ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘থানায় বসে খারাপ আচরণকারীদের শক্ত হাতে দমন করুন’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৪
‘থানায় বসে খারাপ আচরণকারীদের শক্ত হাতে দমন করুন’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: যেসব পুলিশ সদ্স্য থানায় বসে নারী সহকর্মী ও নারী ভিকটিমদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন তাদের শক্ত হাতে দমন করার জন্য উর্দ্ধতনদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (সিআইডি) মো.মোখলেসুর রহমান।

রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের প্রথম ভিকটিম সাপোর্ট সেণ্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ নির্দেশ দেন।



অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ‘অনেকে আছেন, থানায় বসে নারী ভিকটিমরা আসলে তাদের সঙ্গে অশ্রাব্য ভাষায় কথা বলেন। নারী সহকর্মীদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন।
তাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। ’

তিনি সিএমপি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘যারা এ ধরনের আচরণ করেন তাদের শক্ত হাতে দমন করুন। ’

পুলিশ সংস্কার কর্মসূচি ও ইউএনডিপি’র সহযোগিতায় নগরীর ডবলমুরিং মডেল থানার ভেতরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারটি নির্মিত হয়েছে।

মোখলেসুর রহমান বলেন, ভিকটিম সাপোর্ট সেণ্টার পুলিশের মাধ্যমে পরিচালিত পুলিশের নিজস্ব একটি সংস্থা। এটাকে কেউ বিদেশিদের চাপিয়ে দেয়া সংস্থা বলে মনে করলে সেই চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলতে হবে। সাপোর্ট সেণ্টারের কাজে কেউ গাফেলতি কিংবা অনীহা দেখালে, পুলিশের দায়িত্বে অবহেলার জন্য যে শাস্তি হয়, একই ধরনের শাস্তি ভোগ করতে হবে।

তিনি বলেন, পুলিশের বাইরে সমাজের মানুষেরও কিছু দায়িত্ব, কর্তব্য আছে। নারী নির্যাতন রোধে সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে মারামারি দেখি। কিন্তু নারী নির্যাতনের বেলায় সব ধর্মের লোকই সমান ওস্তাদ। কিন্তু ধর্ম কখনও নারীর উপর নির্যাতনকে সমর্থন করেনা।

তিনি বলেন, যত কাপড় দিয়ে চোখ, মুখ ঢেখে রাখবেন, ততই পেছনে যাবেন। ভূতের পা নাকি পেছনে থাকে। কাপড় দিয়ে চোখ, মুখ ঢেখে আগানো যাবেনা। যারা এগিয়ে গেছে তাদের থেকে শিক্ষা নিতে হবে।

নারী নির্যাতন রোধে আইনের প্রয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আইন যত শক্ত হবে, আইন যদি পিছে পিছে ঘুরে তাহলে নারীর উপর কোন পুরুষ হাত উঠানোর সাহস পাবেনা। তবে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশের মধ্যে কিছুটা সীমাবদ্ধতা এখনও রয়ে গেছে। এ সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে হবে।

সিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে কর্মশালায় আরও বক্তব্য রাখেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো.নওশের আলী, পুলিশ সংস্কার কর্মসূচীর আইসিটি বিশেষজ্ঞ মি.ভয়চেক কপ্রোভিচ, মহিলা পরিষদের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক সুগতা বড়ুয়া, ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক এবং ডবলমুরিং থানা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি মাহবুবুল হক মিয়া।

কর্মশালায় ভিকটিম সাপোর্ট সার্ভিসেস বিষয়ে সার্বিক কার্যক্রম তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন ইউএনডিপি’র কর্মকর্তা ফৌজিয়া খন্দকার ইভা। পরে তিনি আমন্ত্রিতদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও জবাব দেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নারী ও শিশু পাচার, এসিড নিক্ষেপ, যৌন হয়রানি কিংবা ধর্ষনের শিকার নারীদের এ সাপোর্ট সেন্টার থেকে সহযোগিতা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সময়মত সেবা প্রদানের পাশাপাশি অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর নির্দেশাবলী ও অপরাধ তথ্য সংরক্ষণ করার ক্ষেত্রেও কাজ করবে ‘ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার’।

ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে একজন সহকারী পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে কর্মরত থাকবে ২৪ জন প্রশিক্ষিত মহিলা পুলিশ কর্মকর্তা। এর বাইরে সংশ্লিষ্ট এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা ভুক্তভোগিদের তাৎক্ষনিক সহায়তা, স্বাস্থ্য সেবা, আইনি পরামর্শ, আইনি সহয়তা ও মানসিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।  

এনজিও সংস্থাগুলো হলো-আইন ও শালিস কেন্দ্র, অপরাজেয় বাংলাদেশ, কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, মেরী স্টপস, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও এসিড সার্ভাইভার ফাউন্ডেশন।

বাংলাদেশ পুলিশ নারী ও শিশুদের সমন্বিত সেবা নিশ্চিত করতে ১০টি এনজিও’র সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে ২০০৮ সালে। ২০০৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকার তেজগাঁও থানার প্রথম ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়। দ্বিতীয় সপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগরীর ডবলমুরিং মডেল থানায়।

পরবর্তীতে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে এ ধরনের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।