চট্টগ্রাম: বেথলেহেমের এক গোয়ালঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। দুই হাজার বছরেরও বেশি আগে।
চট্টগ্রামের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বৃহস্পতিবার আনন্দঘন পরিবেশে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন উপলক্ষে তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ উদযাপন করেছে।
চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় বিশপ হাউসে কেক কেটে সবার মঙ্গল কামনা করে এবং দেশের সমৃদ্ধিতে অবদান রাখার প্রতিশ্রুতি জানিয়ে বড়দিনের প্রার্থনা সম্পন্ন করা হয়।
বড়দিন উপলক্ষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় বেথলেহেমের সেই আবহ সৃষ্টি করতে তাদের বাড়িতে তৈরি করেছিল প্রতীকী গোশালা। চট্টগ্রামের সব গির্জা ও তারকা হোটেলেও ছিল বড়দিনের ঐতিহ্যবাহী জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জা। গোশালা স্থাপন, রঙিন কাগজ, ফুল ও আলোর বিন্দু দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন করে। টুকটুকে লাল পোশাক পরা সফেদ দাড়ি-গোঁফের বুড়ো সান্তা ক্লজ উপহারের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছোট্ট সোনামণিদের হাতে তুলে দিয়েছেন মজার মজার উপহার।
চট্টগ্রামের গির্জায় গির্জায় আলোকসজ্জা করা হয়েছিল, সাজানো হয়েছিল ক্রিসমাস ট্রি। বৃহস্পতিবার সকালে সবচেয়ে বর্ণাঢ্য প্রার্থনা সভা হয় পাথরঘাটা জপমালা রাণীর ক্যাথিড্রাল গির্জায়। ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বল, জরি ও আলোয় সাজানো হয় যিশুর জন্মঘর। প্রার্থনা সভায় সবাই একত্র হয়ে বিশ্বের শান্তি ও মঙ্গল কামনায় ঈশ্বর ও যিশুকে স্মরণ করেন।
এছাড়া পেনিনসুলা, চট্টগ্রাম ক্লাব ও হোটেল আগ্রাবাদে বুধবার ক্রিসমাস পার্টির আয়োজন করে। এসব পার্টিগুলোতে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের পদচারণে মুখর ছিল হোটেল চত্বর। শিশুদের আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো। নাচ, গান ও খাওয়াদাওয়ার মধ্য দিয়ে আনন্দমুখর সময় কাটায় শিশুরা। হোটেলের লবি সাজানো হয় বর্ণাঢ্য সাজে। সান্তা ক্লজের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য শিশু-কিশোরদের আগ্রহ ছিল ব্যাপক। এ ছাড়া, আলোকসজ্জিত ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে শিশু-কিশোরেরা।
এছাড়া খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাড়িতে তো ছিলই বড়দিনের কেক ও উপাদেয় খাবারের আয়োজন। অতিথি-অভ্যাগতদের আপ্যায়ন করা হয়েছে হৃদয়ের উষ্ণতায়। এসব ছাড়া বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনা ও ক্যারল ছিল গির্জাগুলোতে।
বিশপের মিলনসভা: বড়দিন উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিশপ মজেস কস্তা সিএসসি শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি সিটি করপোরেশনের মেয়র এম মনজুর আলম, সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ্ উদ্দিন ও নগর পুলিশ কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডলকে সঙ্গে নিয়ে বড়দিনের কেক কাটেন।
মিলনসভায় বিশপ বলেন, বড়দিন আজ শুধু খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এ আনন্দে অংশ নেন। প্রভুর করুণা থেকে কেউ বাদ যায়নি। খুবই ছোট হলেও দেশের শিক্ষা সস্কৃতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে এ সম্প্রদায়।
চট্টগ্রাম জপমালা রাণীর ক্যাথিড্রাল গির্জায় বিশপ ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের অধ্যাপক, অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকা, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী নেতারা ও ফাদার টেরেন্স রড্রিক্স এবং ফাদার আবশালোম লিন্টু রায় উপস্থিত ছিলেন। মিলন সবাই হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান নির্বিশেষে সবাই সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে, পরস্পরের শুভ কামনা করেছে।
মিলনসভায় বিশপ মোজেস কস্তা বলেন, যিশু পৃথিবীতে এসেছিলেন মানুষকে ভালোবেসে মুক্ত ও স্বাধীন করতে, পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে, মানুষের মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৪