চট্টগ্রাম: আগুনের হলকার মতো গায়ে এসে লাগছে গরম, তবুও মানুষের কমতি নেই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভিড়।
ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলী খেলা উপলক্ষে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় দেখা গেছে এমনই চিত্র।
বৃহষ্পতিবার তিনদিন ব্যাপী এ বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। মেলার প্রথমদিনে নগরীর লালদিঘিকে ঘিরে চারপাশ হয়ে উঠে নগরবাসীর মিলনমেলায়।
মেলার মূল আকর্ষণ বলী খেলা অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল শুক্রবার।
প্রতিবছর বাংলা সনের ১২ বৈশাখ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী লালদিঘী ময়দানে শতবর্ষী এ বলীখেলার আসর বসে। এবার বলীখেলা ১০৫তম বছরে পদার্পণ করেছে।
প্রতিবারের মতো এবারও বৈশাখী মেলায় হরেক রকম পসরা নিয়ে ভিড় করেছেন দোকানিরা। আন্দরকিল্লাহ থেকে কোতোয়ালী মোড়, আসাদগঞ্জ থেকে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত চলছে মেলার বেচা বিক্রি। বিক্রি হচ্ছে হাতপাখা,শীতল পাটি, মাটির কলস, চুড়ি, ফিতা, রঙ্গিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, মাটির ব্যাংক, ঝাড়ু, খেলনা, ঢোল, বাঁশি,বাঁশ ও বেতের নানা তৈজসপত্র,কাঠের পুতুল,নকশী কাঁথা, প্লাস্টিক, মুড়ি মুড়কি, লাড্ডুসহ নানা সামগ্রী। লালদিঘি মাঠে রয়েছে সার্কাস, মৃত্যুকূপ, যাত্রাসহ বিভিন্ন আয়োজন।
মেলার দর্শনার্থীরা জানান, চট্টগ্রামে এটাই সবচেয়ে বড় লোকজ মেলা। গৃহের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সামগ্রী এবং ঘর সাজানোর উপকরণ কিনতে তাই সারা বছর এ মেলার অপেক্ষায় থাকেন তারা।
বিক্রেতাদের মুখেও একই ধরণের কথা। বিক্রেতারা বলছেন, হস্ত ও কুটির শিল্পজাত পণ্যের বিক্রির জন্য সারা বছর তারাও এ ধরণের বড় আয়োজনের অপেক্ষা করে থাকে। দেশের অন্য যেকোন মেলার চেয়ে এখানেই সবচেয়ে বেশী বেঁচা-বিক্রি হয়।
আয়োজকরা জানান, মেলায় সবচেয়ে বেশী মানুষের সমাগম হয় বলী খেলার দিন। তাদের আশাবাদ, আগামীকাল শুক্রবার মেলায় প্রথম দিনের তূলনায় অন্তত দশগুন মানুষের সমাগম হবে।
শুক্রবার বাংলালিংকের সৌজন্যে আয়োজিত বলী খেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন চ্যানেল আইয়ের বার্তা প্রধান ও পরিচালক শাইখ সিরাজ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন, বাংলালিংকের রিজিওনাল কমার্শিয়াল হেড মো. ফরহাদ হোসেনসহ অন্যান্যরা।
এবারের বলী খেলায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দেড়’শ থেকে দুই'শ বলী অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন আবদুল জব্বারের বলী খেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী।
তিনি বলেন, বলী খেলায় ১ জনকে চ্যাম্পিয়ন ও ১ জনকে রানার্স আপ পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়াও অংশগ্রহণকারী ৪০ থেকে ৪৫ জনকে পুরস্কার দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বদরপাতি এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর এই প্রতিযোগিতার সূচনা করেন। ব্যতিক্রমধর্মী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য ব্রিটিশ সরকার আবদুল জব্বার মিয়াকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়াও বার্মার আরাকান অঞ্চল থেকেও নামী-দামি বলীরা এ খেলায় অংশ নিতেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১৪