চট্টগ্রাম: আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাশেম বাবুলের উপর ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলার ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিজের ভাতিজিকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হাতে দলের নেতার আহত হওয়ার ঘটনায় বিব্রত হয়েছেন নগর আওয়ামী লীগ নেতারাও।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ছাত্রলীগের পরিচয়ে এসব বখাটে ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে নগরীর চেরাগি পাহাড়, জামালখান, হেমসেন লেইনসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এলাকাবাসীর চাপের মুখে পুলিশ বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার অভিযান চালালেও প্রতিবারই রাজনৈতিক চাপের কারণে তা স্তিমিত হয়ে গেছে।
এর ফলে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে খোদ নিরীহ এক আওয়ামী লীগ নেতার উপরই হামলা করতে সাহস পেয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জামালখান এলাকার বাসিন্দারা। বুধবার চেরাগি চত্বরে ‘আমরা জামালখানবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তারা এ অভিযোগ করেন।
বাবুলের উপর ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বুধবার বিকেলে জামালখানে দু’ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দেন ব্যবসায়ীরা।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি বাংলানিউজকে বলেন, গণমাধ্যমে যেসব সন্ত্রাসীর নাম এসেছে তারা চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কোন ইউনিটের কোন পর্যায়ে কোন পদে নেই। ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে কেউ অপরাধ করলেও তাকেও ছাড় দেয়া যাবেনা। অপরাধী যে-ই হোক, নগর ছাত্রলীগ তাদের কখনও প্রশ্রয় দেবেনা।
এদিকে আবুল হাশেম বাবুলের উপর হামলার ঘটনায় তার ছেলে মীর মো.হাসান বাদি হয়ে নগরীর কোতয়ালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় স্থানীয় ৮-১০ জন বখাটে সন্ত্রাসীকে আসামী করা হয়েছে।
কোতয়ালী থানার সেকেন্ড অফিসার এস আই উৎপল বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, আহত আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাশেম বাবুলের ছেলে বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বখাটে ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা কয়েক মাস ধরে চেরাগি পাহাড় এলাকায় অবস্থান করে চুরি, ছিনতাই, মারামারি, স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীদের উত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগের মুখে গত ফেব্রুয়ারিতে কোতয়ালী থানা পুলিশ তাদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। তবে কয়েকদিন অভিযান চালালেও উল্লেখযোগ্য কোন সন্ত্রাসীকেই পুলিশ আটক করতে পারেনি। সদ্য পদ পাওয়া নগর আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে এসব ছিঁচকে সন্ত্রাসীরা দাপটের সঙ্গে এলাকায় অবস্থান অব্যাহত রাখে।
তবে পুলিশের অভিযানের মুখে তারা জামালখান বাই লেইন, জামালখান লিচু বাগান, শরীফ কলোনি, হেমসেন লেইন এলাকায়ও নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলে। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার বিকেলে শরীফ কলোনিতে জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাশেম বাবুলের উপর হামলা চালিয়েছে এসব বখাটে সন্ত্রাসীরা।
ঘটনার পর কোতয়ালী থানা পুলিশের একাধিক টিম জামালখানসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালায়। তবে ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া কোতয়ালী থানার এস আই কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি। তাদের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা চলছে। তবে বখাটে, ভাসমান ছিঁচকে সন্ত্রাসী হওয়ায় তাদের পেতে একটু সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে আবুল হাশেম বাবুলের উপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি। তারা অবিলম্বে দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৪