ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১১ হত্যা মামলা

বিচারকের সামনে পিপি-এপিপি’র বাকবিতণ্ডা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪
বিচারকের সামনে পিপি-এপিপি’র বাকবিতণ্ডা

চট্টগ্রাম: চাঞ্চল্যকর বাঁশখালীর ১১ হত্যা মামলার বিচার চলাকালে সোমবার  প্রকাশ্য আদালতে বিচারকের সামনে রাষ্ট্রপক্ষের দু’কৌসুলীর মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। এরা হলেন, চট্টগ্রাম জেলা পিপি আবুল হাশেম ও অতিরিক্ত জেলা পিপি মো.নাছির উদ্দিন।



দু’কৌসুলীর মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পুনরায় সময় নির্ধারণ করতে বাধ্য হয়েছেন বিচারক। আর নির্ধারিত দিনে সাক্ষ্য নিতে না পারার জন্য পিপি আবুল হাশেমকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে আইন মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন নাছির উদ্দিন।


সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লা মংয়ের আদালতে এ ঘটনা ঘটেছে। সোমবার এ মামলায় ১১ হত্যা মামলার বাদি বিমল শীলের ছোট ভাই নির্মল শীলের সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল।

জেলা পিপি আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, বাঁশখালীর ১১ হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ছিল। নির্ধারিত সময়ে মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ায় কয়েক মাস আগে সেটি তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী জেলা আদালতে মামলাটি স্থানান্তরের বিষয়টি পিপি হিসেবে আমাকে অবগত করা প্রয়োজন ছিল।

‘কিন্তু অতিরিক্ত পিপি নাছির উদ্দিন আমার অজ্ঞাতসারে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করে দেন। এজন্য আমি প্রতিবাদ করেছি। ’

অতিরিক্ত পিপি নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি সাক্ষীর হাজিরা দাখিল করে তাকে কাঠগড়ায় তুলেছি। তিনি সাক্ষ্য দেবেন, এসময় পিপি সাহেব ছুটে এসে আমাকে, বাদিকে, সাক্ষীকে গালিগালাজ শুরু করেন। এসময় আমি তাকে বারবার আদালতের ভাষায় কথা বলার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তিনি বিষয়টি আমলে না নিয়ে বিচারককে সাক্ষ্যগ্রহণ বন্ধ রাখার অনুরোধ জানান। এতে বিচারক বিব্রতবোধ করে সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে পিপি আবুল হাশেম বলেন, আমার সঙ্গে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমি শুধু আমাকে না জানিয়ে সাক্ষ্য শুরুর বিষয়ে জানতে চেয়েছি। এতে নাছির আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। সে খুব উত্তেজিত ছিল।

আবুল হাশেম জানান, অতিরিক্ত পিপি নাছির উদ্দিনকে পিপি’র স্বীয় ক্ষমতাবলে তৃতীয় অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতসহ সকল জেলা আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে সকল ধরনের মামলা পরিচালনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর সোমবার বিকেলে অতিরিক্ত পিপি নাছির উদ্দিন আইনমন্ত্রী বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ ডাকযোগে পাঠান।

এতে বলা হয়, মামলাটি শুরু থেকেই তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন ছিল। বিচার চলাকালীন মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হওয়ায় মামলাটি আবারও পূর্বের বিচারিক আদালতে ফেরত পাঠানো হয়।

ট্রাইব্যুনালের পিপি’র কার্যালয় থেকে মামলার কেস ডায়েরি তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নাছির উদ্দিনের কাছে পাঠানো হয়। কেস ডায়েরি নিজের হেফাজতে নিয়ে মামলার তারিখে যথারীতি সাক্ষ্যগ্রহণের পদক্ষেপ নেন নাছির উদ্দিন।

নাছির উদ্দিন অভিযোগ করেন, মামলার বাদিপক্ষ পূর্ব থেকেই পরিচিত থাকায় এবং যেহেতু মামলাটি খুবই স্পর্শকাতর, গুরুত্ব বিবেচনায় ধার্য তারিখে সোমবার ৪ জন সাক্ষীকে হাজির করা হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ করার মুহুর্তে পিপি আবুল হাশেম ওই আদালতে হাজির হয়ে তাকে, বাদি ভাই ও সাক্ষীদের অকথ্য ও অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ করেন নাছির উদ্দিন।

তিনি আইনমন্ত্রীর কাছে জেলা পিপি আবুল হাশেমের বাধার কারণে স্পর্শকাতর মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ করতে না পারা এবং অশালীন ও নন অফিসিয়াল গালিগালাজের বিচার দাবি করেন।

নাছির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে আমি সবসময় বাদির পক্ষে থাকি। বাদির মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে তাদের যাতে হয়রানি না হয় সেভাবে মামলা পরিচালনা করি। এজন্য যে কোন মামলার বাদিপক্ষ আমাকে খুবই ভালবাসে। এজন্য পিপি সাহেব সবসময় আমাকে খুবই ঈর্ষা করেন। ’

নাছির উদ্দিনের অভিযোগ নাকচ করে জেলা পিপি আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘নাছির আমার ছোট ভাইয়ের মত। সে কিছু ভুল করেছে। আমি বিষয়টি বড় ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখতে চাই। ’

২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুরের শীলপাড়ায় আগুনে পুড়িয়ে ১১ জনকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বিমল শীল বাদি হয়ে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।