আজাদ চৌধুরী, মিসেস সালমা আকতার, তাজুল ইসলাম, সিদ্দিক নাজমুল আলম, আশিকুল ইসলাম, খোন্দকার আশরাফ হোসেন, সন্তোষ শর্মা, অঞ্জন রায়, নাছির উদ্দিন মাহমুদ, মো. ইসমাইল, আবু সুফিয়ান, আবদুল্লা আল আমিন, আমিন আহম্মদ, কামরুন নাহার, মাহমুদ সালাউদ্দিন, মামুনুল ইসলাম, ইসতিয়াক আহমদ চৌধুরী, একেএম মাহবুবুল আলম, হারুনুর রশিদ, দুলাল চৌধুরী, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মৃণাল মাহবুব, সোমেন ঘোষ, মোসলেম উদ্দিন, ইফতেখার উদ্দিন আশিক, অধ্যক্ষ মো. এসকান্দার ও মো. আলী।

সিডিএ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে নগরীর কুয়াইশ ও চান্দগাঁও মৌজায় একটি আবাসিক এলাকা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের জন্য চান্দগাঁও এলাকায় ১১৭ দশমিক ৭৩৫ একর এবং কুয়াইশ এলাকার ৫২ দশমিক ২২ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। তখন ভূমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৮৪ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয় ২০০৫ সালের জুলাই থেকে ২০১০ সালের জুন পর্যন্ত।

কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। তাই ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) সংশোধন করা হয়। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্পের ব্যয় নির্ধারিত হয় ৩৭৬ কোটি দুই লাখ তিন হাজার টাকা। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নে সিডিএর খরচ বেড়েছে ৯১ কোটি ৪০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। সংশোধিত ডিপিপিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় তিন বছর বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত।

অনন্যা আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন আকারের প্লট রয়েছে এক হাজার ৭৩৩টি। এসব প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। তিন, চার ও পাঁচ কাঠার এসব প্লটের দাম নির্ধারণ করা হয় যথাক্রমে সাড়ে চার লাখ, পাঁচ লাখ এবং ছয় লাখ টাকা। এ ছাড়া কর্নার প্লটের জন্য বাড়তি ২৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়। একক ও যৌথ নামে প্লটের গ্রাহকসংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর ও রাইসুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর (অ্যাক্ট.)

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।