চট্টগ্রাম: প্রতিবাদ-বিরোধিতার মুখেই সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের(আইসিসি) বৈঠকে পাস হয়েছে ‘বিগ থ্রি’র সংস্কার প্রস্তাব। ফলে খোল নলচে পাল্টে গেছে আইসিসি’র।
এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কতটা বিশ্ব ক্রিকেটে টেস্ট মর্যাদা নিয়ে টিকে থাকতে পারবে এ সংশয় এখন সবার মাঝে।
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে নিচের স্তরে থাকা বাংলাদেশের জন্য টেস্ট মর্যাদা ধরে রাখা কতটা চ্যালেঞ্জ ও বাংলাদেশে আইপিএল আয়োজনে বিপিএল শংকার মুখে পড়বে কিনা? এসব বিষয় নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক বিসিবি পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।
তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে চিন্তা করলে ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তাব পাশ হওয়ায় ক্রিকেটের বড় ক্ষতি হয়ে গেছে।
সংস্কার প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ায় বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রণ এক অর্থে বড় তিন ক্রিকেট বোর্ডের হাতে চলে গেছে এবং অর্থেরও সিংহভাগ তারাই পাবে উল্লেখ করে সিরাজউদ্দিন বলেন, ‘এখন কোনো ভবিষ্যৎ সফরসূচি (এফটিপি) থাকবে না। দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে টেস্ট সিরিজ ঠিক হবে। ফলে বাংলাদেশের মতো র্যাঙ্কিংয়ে নিচে দেশগুলোর জন্য স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। ’
তিনি বলেন, ‘বড় দলগুলো স্বাভাবিকভাবেই ছোট দেশগুলোর সঙ্গে ভবিষ্যতে খেলতে চাইবে না। তারা করুণা করলে হয়তো খেলবে। এখন তাদের করুণার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। ’
সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন,‘এখনো অবশ্য বলার সময় আসেনি। তবে নতুন প্রস্তাবের কারণে বাংলাদেশের টেস্ট স্ট্যাটাসও হুমকির মুখে পড়তে পারে। কারণ বাংলাদেশ যদি ধারাবাহিকভাবে ভালো না করে, আয়ারল্যান্ড কিংবা আফগানিস্তান ধারাবাহিক ভালো করে তাহলে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে টিকে থাকাটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ’
নতুন প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সমালোচনা করার কিছুই নেই উল্লেখ করে এ ক্রীড়া সংগঠক বলেন,‘বোর্ডের কোনো করণীয় ছিল না। যদি বোর্ড আইসিসি’তে এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিত তাহলে বড় দেশগুলোর চক্ষুশুলে পরিনত হতো। ’
তিনি বলেন, ‘এখন সাংগঠনিক দক্ষতা প্রমাণ করতে হবে। বড় দেশগুলোর সঙ্গে সফরসূচি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ক্রিকেটই বিশ্ব দরবারে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। ’
তবে নিজেদের স্বার্থ আদায় এবং রক্ষার লড়াইয়ে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে বলে জানান তিনি।
এক্ষেত্রে বিসিবি’কে বিতর্ক এড়িয়ে আসল বিষয়টি খোলামেলাভাবে সবার কাছে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন,‘বিষয়টি সবার কাছে স্পষ্ঠ করে তুলে ধরে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানাতে হবে। ক্রিকেটের স্বার্থে কোন ধরণের পারশিয়ালিটি না করে সার্বজনীনভাবে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। ’
বিপিএলের প্রথম আসরে সদস্য সচিব ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর। তারও আগে তিনি চট্টগ্রামে পিসিএলেরও একই পদে দায়িত্ব পালন করেন। পিসিএল প্রথমবার চট্টগ্রামে আয়োজন করার পর দ্বিতীয়বার আয়োজন করা হয় মরুর দেশ শারজাহতে। পরের আসর করার ঘোষণা দিয়েছিলেন লন্ডনে। কিন্তু পিসিএল আর আলোর মুখ দেখেনি।
বিপিএল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে এত বেশি নেতিবাচক সমালোচনা হয়েছে যে, পৃথিবীতে এটি একটি আলোচিত টুর্নামেন্ট হয়ে গেছে। আল জাজিরার মতে, আইপিএলের পর এটি ক্রিকেটের দ্বিতীয় বৃহত্তম আসর। অতি শিগগির এর আয়োজন করা উচিত। ’
তিনি বলেন, ‘বিপিএল নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা আছে। কিন্তু তাই বলে এটা বন্ধ করা যাবে না। বিপিএল আয়োজন হয়েছে বলে কারা চরিত্রহীন তা প্রমানিত হয়েছে। আমি মনে করি, ভুলভ্রান্তি ছিল। তা চিহ্নিত করে সংশোধন করা প্রয়োজন। পৃথিবীর বড় দেশগুলোতে টুর্নামেন্ট নিয়ে অভিযোগে আছে। তাই বলে তারা টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখেনি। আমাদেরও টুর্নামেন্ট বন্ধ রাখাটা সমীচীন হচ্ছে না। এটা বন্ধ রাখলে আয়োজকদের চরম সাংগঠনিক ব্যর্থতা বলে প্রমাণিত হবে। ’
এ আয়োজনের কারণে আমাদের স্থানীয় খেলোয়াড়রা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে এবং অর্থনৈতিকভাবেও বোর্ড লাভবান হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশে আইপিএল আয়োজনের ঘোর বিরোধী বিসিবি’র সাবেক এই পরিচালক। তিনি বলেন,‘বিপিএল যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে, তা আয়োজন না করে আইপিএল’র ভেন্যু করা হলে এটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশের মানুষ খেলা দেখবে আর টাকা নিয়ে যাবে ইন্ডিয়া। এছাড়া পরবর্তীতে বিপিএল আয়োজনে স্পন্সরও হারাবে বাংলাদেশ। ’
বাংলাদেশ সময়: ২১০৫ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারী ০৯, ২০১৪