চট্টগ্রাম: দীর্ঘদিন ধরে বিদেশী জাহাজে নাবিক হিসেবে চাকরি করেছেন মোহাম্মদ শেখ আলম। এনিভা শিপিং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গত বছর যোগাযোগ হয় তার।
খাতুনগঞ্জের ৫৯৯, রামজয় মহাজন লেনের একে টাওয়ারের পঞ্চম তলায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির মালিক অভিজিৎ চৌধুরী ওরফে টুটুল দাশ গুপ্ত তাকে কানাডায় একটি ডাগ বোটের ক্যাপ্টেন‘র চাকরি দেয়ার নামে ১০ লাখ টাকা নেন।
চীন থেকে তুরস্ক পর্যন্ত পাঠালেও ভিসা না থাকা ও জাল ‘ওকে টু বোট’র কারণে তুরস্ক থেকে শেখ আলমসহ ৬ জনকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরে টুটুলের প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সকোটেক এসোসিয়েট (হিসাব নম্বর-০১১৭১১১০০০০৪৩২৫ ও চেক নম্বর-২৭০৩১০৯) এর একাউন্ট পক্ষে ৫ লাখ টাকার প্রদান করা হয়। কিন্তু আগ্রাবাদস্থ এনসিসি ব্যাংকে জমা দিলে চেকটি ডিজঅনার হয়।
কয়েক বার অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট এ্যাক্ট এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। সম্প্রতি এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের একটি আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
বিদেশী জাহাজে চাকরির পাশাপাশি কানাডাসহ ইউরোপে নাবিক হিসেবে জনশক্তি পাঠানোর নামে প্রতারণায় নেমেছে চট্টগ্রামের এই চক্রটি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এরই মধ্যে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। বিদেশি জাহাজের নাবিক ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার যুবকদের বিদেশে উচ্চ বেতনে চাকরি ও প্রশিক্ষণের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করছে চট্টগ্রামের এনিভা লাইনস্ ও সকোটেক এসোসিয়েট নামের প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে বিভিন্ন জাহাজের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে জাহাজে চাকরির জন্য বিদেশি শিপিং এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের ‘ওকে টু বোট’ ও গ্যারান্টি লেটার তৈরি করে।
এক্ষেত্রে চীনা কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থের বিনিময়ে এসব নকল কাগজপত্র তৈরি করা হয়। এরপর বিজনেস ভিসায় চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড নিয়ে নাবিকদের জন্য ভিসাহীন ওকে টু বোট দেখিয়ে নির্দিষ্ট এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সমস্যা এড়াতে ভিন্ন ভিন্ন এয়ারলাইন্স ব্যবহার করে থাকে তারা।
জানা গেছে, ইউরোপসহ মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশের শিপিং প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নকল করে এবং নকল ওকে টু বোটের মাধ্যমে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের বিমানে করে ওইসব দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটি বেশ কয়েকটি ভূয়া অফিসের ঠিকানা ও ল্যান্ডফোন নাম্বার ব্যবহার করে থাকে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য সকোটেক এসোসিয়েট, এনিভা লাইনস এর কর্মকর্তাদের মোবাইল ও ল্যান্ডফোনে কল দেওয়া হলেও রিসিভ করেননি কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী মোহাম্মদ শেখ আলম বাংলানিউজকে বলেন, চাকরি দেওয়ার কথা বলে এনিভা লাইনস অন্তত ৫০ জন মানুষকে সর্বশান্ত করেছে।
বিদেশি জাহাজের নাবিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে উচ্চ বেতনের কথা বলে এনিভা লাইনস প্রতারণা করে থাকে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, টাকা উদ্ধার ও প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৪