চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (চট্টগ্রাম ওয়াসা)। নামের সঙ্গে পয়ঃনিষ্কাশন শব্দটা থাকলেও প্রতিষ্ঠার ৫১ বছরেও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি নাগরিক সেবাদানকারী এই প্রতিষ্ঠানটি।
বিভিন্ন সময় পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য প্রকল্পও হাতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু, প্রতিবারই তা সীমাবদ্ধ থেকেছে কাগজে-কলমে।
১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার নাগরিক সনদে নগরবাসীকে পয়ঃসেবা দেওয়ার কথা উল্লেখ থাকলেও পানি সরাবরাহের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, কেবল আন্তরিকতার অভাবেই এতদিন চট্টগ্রাম মহানগরীকে পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনা যায়নি। শীঘ্রই আমরা পয়ঃনিষ্কানের কাজ শুরু করছি।
তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে নগরীকে পয়ঃনিষ্কাশনের আওতায় আনার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রকল্পের পিডিপিপি মন্ত্রYvলয়ে পাঠানো হয়েছে। এটা অনেক বড় বাজেটের একটি প্রকল্প। এর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা।
এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নগরীর হালিশহরে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রায় ১৬৫ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা আছে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্প নিয়ে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করছে। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে কাজটা করতে সহজ হবে।
এদিকে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম ওয়াসার আয়োজনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম নগরীর পয়ঃনিষ্কাশনের উদ্যোগ নিলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন জাইকার প্রধান প্রতিনিধি মিকিও হাতায়েদা।
অনুষ্ঠানে হাতায়েদা বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রস্তাব দিলে দেশের সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যাপারে জাইকা অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহযোগিতা করবে।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চারটি সুর্নিদিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৬৩ সালের ৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিলো- নিরাপদ পানি সরবরাহের প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণ, ভূ-উপরিস্থ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নির্মাণ ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এসব কাজের মধ্যে কেবল পানি সরবরাহের কাজটি করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
পরিবেশ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষের নিঃসরিত পয়ঃবর্জ্যের পরিমাণ দৈনিক প্রায় সাড়ে তিন হাজার টন। এর পাশাপাশি উৎপাদিত হচ্ছে কয়েক কোটি লিটার তরল বর্জ্যও।
বিশ্বের উন্নত শহরগুলোতে এধরণের বর্জ্য নিয়ন্ত্রণে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকে। চট্টগ্রামে এ কাজটি চলছে খোলা ড্রেনের মাধ্যমে। ব্যবহৃত ময়লা পানি ও মানব বর্জ্য বিভিন্ন খাল হয়ে কর্ণফুলি নদীতে পড়ছে। এতে করে বায়ু ও পানি দূষণ হচ্ছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মানব এবং গৃহস্থ পয়ঃবর্জ্যে থাকা অতিরিক্ত কলিফর্মের কারণে কর্ণফুলির পানিতে কলিফর্মের পরিমাণ অনুমোদিত মাত্রার অন্তত ২০ গুণ বেড়ে গেছে। ২০০৪ সালে কর্ণফুলির পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন ডিও ছিল প্রতি লিটারে ৫ মিলিগ্রাম। বর্তমানে তা কমে ২ দশমিক ৫ মিলিগ্রামে দাঁড়িয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ঐতিহ্যবাহী নদীটির বাস্তুসংস্থান।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সরফরাজ খান চৌধুরী জানান, পানিতে অতিরিক্ত কলিফর্মের কারণে টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়েরিয়া, জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ এবং চর্ম রোগ হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ঘণ্টা, মার্চ ০৩, ২০১৪