সাতকানিয়া থেকে ফিরে: লংমার্চ করে জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সাতকানিয়ায় গিয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসীকে শান্তির বার্তা দিয়ে এসেছেন সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
সাতকানিয়ার কেরাণীহাটে আয়োজিত এক সমাবেশে মহিউদ্দিন সেখানকার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে বলেন, হিন্দুদের বাড়িঘরে আক্রমণ, মানুষ হত্যা, লুটপাট, নারী নির্যাতনের কারণে আপনাদের গায়ে কলংক লেগেছে।
তিনি বলেন, বাড়িঘরে আগুন দেয়া, নারী নির্যাতন, লুটপাট করা কোন মানুষের কাজ নয়। এগুলো পশুত্বের লক্ষণ, দানবীয় কাজ। চট্টগ্রামের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার মানুষের অন্যায়, জুলুম, নির্যাতনের কারণে চট্টগ্রামবাসীর মাথা হেঁট হয়ে গেছে। আমাদের লজ্জা লাগছে।
মহিউদ্দিন সাতকানিয়া-লোহাগাড়াবাসীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা বিদেশে থাকেন, ব্যবসা করেন, অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। কিন্তু হিন্দুদের উপর আক্রমণ করা, তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়া, নারী নির্যাতন করা মহাপাপ। অগ্নিসংযোগ, নারী নির্যাতন এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ। আপনারা পাপ করবেন না।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছি। ভ্রাতৃত্বের মনোভাব নিয়ে সবাই মিলেমিশে থাকবেন। কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করবেন না।
মহিউদ্দিন বলেন, মুষ্টিমেয় সন্ত্রাসী যারা জঘন্য অপরাধ করছে, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলে কোন আইনজীবী দয়া করে তাদের পক্ষে জামিনের জন্য দাঁড়াবেন না।
একই সমাবেশে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা শেষবারের মত বলতে এসেছি, আমরা সম্প্রীতি চাই। আর কোন হিন্দু বাড়িতে হামলা হলে সাতক্ষীরার মত সাতকানিয়ায়ও যৌথবাহিনীর অভিযান চলবে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সেই যুদ্ধে হিন্দু, মুসলিম সবাই ছিলেন।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী বলেন, সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা যা করছে তার জন্য বেগম খালেদা জিয়া দায়ী। বেগম জিয়া জামায়াতকে না ছাড়লে খালেদার সঙ্গে কোন সমঝোতা হবেনা।
চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাংসদ ড.আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি বলেন, গত ৩১ জানুয়ারি লোহাগাড়ার চুনতিতে আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। তারা মসজিদে হামলা করেছে, পাথর নিক্ষেপ করে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট করেছে।
নদভি বলেন, যারা পাথর ছুঁড়েছে তারা বেয়াদব, তারা আল্লাহ-রসূল মানেনা, ধর্ম মানেনা। তারা আল্লাহ-রসূলের সম্মান রাখতে পারেনি। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া পীর-আউলিয়ার জায়গা। কিন্তু তাদের সম্মান তারা রাখতে পারছেনা।
তবে সাংসদ নদভী বক্তব্যে জামায়াতকে ইঙ্গিত করলেও দলটির নাম উচ্চারণ করেননি।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনের সাংসদ নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা একাত্তরে যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, ট্রেনিং জমা দিইনি। আপনারা সন্ত্রাস করে সাতকানিয়া-লোহাগাড়াকে স্বাধীন করেছেন ভাবলে বোকার স্বর্গে আছেন। আওয়ামী লীগ গর্জে উঠলে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আপনাদের শান্তিতে থাকতে দেবনা।
সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাষ্টার আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদের আহ্বায়ক জহিরুল আলম দোভাষ প্রমুখ।
এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ ময়দান থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে শুরু হয় মহিউদ্দিনের লংমার্চ। এসময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ শান্তিকামী। সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় যা হচ্ছে তাতে আমাদের মাথা হেট হয়ে গেছে। আমি শান্তির বার্তা নিয়ে তাদের কাছে যাচ্ছি।
সকাল ১০টার দিকে নগরীর লালদিঘী ময়দানেও ব্যানার, ফেস্টুন, গাড়ি নিয়ে জড়ো হন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদের ব্যানারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সেখান থেকে নেতাকর্মীদের নিয়ে জমিয়াতুল ফালাহ ময়দানে আসেন।
জমিয়াতুল ফালাহ থেকে রওনা হয়ে সাতকানিয়া যাবার পথে পটিয়া উপজেলা সদর এবং চন্দনাইশের দোহাজারিতে পথসভায় বক্তব্য দেন মহিউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগ নেতারা।
দুপুর আড়াইটায় লংমার্চের বহর সাতকানিয়ার কেরাণীহাটে পৌঁছলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের স্বাগত জানান। এরপর প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সমাবেশ শেষে লংমার্চের বহর নগরীতে ফেরত আসে।
* সাতকানিয়া অভিমুখে লংমার্চ শুরু
* সাতকানিয়া পৌঁছেছে লংমার্চ
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৮,২০১৪