চট্টগ্রাম: জনসখ্যার অনুপাতে চট্টগ্রাম বিভাগে বার্ষিক ৫১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে এখনো সাত লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি রয়েছে।
এছাড়া খাদ্য মজুদেও গত বছরের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে এ বিভাগ। গত বছর এই সময়ে এক লাখ ৭৪ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ থাকলেও চলতি বছরের গত মঙ্গলবার (১১ ফ্রেবুয়ারি) পর্যন্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন।
তবে বন্দরে আসা দুটি জাহাজ থেকে খাদ্য খালাস হলে মজুদ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন খাদ্য কর্মকর্তারা।
জনসংখ্যার আধিক্য, আবাদী জমির পরিমাণ কম থাকা এবং এ অঞ্চলের বৃহত অংশ উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকা হওয়ার কারণে এখানে খাদ্য ঘাটতি রয়েছে। তবে এতে সঙ্কিত নন খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা।
তারা বলছেন, ভয়ের কোন কারণ নেই। যেসব এলাকায় খাদ্য উদবৃত্ত রয়েছে সেখান থেকে এনে খাদ্য ঘাটতি পূরণ করা হবে।
চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আব্দুল আজিজ মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে খাদ্য চাহিদার তুলনায় ৭ লাখ মেট্রিক টন ঘাটতি রয়েছে। যেসব অঞ্চলে খাদ্য উদবৃত্ত রয়েছে (ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর খুলনা) সেখান থেকে এনে ঘাটতি পূরণ করা হবে। এতে সঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
জনসংখ্যার অনুপাতে খাদ্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০১১ সালের জরিপ অনুযায়ী এ অঞ্চলে (তিন পার্বত্য জেলাসহ ১১ জেলা) মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৯১ লাখ ৪৬ হাজার।
এ জনসংখ্যার জন্য ৫১ লাখ ৩০ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন(জনপ্রতি ৪৮৯ গ্রাম হিসেবে) খাদ্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
৩ ধরণের গুদামে সংরক্ষণ:
তিন ধরণের গুদামে সংগ্রহকৃত খাদ্য সংরক্ষণ করা হয় বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল আজিজ মোল্লা। তিনি বলেন, সাইলো, সিএসডি(সেন্ট্রাল সাপ্লাই ডিপো) ও এলএসডি (লোকাল সাপ্লাই ডিপো) এই তিন ধরণের গুদামে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে মোট ১২০টি গুদাম রয়েছে। এরমধ্যে নগরীর পতেঙ্গা এলাকায় সাইলো দুইটি, নগরীর দেওয়ানহাট ও হালিশহরে তিনটি সিএসডি ও জেলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১১৫টি এলএসডি।
উল্লেখ্য, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষীপুর ও নোয়াখালী জেলা নিয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় গঠিত। এর প্রধান আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক। এছাড়া প্রত্যেক জেলায় একজন করে খাদ্য নিয়ন্ত্রক রয়েছেন।
আতপ চালের সংকট:
চট্টগ্রামে খাদ্য ঘাটতির পাশাপাশি রয়েছে আতপ চালের সংকট। খাদ্য কর্মকর্তারা বলছেন, তিন পার্বত্য জেলা ও উত্তর চট্টগ্রামে আতপ চালের চাহিদা বেশি। তাই চাহিদার তুলনায় আতপ চালের সংকট রয়েছে।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, ৮ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল মজুদ রয়েছে। সংরক্ষিত চাল দিয়ে এ অঞ্চলের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে না।
বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে খাদ্য মন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্টিত এক মতবিনিময় সভায় রাঙ্গামাটি খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন সেখানে আতপ চালের চালের সংকট রয়েছে। এ সংকট থেকে উত্তোরণের জন্য তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কার্যালয়, গাড়ি সংকট:
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় ও গাড়ি সংকট রয়েছে। এতে কার্যক্রম চালাতে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন কর্মকর্তারা।
এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে খাদ্য মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বুধবার চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় মন্ত্রীর কাছে এসব সমস্যা তুলে ধরেন তারা।
এছাড়া অনেকগুলো খাদ্য গুদামের অবস্থা নাজুক। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে খাদ্য নষ্ট হয় বলেও জানান কর্মকর্তারা। এসময় খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম এসব সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে বলে আশ্বস্থ করেন।
মন্ত্রী বলেন, পুরনো গুদামের মেরামত দ্রুত করা হবে। গুদামের অবস্থা নাজুক হলে বা পানি পড়লে তার তালিকা পাঠান। সমস্যার সমাধান করা হবে।
‘পানি পড়ে বলে খাদ্য নষ্ট হয়েছে সে অভিযোগ আমি শুনতে চাই না। সমস্যা থাকলে তা পাঠাবেন। কোন সমস্যা এখন আর ফাইলবন্দী হয়ে থাকবে না। ’
ডিজিটাল দেশে এনালগ খাদ্য বিভাগ:
ডিজিটাল দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে মহাজোট সরকার। বিগত পাঁচ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশের দিকে অনেকদুর এগিয়ে গেছে বলে দাবি করা হলেও খাদ্য বিভাগ এখনো সেই পুরনো পদ্ধতিতেই রয়েছে।
কর্মকর্তাদের অভিযোগ, খাদ্য বিভাগে এখনো পুরনো পদ্ধতিতে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। উপজেলা কার্যালয়ে তো দূরের কথা এখনো অনেক জেলা কার্যালয়েও যোগাযোগের আধুনিক কোন ব্যবস্থা নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জানান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কার্যালয়ে কম্পিউটার, ইন্টারনেট সংযোগ, মডেম থাকলে খাদ্য বিভাগে সে ধরণের কোন সুবিধা নেই।
ফলে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি না।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