ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অভিনয়ের আগ্রহ মরে গেছে আসাদুজ্জামান নূরের

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
অভিনয়ের আগ্রহ মরে গেছে আসাদুজ্জামান নূরের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নাটকে অভিনয়ের আগ্রহ মনের ভেতর থেকে মরে গেছে বলে জানিয়েছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী ও প্রখ্যাত অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি বলেছেন, ‘অভিনয় আমি যতটুকু করেছি এর চেয়ে বেশি আর কিছু করতে পারতাম না।

  একে অতিক্রম করে যে আরেকটি জায়গায় যাওয়া সম্ভবত সেই শক্তিটা আমার আর নেই।   যার ফলে মনের ভেতর থেকে অভিনয়ের আগ্রহটা মরে গেছে।


রোববার (১৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে বাতিঘর আয়োজিত ‘আসাদুজ্জামান নূর: অভিনয় ও অন্যান্য’ অনুষ্ঠানে এ বক্তব্য দিয়েছেন মন্ত্রী।   কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সারের সঞ্চালনায় চট্টগ্রামের শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনেরা ছিলেন অনুষ্ঠানের দর্শকসারিতে।   অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে স্বাগত জানান বাতিঘরের স্বত্বাধিকারি দীপংকর দাশ।

নূর বলেন, অনেকে বলেন তুমি অভিনয় ছাড়লে কেন।   আমার মনেও অভিনয় করতে না পারার জন্য একটু দু:খ আছে। অন্যের অভিনয় যখন দেখি তখন মনে হয় করি। কারণ অভিনয়টা একটা টিমওয়ার্ক তো। এই যে টিমের মধ্যে থাকা এটার একটা আলাদা আনন্দ আছে।

নিজের অভিনয় জীবনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি কখনোই রোমান্টিক জুটি বাঁধার চেষ্টা করিনি।   নানান চরিত্র আমি অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। চোর ডাকাত জমিদার ভাল মানুষ খুনি এ ধরনের নানান চরিত্র।   যেমন আমি নান্দাইলের ইউনূস, সেখানে আমি পেশাদার খুনির চরিত্র করেছি।   আবদুল্লাহ আল মামুনের একটি ‍নাটকে আমি চাকরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম।   এরকম নানা চরিত্রে আমি অভিনয় করেছি।   আমার মনে হয় এটি আমার জন্য একটি বড় পাওয়া।

মঞ্চে অভিনয় করার ক্ষেত্রে আবুল হায়াতের নাক ফাটানোর মজার স্মৃতিকথাও শুনিয়েছেন আসাদুজ্জামান নূর।

তিনি বলেন, চিত্রালী পত্রিকা থেকে সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে আলী যাকেরের সঙ্গে পরিচয় হল।   বিশালদেহী মানুষ ছিলেন, এখন যে আলী যাকের তার অর্ধেক।   আলী যাকেরের সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর তিনি বললেন আমাদের মহড়া দেখতে আসেন। গিয়ে দেখলাম আমাদের পূর্বপরিচিত অনেকে আছেন।   আতাউর রহমান, আবুল হায়াত, কাজী তামান্না, এনামুল হক এরা ছিলেন।   তাদের প্রস্তাবে আমি নাগরিকে যোগ দিলাম।

‘তো, সেখানে রশীদ হায়দারের তৈলসংকটের মহড়া চলছে।   তখন কেরোসিন তেলের খুব সংকট ছিল।   একটা দৃশ্যে দেখা গেল একজন লোক তার বাড়িতে কেরোসিন তেল লুকিয়ে রেখেছে।   তাকে ধরে সবাই পেটাচ্ছে।   বাদল রহমান নামে আমাদের এক বন্ধু চলচ্চিত্রকার ওর ঘুষি খেয়ে আবুল হায়াতের নাক ফেটে গেল। এতই ফাটল যে আবুল হায়াতকে হাসপাতালে পর্যন্ত নিতে হল।   রক্ত বন্ধ হয়না কিছুতেই। ’

‘সমস্যা হল আজকে নাক ফাটল আর কালকের দিনটা বাদ দিয়ে পরশু নামবে নাটক।   খুবই সংকট, এক পর্যায়ে আলী যাকের বললেন যে নূর এই চরিত্র করবে।   আমিও তো সংকটে পড়ে গেলাম।   আমি তো চেয়ার টানি, পর্দা সাজাই, চা খাওয়াই, অভিনয় তো পারিনা। তারপর মহড়া শুরু করলাম।   দিনরাত ২৪ ঘণ্টা মহড়া দিয়ে আমি মঞ্চে অবতীর্ণ হলাম। ’

