ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বর্ণ ব্যবসায়ী অপহরণ

পরিবারের সন্দেহের তীর র‌্যাবের দিকে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪
পরিবারের সন্দেহের তীর র‌্যাবের দিকে ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ লুটের মামলা করে আলোচিত চট্টগ্রামের ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরীকে অপহরণের নেপথ্যে র‌্যাবের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে সন্দেহ করছে তার পরিবার।

বুধবার সকালে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তার ভাই শিমুল চৌধুরী বলেন, র‌্যাবের বিরুদ্ধে আমার ভাই মামলা করেছিল।

আমরা সন্দেহ করছি তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কারণ যারা আমার ভাইকে তুলে নিয়েছে তারা অস্ত্র দেখিয়ে নিজেদের র‌্যাব-ডিবি’র সদস্য পরিচয় দিয়েছে।


তবে বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জুয়েলার্স সমিতির নেতারা বলেছেন, তারা অপহরণের জন্য র‌্যাব কিংবা অন্য কোন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সন্দেহ করছেন না। তারা মৃদল চৌধুরীকে জীবিত উদ্ধারে প্রশাসনকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছেন। অন্যথায় দোকান বন্ধ করে রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডে বাসার নিচ থেকে ব্যবসায়ী মৃদুল চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তার ভাই শিমুল চৌধুরী বাদি হয়ে মঙ্গলবার রাতে কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বুধবার সকালে পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডের কে বি প্লাজা’র তৃতীয় তল‍ায় তার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মুষড়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা মা স্বরস্বতী বালা চৌধুরী এবং স্ত্রী শেলী চৌধুরীর কান্নায় আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ছেন উপস্থিত আত্মীয়স্বজনরাও। পড়ালেখায় মনযোগ নেই মৃদুল চৌধুরীর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের।

শেলী চৌধুরী কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বলেন, আমাদের ড্রাইভারকে দিয়ে ট্রেনে করে আমার স্বামী ৮০ ভরি স্বর্ণ ঢাকায় পাঠিয়েছিল। ড্রাইভার র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা ও সোর্সের সঙ্গে মিলে স্বর্ণগুলো আত্মসাৎ করে। পরে আমাদের জানায় র‌্যাব নাকি স্বর্ণগুলো রেখে দিয়েছে। আমার স্বামী অনেকবার র‌্যাবের অফিসার ও সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা স্বর্ণগুলো ফেরত দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।

শিমুল চৌধুরী বলেন, স্বর্ণগুলো ফেরত না দেয়ায় ১৫ জানুয়ারি র‌্যাবের বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি মামলা করেন আমার ভাই। এরপরও সোর্স ফোন করে কয়েকবার বলেছে স্বর্ণগুলো ফেরত দিয়ে দেবেন। কিন্তু কয়েকদিন ধরে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তার কোন খোঁজও পাওয়া যাচ্ছেনা। কয়েকদিনের মাথায় আমার ভাইও নিখোঁজ হয়ে গেল।

স্ত্রী শেলী বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের গাড়িচালককে অ্যারেস্ট করে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। আমি একটা তাদেরই (র‌্যাবের) কাজ বলে মনে করছি। ওরা ছাড়া আর কে এই কাজ করবে ?’

ভাই শিমুল চৌধুরীও কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা কোন অবৈধ ব্যবসা করিনা। আমার ভাইয়ের কি অপরাধ ? আমরা ভাইকে সুস্থ অবস্থায় ফেরত চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, আমার ভাইকে ফেরত দিন।

জুয়েলার্স সমিতির সংবাদ সম্মেলন
এদিকে মৃদুল চৌধুরীকে অপহরণের প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে নগরীর হাজারী লেইনসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা মিছিল নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে যান। এরপর মৃদুল চৌধুরীর ভাই ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন জুয়েলার্স সমিতির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি নূরুল আবছার বলেন, মৃদুল চৌধুরীকে কে নিয়ে গেছে সেটা আমরা বলতে পারবনা। র‌্যাব কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ তাকে নিয়ে গেছে কিনা সেটাও আমরা জানিনা। তবে প্রশাসনের কেউ নিলে তো আনঅফিসিয়ালি নিতনা,  অফিসিয়ালি নিত।

তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই, আমরা র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি কারও নাম বলব না। আমরা শুধু মৃদুল চৌধুরীকে জীবিত ফেরত চাই। তাকে জীবিত উদ্ধার করা প্রশাসনের দায়িত্ব।

মৃদুল চৌধুরীকে গাড়িতে তুলে নেয়ার সময় তো র‌্যাব এবং ডিবি’র পরিচয় দেয়া হয়েছিল, তাহলে তাদের সন্দেহ করছেন না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাদের নাম ব্যবহার করেও দুস্কৃতিকারীরা এ ঘটনা ঘটাতে পারে।

নূরুল আবছার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মৃদুল চৌধুরীকে উদ্ধারের আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, অন্যথায় আমরা সমগ্র চট্টগ্রামে সব জুয়েলারি দোকান বন্ধ করে রাস্তায় নেমে যাব।

এছাড়া মৃদুল চৌধুরীকে জীবিত উদ্ধারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় নগরীর কে সি দে রোডে মানববন্ধনের ডাক দেয়া হয়েছে বলে জানান নূরুল আবছার।

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুভাষ ধর, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য মৃদুল চৌধুরীর ৮০ ভরি স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনায় গত ১৫ জানুয়ারি ঢাকার সিএমএম আদালতে র‌্যাব-২ এর কর্মকর্তা মেজর রাকিবুল আমিনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন তিনি। বাকি দু’অভিযুক্ত হলেন, র‌্যাবের সোর্স ফাহাদ চৌধুরী টিপু এবং গাড়িচালক বাবুল পাল।

এদিকে মৃদুল চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যাবার পর হাজারি লেইনসহ আশাপাশের এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে র‌্যাব তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

তবে র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনের উপ-অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার নাজমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘মৃদুল ধর নামে কোন স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে আমরা গ্রেপ্তার করিনি। এ নামের কারও বিরুদ্ধে আমাদের কাছে কোন অভিযোগও নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।