ঢাকা, বুধবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বোট দিয়েছি হালদার জন্য, সেটা এখন পতেঙ্গায় কেন?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৭
বোট দিয়েছি হালদার জন্য, সেটা এখন পতেঙ্গায় কেন? বক্তব্য দিচ্ছেন এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি

চট্টগ্রাম: এশিয়ার একমাত্র প্রকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীর মাছ সংরক্ষণে জেলা ম‍ৎস্য অধিদপ্তরের কোনো ভূমিকা নেই মন্তব্য করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি বলেছেন, ‘হালদা নদীতে মাছের প্রজনন রক্ষা করা নিয়ে জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের রয়েছে খুব বেশি গাফিলাতি।’

শনিবার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউটে ‘হালদা নদীতে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির  বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। পিকেএসএফ ও আইডিএফ এর যৌথ সহযোগিতায় সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।

পিকেএসএফ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাবেক মুখ্য সচিব মো. আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম  ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সেকান্দর খান।

অন্যদের মধ্যে পিকেএসএফ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল কাদের, জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার মো.নুরে আলম মিনা, রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল বক্তব্যে দেন।

এছাড়া শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অধ্যাপক শহীদুল আমিন চৌধুরী, সেমিনারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে বক্তব্য দেন জহিরুল ইসলাম এবং হালদা নদীর বর্তমান অবস্থা ও করণীয় সম্পর্কে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরিয়া।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরকে দোষারোপ করে প্রধান অতিথি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, ‘যারা বড়শি দিয়ে রাতে মাছ ধরে তাদের ধরতে আমি হালদা নদীতে একটি স্পিড বোট দিয়েছি। সেটা এখন হালদা নদীতে নেই।   আমি জেনেছি, বোটটি এখন পতেঙ্গায়। আমিতো পতেঙ্গার জন্য স্পিড বোট দিইনি। হালদা নদীতে মাছের প্রজনন সংরক্ষণে এই মৎস্য অধিদপ্তরের খুব বেশি গাফিলাতি আছে। ’

প্রধান অতিথি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র রক্ষায় বরাদ্দ ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এখানে বরাদ্ধ আরও বাড়ানো দরকার ছিল।   তবে বহুমাত্রিক এই নদী রক্ষায় আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই নদী ও নদীর মাছকে বাঁচাতে হবে। তবে এই জন্য এখানে দুটির বিষয় গুরুত্ব দিতে হবে এক. হালদা নদীর মাছ দুই. নদীর পানি। ’

তিনি বলেন, ‘এই দুটি বিষয় রক্ষার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আগাতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের বালি উত্তোলন জরুরি। কিন্তু তা করতে হবে নির্ধারিত পয়েন্ট থেকে।   হালদা নদী নিয়ে আইন থাকতে হবে। আইন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইঞ্জিন বোট চলা যাবে না, দুষণ করা যাবে না, আশপাশের বর্জ্য ফেলা যাবে না, কীটনাশকের পানি আসতে দেওয়া হবে না। এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে একদিন হালদা নদী আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে। ’

‘হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট নদীর পাড় দিয়ে হাঁটবে।   পরিবেশ দূষণকারী ও অবৈধ কোনো কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীর পাশ ঘেঁষে গড়ে উঠা অবৈধ কলকারখানা ভেঙে দিতে হবে। তবেই এই নদী বাঁচবে। -যোগ করেন এবিএম ফজলে করিম।

তিনি আরও বলেন, ‘হালদা নদী রক্ষায় হাটহাজারী উপজেলা ও রাউজান উপজেলা মানুষদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। যাদের কাজই হবে, নদীর পাড়ে অবৈধ বড়শি দিয়ে মাছ ধরা ঠেকানো। অবৈধ কেউ কিছু করছে এরকম কাউকে ধরিয়ে দিতে পারাদের জন্য পুরুস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। আমি এর আগে ১০ হাজার টাকা পুরুস্কারের ঘোষণাও দিয়েছিলাম এবং কয়েকজনকে পুরুস্কার দিয়েছিও। ’

চট্টগ্রাম  ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মুহাম্মদ সেকান্দর খান বলেন, ‘১৯৭৬ সালে হালদা নদীতে আমি কাজ করেছি। সেই থেকে এখন পর্যন্ত যারা এর সাথে সম্পৃক্ত তাদের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে।   এই নদীতে আমি যখন কাজ করতাম তখন মাছের তুলনামূলক ভাল রেনু পাওয়া যেত।   তখন থেকে দিন দিন মাছের এই রেনু কমতে শুরু করেছে। ’

তিনি বলেন,  ‘নদীতে মাছের প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণে পরিবশে অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি নদীর পাড়ের মানুষকেও অনেক দায়িত্ববান হতে হবে। ’

জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন বলেন, ‘হালদা নদী রক্ষায় সেমিনারে যে সব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা রাখার জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট থাকবে। বিশেষ করে নদীতে বালু উত্তোলনের যে ইজারা তাও নির্দেশনা আলোকে দেওয়া হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। ’

পুলিশ সুপার মো.নুরে আলম মিনা বলেন, ‘আমরা কিছুদিন আগেও বই-পুস্তকে পড়েছি মাছে-ভাতে বাঙালি। কিন্তু আজকের সেমিনারে নদী ধ্বংসের জন্য যেসব বিষয় উঠে এসেছে, এরকম চলতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দেশকে আমরা হারাতে বসব। তখন আমাদের পরবতী প্রজন্মকে শুধু গল্পই বলা হবে।  তাই হালদা নদী রক্ষায় জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে যত ধরনরে সহযোগিতা দরকার তা করা হবে। ’

রাউজান উপজেলার চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যের দূষণ, অবাধে বালু উত্তোলনসহ নানা কারণে হালদা নদীর অবস্থা এখন সংকটাপন্ন। দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদাকে বাঁচাতে অতিদ্রুত সমন্বিত পরিকল্পনা নিতে হবে। এজন্য এই নদীকে রক্ষায় দুই উপজেলা মিলে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। ’

 

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, ৭ জানুয়ারি ২০১৭

জেইউ/টিসি

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।