কক্সবাজার থেকে ফিরে: ‘আঁরার ফডু তুলি কি লাভ অইঁবু? ফডু তুলিলে টিয়া দইন পরিবু, সরকারতো আঁরারে এক টিয়াও ন দে, আঁরা গরীবর ফডু বেচিয়েরে তোয়ার বিদেশক্যুন বোদ টিয়া পাইবা’ (আমাদের ছবি তুলে কি লাভ হবে? ছবি তুললে টাকা দিতে হবে, সরকারতো আমাদের এক টাকাও দেয় না। আমাদের গরীবের ছবি তুলে তোমরা বিদেশ থেকে অনেক টাকা পাবে)’।
শিরীনের মতো আরো অনেকেই প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাচায় ঘষে মেজে, পরিস্কার করে, উল্টে পাল্টে দিচ্ছেন মাছ।
এমনই কর্মব্যস্ত চিত্র দেখা গেছে কক্সবাজারের নাজিরাটেক শুটকী পল্লী, নুইন্যার ছড়া রাশিয়ান পল্লীর আধুনিক স্বাস্থ্যকর শুটকী হ্যাচারীগুলোর শুটকি শ্রমিকদের।
মাছ থেকে শুটকি তৈরির প্রক্রিয়াও দেখার মতো। প্রথমে জেলেদের জালে ধরা পড়া মাছ খালের পানিতে পরিস্কার করা হয়। সেখান থেকে কোরাল, লইট্যা, পাইস্যা, ছুরি, চইক্যা, কেচকী, চাপিলাসহ ছোট রুপচাঁদা মাছ গুলোকে বাছাই করে আলাদা করছে এক দল শ্রমিক।
কেউ বাছাই করা মাছের পেট কেটে বের করে নিচ্ছে মাছের তেল ও চর্বি। কোনটি আবার লবন পানিতে ধুয়ে নিয়ে সেখান থেকে আরেক দল শ্রমিক ছোট বড় মাছ বাছাই করে তুলে দিচ্ছে মাচায়। সেখানে লাইন ধরে শুকোতে দিয়ে মাছ উল্টে পাল্টে দিচ্ছে আরেকটি দল। মাছ শুকাতে সময় লাগছে মাত্র দুই থেকে সাত দিন। অন্য দিকে শুকানো মাছ ভালো খারাপ বাছাই চলছে । এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ ।
প্রতিবছর শীতের শুরুতে শুষ্ক মওসুমে শুরু হয় এই কর্মযজ্ঞ, চলে বর্ষা শুরুর আগ পর্যন্ত। তবে শীতকালেই ভালো হয় শুটকী উৎপাদন। এখানকার উৎপাদিত শুটকী সারা দেশে বিপনন করা হয়। এমনকি বিদেশেও রপ্তানী করা হয়।
কক্সবাজারের নাজিরার টেক বা নুইন্যছড়ায় নয়, বঙ্গোপসাগরের উপকুলীয় এলাকা মহেশখালীর সোনাদিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারায়ও চলছে শুটকি উৎপাদনের কর্মযজ্ঞ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৪