ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রকল্প শুরুর আগেই বাড়ল ব্যয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৮
প্রকল্প শুরুর আগেই বাড়ল ব্যয় প্রকল্প শুরুর আগেই বাড়লো ব্যয়

চট্টগ্রাম: জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) নেয়া প্রকল্প শুরুর আগেই ব্যয় বেড়েছে।‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কারও উন্নয়ন’ শীর্ষক এ প্রকল্পে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।

একক প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ এ জলাবদ্ধতা প্রকল্পের কাজ চলতি মাসেই শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করবে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ।

এদিকে, প্রকল্প শুরুর আগে ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টিকে সু-দৃষ্টিতে দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রকল্পের পরিধি বাড়ানোর কারণে ব্যয় বাড়াটা স্বাভাবিক বলে দাবি করছে সিডিএ কর্তৃপক্ষ।

গতবছরের ৯ আগস্ট ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রণকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

পরবর্তীতে একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে আহ্বায়ক, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী এবং পানিসম্পদ মন্ত্রীকে সদস্য করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), সিডিএ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটি প্রতিনিধিরা প্রকল্পের বেশ কিছু খাতে সংশোধন ও পরিবর্তন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পূর্বের প্রকল্পে ৩০২ কিলোমিটার স্থিত রোড সাইট ড্রেন পরিষ্কার ও মেরামতের কথা বলা থাকলেও তা সংশোধন করে ৫০০ কিলোমিটার করা হয়েছে। ১০ দশমিক৭৭ কিলোমিটার নতুন সাইড ড্রেন নির্মাণের কথা থাকলেও তা সংশোধন করে ১০০ কিলোমিটার ধরা হয়েছে।  ৩৬টি খাল সংস্কার ও খননের কথা থাকলেও মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নগরীর৫৭টি খাল উদ্ধার করে খনন ও সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সময়ে খালগুলো ভরাট হয়ে যাতে নতুন বিড়ম্বনা সৃষ্টি না করে সেজন্য খালগুলোকে নিয়মিতপুরোপুরি পরিস্কার রাখতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। আগে ১৭৬ কিলোমিটার রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণের পরিবর্তে ধরা হয়েছে ১২৬ কিলোমিটার। ভূমি অধিগ্রহণের ব্যয় বাবদ ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা সংশোধন করে ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যন্ত্রপাতি ক্রয় বাবদ পূর্বে ২০ কোটি টাকার পরিবর্তে ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। এছড়াও বেশ কিছু খাত স্থিত রয়েছে।

প্রকল্প শুরুর আগে ব্যয় বাড়ার বিষয়টি সুস্থ ধারার নয় মন্তব্য করে ইস্টডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মো. সেকান্দার খান বাংলানিউজকে জানান, যেই প্রকল্পটি ৫ হাজার কোটি টাকায় বরাদ্ধ পেয়েছে, সেই প্রকল্প শুরুর আগেই প্রায় ৪০ ভাগ ব্যয় বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে হয়তো আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হবে। যেটি আমাদের কালচার। বিষয়টি যেকোন প্রকল্পের জন্য সুস্থ ধারার নয়। তাই প্রকল্প গ্রহণ করার আগে সববিষয় বিবেচনা করে নেওয়া উচিত। যাতে প্রকল্পের জন্য সুফল বয়ে আনে। নগরবাসীর জন্য এ প্রকল্পটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া এ প্রকল্প সুষ্ঠু ও মানসম্পন্নভাবে বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও ইঙ্গিত দেন এ অর্থনীতিবিদ।

এ বিষয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যান ও ১৯৯৫ সালের সিডিএ‘র মাস্টারপ্ল্যানকে ভিত্তি করে নগরীর জলাবদ্ধতানিরসনে সিডিএ’র নেয়া এ বৃহৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আমরা কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রকল্পের স্বার্থে বেশ কিছু খাতে সংশোধন ও পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে মন্ত্রণালয়ে। যা অনুমোদন হলে যেকোন সময়েই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। প্রকল্পের জরিপের কাজ শেষ হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে থাকা চাকতাই, খাতুনগঞ্জ, বকশিরহাট, দেওয়ানবাজার, চকবাজার, পূর্ব ষোলশহর, পূর্ব ষোলকবহর, চান্দগাঁ, সিডিএ আবাসিক, আগ্রাবাদ আবাসিক এলাকার খালগুলো পরিষ্কার ও খননে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সিডিএ চেয়ারম্যান  আরও বলেন, ‘প্রকল্পের আকার বাড়লেও ব্যয় বাড়াটা স্বাভাবিক। সেহেতু ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা থেকে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে টেকনিক্যাল কমিটিকে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে স্থানীয় সরকার ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। '

সিডিএ’র প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক আহম্মদ মাঈনুদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, টেকনিক্যাল কমিটির সভায় প্রকল্পে কিছুটা সংশোধন আনা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্প বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছি। অনুমোদন হলেই সিডিএ’র তত্বাবধানে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার বিভাগ কাজ শুরু করবে বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০১৮

এসবি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।