ঢাকা, শনিবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক শিল্প

ইসমেত আরা ও এসবি টুপসি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে পোশাক শিল্প ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: প্রায় ১০ হাজার বর্গফুটের সুবিশাল ফ্লোরে কাজে ব্যস্ত শত শত শ্রমিক। পর্যাপ্ত আলো-বাতাস, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেশ উৎসাহ নিয়েই কাজ করছেন পোশাক কর্মীরা।



৬০ হাজার বর্গফুটের ছয়তলা ভবনের পাঁচ ফ্লোরেই চলছে পোশাক তৈরির কাজ। যদিও অ্যালায়েন্সের শর্ত পূরণে মেরামত কাজের জন্য নিচতলায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
তিনটিতে সুইয়িং, এক ফ্লোরে কাটিং ও আরেকটি ফ্লোরে ফিনিশিং এর কাজ চলছে।

শতভাগ কমপ্লায়েন্স পরিপালন করা এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ইস্টার্ন নিটওয়্যার লিমিটেড। নগরীর কালুরঘাট শিল্প এলাকায় অবস্থিত এ কারখানায় ৯৮৬ জন শ্রমিক কর্মরত যার ৯০ শতাংশই নারী।

তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক শিল্প যে সংকটে পড়েছিল তা মোকাবেলা করে ঘুরে দাঁড়ানো প্রতিষ্ঠানের মডেল হতে পারে ইস্টার্ন নিটওয়্যার।

নগরীর কালুরঘাটে কারাখানাটি সরেজমিন পরিদর্শন এবং সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শ্রমিকের জীবনের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার, কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন কর্মরত শ্রমিকরা। তারা বলছেন, নিয়োগপত্র থেকে শুরু করে নিয়মিত বেতন-ভাতা, যাতায়াত সুবিধা, স্বাস্থ্য সেবাসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন।

রুবি মল্লিক নামে এক শ্রমিক বাংলানিউজকে জানান, মাসের প্রথম সপ্তাহে বেতন, বছরে দুটো উৎসব বোনাস, হাজিরা বোনাস ও টার্গেট বোনাস পেয়ে থাকেন। ওভারটাইমের টাকাও নিয়মিত পান।

এছাড়া শ্রমিকদের সুবিধার্তে তাদের পরিবহনে বিনা পয়সায় পাঁচটি বাসের ব্যবস্থা করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

তিনি বলেন, কর্মস্থলে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল রুম রয়েছে। সেখানে একজন বিএমএ রেজিস্টার্ড চিকিৎসক স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে থাকেন। এছাড়া একজন মেডিকেল অফিসার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত থাকেন।

মেডিকেল অফিসার প্রিয়া দাস বাংলানিউজকে জানান, শ্রমিকদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। জরুরি ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  পাঠানো হয়।

পোশাক শিল্পের সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে কমপ্লায়েন্স বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, কর্মপরিবেশ তৈরি করতে গিয়ে ব্যাংক থেকে উচ্চ সুদে বিশাল পুঁজির ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। এজন্য উদ্যোক্তারা প্রস্তুত ছিলেন না। তাই বাড়তি টাকার চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা না করলে পোশাক শিল্প ব্যবসায় থাকা যাবে না। যারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে চাইবেন তাদের এসব করতে হবে।

তবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভাড়া নেয়া ভবনে স্থাপন করা কারখানায়  কমপ্লায়েন্স করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে নাছির উদ্দিন বলেন, এজন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লট দরকার। এখন থেকেই সরকারের এ বিষয়ে পরিকল্পনা করা দরকার, দ্রুত পদক্ষেপ নিতে না পারলে অনেক ব্যবসায়ী ছিটকে পড়বে।

ইস্টার্ন নিটওয়্যার লিমিটেড (ইএনও) ১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করে জানিয়ে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম নুরুল গণি চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তায় প্রতি ফ্লোরে ১৭টি করে সিলিন্ডার, একটি নিরাপদ বর্হিগমন সিঁড়ি ও তিনটি উদ্ধারকারী জানালা আছে। প্রতি ফ্লোরে আছে অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম। এছাড়া শ্রমিকদের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা আছে।

শ্রমিকদের একদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়াও বাৎসরিক উৎসব ছুটি, মেডিক্যাল লিভসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হয়। মুন্নী নামে এক নারী শ্রমিক জানান, মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছে নারী শ্রমিকরা। রয়েছে বিনোদনের ব্যবস্থা।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ শ্রম আইন  মেনে চলছে বলে দাবি করেছেন গার্মেন্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

কারখানাটি সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিশাল ফ্লোরে উন্মুক্ত পরিবেশে কাজ করছে শ্রমিকরা। প্রত্যেকটি প্রশস্ত কক্ষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রমিক মাস্ক পরেছেন। নারী-পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা।

শ্রমিকদের খাবারের জন্য পরিচ্ছন্ন ডাইনিং রুম, বিশ্রাম রুম ও শিশু সন্তান দেখাশুনার জন্য রয়েছে ডে কেয়ার সেন্টার। সুপেয় খাওয়ার পানি ব্যবস্থা রয়েছে।

শ্রমিকরা জানান, প্রতি বছর পহেলা জানুয়ারি পিকনিকের আয়োজন করা হয়। ক্লান্তি ভোলাতে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

শতভাগ কমপ্লায়েন্স হওয়ার পরও আরো দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে অবকাঠামো  উন্নয়ন করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধান নির্বাহি বলেন, ক্রেতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের জেসিপিনি এবং শিয়ার্স কোম্পানীর চাহিদা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ, ভবন নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ চলছে।

শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা দেওয়াতে প্রতিষ্ঠানে কখনও শ্রম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়নি। প্রতিষ্ঠানের মালিকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কর্মস্থলে শ্রমবান্ধব পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি এমন চিত্র বাংলাদেশের প্রত্যেকটি গার্মেন্টসে তৈরি হয় তবে বিশ্বের মানচিত্রে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন খুব বেশি দুরে নয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।