ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা পার তবুও সরে না আবর্জনার স্তুপ

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৪
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা পার তবুও সরে না আবর্জনার স্তুপ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ফুটপাত ছাড়িয়ে আবর্জনা এসে পড়েছে সড়কে। কাক-কুকুর ও টোকাইদের টানাটানিতে সেই আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে।

দুর্গন্ধে টেকা দায়। পথচারীরা নাকে রুমাল চাপা দিয়ে সড়কের মাঝখানে হাটছে।
যেকোনো সময় দূর্ঘটনার শিকার হতে পারেন তারা।

নগর ভবনের অদূরে জেনারেল হাসপাতালের সামনের দৃশ্য এটি। হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনরাও এসব আবর্জনা মাড়িয়ে ঢুকছে হাসপাতালে।
 
একই দৃশ্য জামালখান ও আসকারদিঘী পাড় এলাকায়ও। আসকার দিঘীর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে দুটি ডাস্টবিন। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটায়ও এসব ডাস্টবিনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ময়লা। নাকে রুমাল চেপে পথ চলছে মানুষ। জামালখান মোড়ের ডাস্টবিনটির ময়লা ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কে এসে পড়েছে।

আসকার দিঘীর পাড় এলাকার গৃহিনী পর্বা দাশগুপ্তা বাংলানিউজকে বলেন, ‘যখনই বাসা থেকে বের হয় তখনই ডাস্টবিন ছাড়িয়ে ময়লা-আবর্জনা সড়কের অর্ধেক জুড়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়। দুর্গন্ধে পথচলা দায় হয়ে পড়ে। আবর্জনা পরিস্কার করলেও ভালো করে করা হয় না। ডাস্টবিনে আবর্জনা পড়ে থাকে। এসব আবর্জনা পচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। ’

সারাদেশে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের খ্যাতি থাকলেও বর্তমানে সে অবস্থা আর নেই। নগরের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ দেখা যায়। ডাস্টবিনগুলো থেকে সময়মতো ময়লা পরিষ্কার করা হয় না বলে অভিযোগ নগরবাসীর।
 
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘জেনারেল হাসপাতালের সামনে থেকে ডাস্টবিন সরিয়ে নিতে সিটি করপোরশনকে বারবার অনুরোধ করার পরও সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। ’

চিকিৎসকদের বক্তব্য, এ ধরনের আবর্জনা থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিভিন্ন রোগ। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক অনিরুদ্ধ ঘোষ জয় বলেন,‘এ ধরনের আবর্জনা থেকে আন্ত্রিক-সহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। ’

সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল ‍মান্নান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, ‘নগরীতে দু’শিফটে আবর্জনা পরিস্কার করা হচ্ছে। প্রথম দফা দুপুর দু’টা থেকে, দ্বিতীয় দফা রাত বারটা থেকে। প্রতিটি ডাস্টবিন পরিষ্কার রয়েছে কি না, তা দেখার জন্য ২ জন কনজারভেটর, ১৮ জন পরিদর্শক, ৭০ জন সুপারভাইজার নিযুক্ত রয়েছেন। ’

তিনি বলেন, ‘নগরবাসি সচেতন হলে আমাদের ডাস্টবিন পরিচ্ছন্ন রাখতে সুবিধা হয়। বার বার বিকেল পাঁচটা থেকে ১০টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলার জন্য প্রচার করা হলেও তা মানছে না কেউ। লোকজন যখন তখন যত্রতত্র আবর্জনা ফেলে নোংরা করে ফেলে। ফলে সবসময় ডাস্টবিনে আবর্জনা পড়ে থাকতে দেখা যায়। ’  

নগরবাসির দাবি, ডাস্টবিন পরিস্কারের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের উপরেই নজরদারি চালানো হোক। তারা ঠিক সময়ে আবর্জনা পরিস্কার করতে আসেন কি না তা খতিয়ে দেখা হোক।

করপোরেশন সুত্র জানায়, নগরীতে এক হাজার ৩৫০টি ডাস্টবিন রয়েছে। এসব ডাস্টবিন পরিচ্ছন্ন রাখতে এক হাজার ৯‘শ ৪৭ জন কর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। আবর্জনা সরাতে প্রায় শতাধিক ডাম্প ট্রাকসহ বিভিন্ন গাড়ি রয়েছে।

প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তার দাবি, দু’হাজার জন বাসিন্দার বিপরীতে একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী প্রয়োজন। বর্তমানে যে লোকবল রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। এছাড়া আবর্জনা সরানোর গাড়ির সংখ্যাও অপ্রতুল বলে দাবি করেছেন তিনি।

করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আবর্জনা সরানোর জন্য পর্যাপ্ত গাড়ি রয়েছে। নতুন করে আরো ১৯টি ডাম্প ট্রাক যুক্ত হবে। তবে সমন্বয় ও তদারকির অভাবে ঠিক সময়ে আবর্জনা পরিস্কার করা যাচ্ছে না।

দুর্গন্ধ ছড়ানো বন্ধ করতে এসব ডাস্টবিনে মাসে আড়াই টন ব্লিচিং পাওডার ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করছেন প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান। যদিও নগরবাসির অভিযোগ, ব্লিচিং ছড়ানোর নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ফলে দুর্গন্ধ থেকেই যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ঘণ্টা, জানুয়ারী ০৭, ২০১৪
সম্পাদনা: তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।