ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১১ হত্যা মামলা

সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন আমিন চেয়ারম্যান !

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৪
সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন আমিন চেয়ারম্যান !

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাদি ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলীর আশংকা, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় বিচারের বাইরে থাকা প্রভাবশালী বিএনপি নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।



রোববার রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলী ও জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম আদালতকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখে পিপি লিখিতভাবে আদালতে অভিযোগ করবেন বলেও জানিয়েছেন।


জেলা পিপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, মামলার বিচার শুরু হলেও ঘটনার মূল হোতা আমিন চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতের নির্দেশে বিচারের বাইরে আছেন। এখন তিনি এলাকায় বসে সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে আমি আশংকা করছি। বাদিও একই ধরনের আশংকা করছেন। এ অবস্থায় আমিন চেয়ারম্যানকে বিচারের আওতায় আনার জন্য আমি বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি।

বাদি বিমল কান্তি শীল বাংলানিউজকে জানান, রোববার দুলাল চক্রবর্তী নামে তাদের এক প্রতিবেশির এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুলাল চক্রবর্তী শনিবার থেকে রহস্যজনক আচরণ শুরু করেন। তিনি বাদিকে এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে রোববার সকাল ১০টা থেকে মোবাইল বন্ধ করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

একইভাবে আরও কয়েকজন সাক্ষী চাঞ্চল্যকর এ মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার ক্ষেত্রে বাদির সঙ্গে ‘রহস্যজনক’ আচরণ করছে বলে বিমল শীল জানান।

বিমল শীল বাংলানিউজকে বলেন, সাক্ষীদের আচরণে আমার মনে হচ্ছে, কেউ তাদের সাক্ষ্য না দেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। তাদের আতংকিত বলে আমার মনে হচ্ছে।

তবে সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাঁশখালীর কালীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান চৌধুরী।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে আমার বিরুদ্ধে এ মামলার কার্যক্রম দুই বছর ধরে স্থগিত আছে। আমি দুই বছর ধরে এ মামলা সম্পর্কে কোন খোঁজও রাখিনা। মামলার তারিখ, সাক্ষ্য কারা দিচ্ছেন আমি এসব বিষয়ে কোন খোঁজ রাখিনা। সুতরাং সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানোর যে অভিযোগ করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এদিকে সাক্ষী দুলাল চক্রবর্তী হাজির না হওয়ায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে আগামী ২৫ মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পিপি আবুল হাশেম।

চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ লা মংয়ের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে। এ পর্যন্ত এ মামলায় বাদিসহ পাঁচজনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।

উল্লেখ্য ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর রাতে বাঁশখালীর সাধনপুর ইউনিয়নের শীলপাড়ায় তেজেন্দ্র লাল শীলের বাড়িতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

নির্মম খুনের শিকার ব্যক্তিরা হলেন, তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল বালা শীল (৬০), ছেলে অনিল কান্তি শীল (৪২) ও তার স্ত্রী স্মৃতি রাণী শীল (৩০), তাদের মেয়ে মুনিয়া শীল (৭) ও রুমি শীল (১১), চারদিন বয়সী শিশু কার্তিক শীল, তেজেন্দ্রর ছোট ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্র‍সাদী শীল (১৭), অ্যানি শীল (১৫) এবং তেজেন্দ্রর বেয়াই দেবেন্দ্র শীল (৭৫)।

এ ঘটনায় কয়েক দফা অভিযোগপত্র দাখিল, বাদির নারাজিসহ নানা নাটকীয়তার পর ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে সম্পত্তি দখল করতে গিয়ে পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।   এরপর আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

তবে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলার মূল আসামী আমিনুর রহমান বিচার কার্যক্রমের বাইরে আছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ঘণ্টা, মার্চ ১৬,২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।