ঢাকা, শুক্রবার, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জীবন যুদ্ধে নারী শ্রমিক

ইসমেত আরা, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৪, ২০১৪
জীবন যুদ্ধে নারী শ্রমিক ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ঘড়িতে সময় দুপুর ১টা।   সারাদিনের একটানা পরিশ্রমের পর সময় হয়েছে দুপুরের খাবারের।

  যে যার কাজ রেখে যাচ্ছেন খাবারের রুমের দিকে। ‍

সবার হাতে একটি করে টিফিন বাটি।
  কেউ খাচ্ছেন মাছ দিয়ে, কেউ মরিচ ভর্তা, কেউ লাল শাক, আবার কেউ আলু ভর্তা-ডাল দিয়ে।   কে কি দিয়ে খাচ্ছেন সেটা মূখ্য বিষয় নয়, বিষয় হচ্ছে সকলেই খাচ্ছেন খুব তৃপ্তি নিয়ে।

রাশেদা নামের এক নারী শ্রমিক খাচ্ছিলেন শাকভাজি -মাছ দিয়ে।   তিনি বলেন, প্রতিদিন মাছ জুটে না, তবে সপ্তাহে এক-দুদিন খাই, এটাই বা কম কি? সবসময় যদি এভাবে দিন যায় তাতেই আমরা খুশি।

এমন চিত্র দেখা গেছে ইষ্টার্ন নিট ওয়্যার গার্মেন্টসে।   এ প্রতিষ্ঠানে মোট শ্রমিকের ৯০ ভাগই নারী শ্রমিক।   এদের সবার বেতন ৫ হাজার ৩০০ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে।  

ওভারলকের কাজ করা মাঞ্জু আরা বেতন পান ৬ হাজার ৬০০ টাকা।   তার স্বামী অন্য একটি গার্মেন্টসে কাজ করে ভালো আয় করেন।   তারপরও স্বামী-সন্তান
নিয়ে আরেকটু ভালো থাকার জন্য গার্মেন্টসে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

সাবিনা নামের এক নারী শ্রমিক জানান, তার স্বামী দিনমজুরের কাজ করে, একমাত্র ছেলেও আয় করে।   সংসারের সবাই আয় করে বলে তাদের দিন ভালোই যাচ্ছে।

তবে এসব নারী শ্রমিকরা বাংলানিউজকে জানান, তাদের বেতন অতীতের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ঠিক, কিন্তু সেই সঙ্গে বেড়েছে জিনিসপত্রের মূল্য।   তাই কোনরকম খেয়ে-পরে দিন চলছে তাদের।  

৪ সন্তানের জননী নুরে নাহার এ গার্মেন্টসে কাজ করেন হেলপার হিসেবে।   তিনি জানান, মাস শেষে বেতন পান ৫ হাজার ৩০০ টাকা।   কিন্তু এর অর্ধেকই চলে যায় বাসা ভাড়ায়।    স্বামী দিন মজুরের কাজ করেন।   দুজনের স্বল্প আয়ের টাকা দিয়ে কোনরকম চলে তাদের সংসার।

নুরে নাহারের কথার সঙ্গে যোগ করে হেলপার মুন্নী বলেন, বেতনের টাকা সময়মতো পাই, কিন্তু এ টাকা দিয়ে অনেক কষ্ট করে চলতে হয়।

চাকরির পাশাপাশি সংসার সামলাতে কিছুটা হিমশিম খেতে হয় বলে জানালেন লাকী দাস।   তিনি বলেন, সকালে সংসারের সব কাজ করে তারপর কাজে আসতে হয়।   অফিস শেষে বাসায় গিয়ে রান্না, সন্তানদের পড়াশোনা তদারকি করতে গিয়ে বিশ্রাম নেয়ার সময় আর পাওয়া যায় না।

লাকী দাসের সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই কথা বলেন ঝর্ণা, সুমনা, স্বপ্না, আরিফা, শাহেদা, রিনা, বেবি, রোমেলার মতো নারী শ্রমিকরা।

এভাবেই একজন নারী শ্রমিক কাজের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছেন, স্বাবলম্বী করে তুলছেন নিজেকে।   একইসঙ্গে সংসারে অবতীর্ণ হচ্ছেন একজন মা, স্ত্রী, গৃহকত্রীর ভূমিকায়।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।