‘তো সেটা নিয়ে আবুল হায়াত এখনও বলেন যে, বাংলায় একটা কথা আছে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করা।   আপনি আমার নাক ফাটিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন।   আবুল হায়াতের নাক যদি সেদিন না ফাটত তবে আমার কবে অভিনয় করা হত আমি জানিনা। ’ বলেন নূর।

আর টেলিভিশনের নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে পরিচয়কে টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন আসাদুজ্জামান নূর।   আর হুমায়ূনের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ‍ভাই চরিত্র করে জনপ্রিয়তা পাওয়ার কথাও বললেন নূর।

তিনি বলেন, হুমায়ূন মুখের ভাষায় সংলাপ লিখতেন।   এর আগ পর্যন্ত নাটকের সংলাপ লেখা হত সাহিত্যের ভাষায়।   শুনে কৃত্রিম লাগত।   হুমায়ূনের নাটকের মধ্যে সবাই বাকের ভাইয়ের জন্য কোথাও কেউ নেই এর কথা বলেন।   কিন্তু আমার নিজের প্রিয় অয়োময়।   ওই নাটকের মির্জা জমিদার যিনি ছিলেন, অভিনয় করে খুব মজা পেতাম।   টেলিভিশনের একজন সিনিয়র প্রডিউসার বলেছিলেন এই চরিত্রে তোমাকে নেয়া ঠিক হয়নি।   এগুলো আলী যাকের, গোলাম মোস্তফার মতো লোকদের চরিত্র।   তোমার স্বাস্থ্য ভাল না, খাটো।  

‘আমি ভয় পেয়ে গেলাম।   আবার হুমায়ূনকে একথা বলার সাহস পাচ্ছিলাম না।   যদি বাদ দিয়ে দেয়।   আবার ভাবলাম, সেই আমলের জমিদাররা তো অনেক ধনী ছিলেন।   তাদের অনেক টাকা।   তারা সারারাত মদ খেত, বাঈজীর নাচ দেখে দুপুর পর্যন্ত ঘুমাত।   তো তাদের স্বাস্থ্য বেশি ভাল হওয়ার কোন যুক্তি নেই। ’

‘কোথাও কেউ নেউ নাটকটির শেষ পর্ব যেদিন প্রচার হচ্ছিল ঢাকার রাস্তাঘাট একদম খালি ছিল।   যেন কারফিউ চলছে।   তো, নাটক শেষ।   পরদিন আমার বোম্বে যাবার কথা।   আমি লাগেজ গোছাচ্ছি।   রাত সাড়ে ১২টার দিকে কলিংবেল।   দরজা খুললাম।   দেখি ২৪-২৫ বছরের এক যুবক ১২-১৩ বছরের এক ছেলেকে নিয়ে এসেছে।   বলল, তার ছোট ভাই, কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী।   বাকের ভাইয়ের ফাঁসি দেখে তাকে কোনমতেই শান্ত করা যাচ্ছেনা, সে শুধু কাঁদছে।   আমি তাকে দেখাতে এসেছি, আপনি বেঁচে আছেন। ‘

নূর বলেন, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে সবদিক থেকে আমাদের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।   হুমায়ূনের লেখা নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে।   তার অনেক লেখা অপাঠ্য মানসম্মত নয় এরকম কথা আছে।   হতে পারে।   সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অনেক লেখাও তো মানসম্মত নয়।   কিন্তু তরুণ সমাজের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ শুধু হুমায়ূনই সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন।

বক্তব্য শেষে দর্শকদের এক প্রশ্নের জবাবে নূর বলেন, নাটকের জীবন অনেক আনন্দময়।   রাজনৈতিক জীবন অনেক কঠিন।   তবে কাজটা করতে পারলে আনন্দ আছে।   নাটক তো আমার জীবনের অংশ।  

দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাতিঘর খ্যাতিমান নাট্যাভিনেতা ও রাজনীতিক আসাদুজ্জামান নূরকে নিয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।   অনুষ্ঠানের শেষে বাতিঘরের বই উৎসবের উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৫
আরডিজি/টিসি 

** ‘কিছু লোকের জন্য প্রধানমন্ত্রীর অর্জন মলিন হয়ে যাচ্ছে’
** ‘রাজনীতিতে ফেরানোর জন্য এরশাদ সাহেব দায়ী’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।