ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মাদ্রাসায় বিস্ফোরণ

হেফাজত নেতা ইজহারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪
হেফাজত নেতা ইজহারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর বহুল আলোচিত লালখান বাজার মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের সিনিয়র নায়েরে আমির মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও তার ছেলে হারুন ইজহারসহ ৯ জনকে আসামী করে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

সোমবার সকালে বিস্ফোরক আইনে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগপত্রটি চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সাধারণ নিবন্ধন (জিআরও) শাখায় জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা খুলশী থানার এস আই লোকমান হোসেন।



এস আই লোকমান বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগপত্র জিআরও শাখায় জমা দিয়েছি। সেখান থেকে আদালতে দাখিল করা হবে।
অভিযোগপত্রে ৯ জনকে আসামী এবং ৪৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

 

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামীদের মধ্যে প্রথম দু’জন হচ্ছেন লালখান বাজার মাদ্রাসার পরিচালক মুফতি ইজহারুল ইসলাম ও তার ছেলে মুফতি হারুন ইজহার। এছাড়াও আছে আবদুল হাই ওরফে সালমান, হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ ইছহাক, মনির হোসেন, আবদুল মান্নান, তফসির আহমেদ ও মোহাম্মদ জুনায়েদ নামে আরও ৭ জন।


সূত্র জানায়, দেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও অশান্ত করতে পরিকল্পিতভাবে নাশকতার জন্য আসামীরা গ্রেনেডের মত শক্তিশালী বিস্ফোরকগুলো মজুদ করেছিল বলে অভিযোগপত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন।

এস আই লোকমান হোসেন বলেন, মাদ্রাসায় গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক আইনের ৩ ও ৪ ধারায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর সকাল ১১টার দিকে নগরীর লালখান বাজারে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমীর মুফতি ইজহারুল ইসলাম পরিচালিত জামেয়াতুল উলুম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে বোমা বানাতে গিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচজন ছাত্র আহত হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’ছাত্র মারা যায়।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ল্যাপটপ চার্জার থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করে। তবে পুলিশ ওই কক্ষ তল্লাশি করে চারটি তাজা গ্রেনেড এবং বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেন। রাতে মুফতি ইজহারের বাসায় তল্লাশি করে ১৮ বোতল এসিড পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে নগরীর খুলশী থানায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেন। দু’টি মামলাতেই মুফতি ইজহার ও ছেলে হারুনকে আসামী করা হয়।

মুফতি ইজহার ও তার ছেলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে।

লস্কর ই তৈয়বার সঙ্গে কানেকশনের অভিযোগে ২০১০ সালে একবার মুফতি হারুন ইজহার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতের ডাউকি এলাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া লস্কর-ই তৈয়বার দুটি জঙ্গি নাজের ওরফে নাজের পারবন এবং শফিক ওরফে সাহাফাজ শামসুদ্দিন সেদেশের পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের সঙ্গে ২০০৯ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে মুফতি হারুনের কয়েক দফা বৈঠক হয়। এমনকি তারা মার্কিন ও ভারত দূতাবাসে হামলারও পরিকল্পনা নিয়েছিল। এরপর মুফতি হারুন গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

তার পিতা মুফতি ইজহারের মাদ্রাসায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের জন্ম হয়েছিল বলেও অভিযোগ আছে। দেড় দশক আগে ১৯৯৯ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত কবি শামসুর রাহমানের প্রাণনাশ চেষ্টার অভিযোগে আটক হওয়া কয়েকজন জঙ্গি জানায়, তারা মুফতি ইজহারুল ইসলামের লালখান বাজার মাদ্রাসাতেই ট্রেনিং নিয়েছিল।

আসামীদের মধ্যে মুফতি ইজহার ঘটনার পর থেকেই পলাতক আছেন। মুফতি ইজহার ইসলামী ঐক্যজোটের একাংশের সভাপতি নেজামে ইসলাম পার্টির একাংশের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্বে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।