ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নতুন পাসপোর্ট বইয়ে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি

আবদুল্লাহ আল মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট/ছবি: উজ্জ্বল ধর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৪
নতুন পাসপোর্ট বইয়ে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ছবি: উজ্জ্বল ধর/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: যন্ত্রে পাঠযোগ্য (এমআরপি) দৃষ্টি নন্দন নতুন পাসপোর্ট সরবরাহ করছে বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। নতুন পাসপোর্ট বইগুলো কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে আবেদনকারীদের সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নতুন পাসপোর্ট বইয়ে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন পুরাকীর্তি, শিল্পকর্ম, ঐতিহাসিক নিদর্শন, দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা, পর্যটন স্পট। তুলে ধরা হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।


বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাঈদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘নতুন পাসপোর্টে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্থাপনা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। নতুন পাসপোর্টে নিরাপত্তাসূচক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি পাতাগুলোও অনেক উন্নত করা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে নতুন পাসপোর্ট বইগুলো সরবরাহ করা হচ্ছে। ’

৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্টটিতে যেসব ঐতিহাসিক দৃষ্টি নন্দন স্থাপনা তুলে ধরা হয়েছে সেগুলো হলো- পাহাড়পুর বিহার-সোমপুর বিহার বা পাহাড়পুর বিহার। বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটি প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার। পাল বংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করেছিলেন। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।

১৯০৪ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক আইনের আওতায় ১৯১৯ সালে বিহারটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য স্থানের মর্যাদা দেয়। পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী পুণ্ড্রনগর (বর্তমান মহাস্থানগড়) এবং অপর শহর কোটিবর্ষের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত সোমপুর মহাবিহার। এর ধ্বংসাবশেষটি বর্তমান নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি স্থান পেয়েছে নতুন পাসপোর্ট বইয়ে।

পানাম নগর, সোনারগাঁও- ঈসা খাঁ এর আমলের বাংলার রাজধানী এই পানাম নগর। পানাম নগর পৃথিবীর ১০০টি ধ্বংসপ্রায় ঐতিহাসিক শহরের একটি। World Monument Fund ২০০৬ সালে পানাম নগরকে বিশ্বের ধ্বংসপ্রায় ১০০টি ঐতিহাসিক স্থাপনার তালিকায় প্রকাশ করে। পানামের প্রাচীনত্ব বহন করে ট্রেজারার হাউস, সেতু, কোস্পানীর কুঠি এবং প্রাচীন বনেদি ইমারতসমূহ। সোনারগাঁয়ের নান্দনিক চারু ও কারু শিল্পের জন্যে বিখ্যাত মসলিনের আড়ং ছিল পানাম নগর। এটিও স্থান পেয়েছে পাসপোর্টের পাতায়।

ষাট গম্বুজ মসজিদ- হযরত খানজাহান(রঃ)নির্মিত কারুকার্য খচিত পাঁচ শতাব্দীরও অধিক কালের পুরাতন বিশালায়তনের এ মসজিদটি তার দরগাহ হতে প্রায় দেড় কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। স্থাপত্য কৌশলে ও লাল পোড়া মাটির উপর লতাপাতার অলংকরণে মধ্যযুগীয় স্থাপত্য শিল্পে এ মসজিদ বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। এটিও স্থান পেয়েছে পাসপোর্টের পাতায়।

লালবাগ কেল্লা- মোগল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যাতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লা ছাড়া আর বাংলাদেশের আর কোন ঐতিহাসিক নিদর্শনে এমন কিছুর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়নি আজ পর্যন্ত। এ ঐতিহাসিক নিদর্শনটি স্থান পেয়েছে নতুন পাসপোর্ট বইয়ে।

কান্তজীর মন্দির- কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের এক অনন্য স্থাপত্য কীর্তি। এটি নবরত্ন মন্দির নামেও পরিচিত। তৎকালীন দিনাজপুরের জমিদার প্রাণ নাথ রায় শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে নির্মাণ-সমাপ্তির আগেই ১৭২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে প্রাণ রায়ের শেষ ইচ্ছানুযায়ী পোষ্যপুত্র মহারাজা রাম নাথ রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন।

মন্দিরের বাইরের দেয়ালজুড়ে পোড়া মাটির ফলকে চিত্রিত রয়েছে রামায়ণ, মহাভারতসহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫ হাজার পোড়ামাটির টেরাকোটা রয়েছে। এ ঐতিহাসিক নিদর্শনটি নতুন পাসপোর্ট বইয়ে।

আহসান মঞ্জিল- ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে বর্তমান ইসলামপুরে আহসান মঞ্জিল অবস্থিত। এটি ব্রিটিশ ভারতের উপাধিপ্রাপ্ত ঢাকার নওয়াব পরিবারের বাসভবন ও সদর কাচারি ছিল। নওয়াব আব্দুল গনির পিতা খাজা আলিমুল্লাহ ১৮৩০ সালে ফরাসিদের নিকট থেকে এই কুঠিটি ক্রয় করে সংস্কারের মাধ্যমে নিজ বাসভবনের উপযোগী করেন। পরবর্তীতে নওয়াব আব্দুল গনি ১৮৬৯ সালে এই প্রাসাদটি পুনঃনির্মাণ করেন এবং প্রিয় পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন আহসান মঞ্জিল। অনবদ্য অলঙ্করন সমৃদ্ধ সুরম্য এ ভবনটি ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন। এ স্থাপনাটিও পাসপোর্টে স্থান পেয়েছে।

মহাস্থানগড়- বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাচীন পুরাকীর্তি। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। এখানে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। এর অবস্থান বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়।

কার্জন হল- বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ভবন, যা পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃত। এটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও জীব বিজ্ঞান অণুষদের কিছু শ্রেনীকক্ষ ও পরীক্ষার হল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৯০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্ণর জেনারেল - জর্জ কার্জন এর ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন।

চট্টগ্রাম বন্দর- চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর। এটি কর্ণফুলী নদীর মোহনায় অবস্থিত। দেশের আমদানি-রফতানির সিংহভাগ পরিচালিত হয় এ বন্দর দিয়ে। এটিও স্থান করে নিয়েছে নতুন পাসপোর্ট বইয়ে।

এছাড়াও শহীদ মিনার, সুপ্রিম কোর্ট, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু নভো থিয়েটার, মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, বঙ্গবন্ধু সেতু, চা বাগান, সোনালী আ‍ঁশ পাট, বিশ্বের বৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম পাসপোর্টের পাতায় জলছাপের মাধ্যমে স্থান পেয়েছে। এছাড়া পাসপোর্টের মলাটের ভেতরে জাতীয় স্মৃতিসৌধের উপর জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় সংসদ ভবনের ছবিও রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারী ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।