সংঘবদ্ধ এই অপরাধী গ্রুপে আছে একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিও। এছাড়া গ্রুপের সবাই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত।
মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের ১১ সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি-উত্তর) মো.কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ১১ জনের একটি গ্রুপ। তারা নিউমার্কেট রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় তিনটি মোটর সাইকেল এবং একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে থাকে। ব্যাংক থেকে কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ টাকা নিয়ে বের হচ্ছে কি না সেটা নজরদারি করে। এরকম কাউকে পেলেই পিছু নেয়। সুযোগ বুঝে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী কিংবা অস্ত্র বিক্রেতা সাজিয়ে তল্লাশির নামে অটোরিকশায় তুলে নেয়। এরপর টাকা-মোবাইল হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়।
১১ জনকে আটকের বিষয়ে তিনি জানান, গত ২৮ ডিসেম্বর ইমতিয়াজ হোসেন ইমন নামে সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রকে নগরীর লাভ লেইনে বাস থেকে নামিয়ে তল্লাশি শুরু করে তারা। একপর্যায়ে তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে চকবাজার থানায় নেওয়ার নামে অটোরিকশায় তুলে নেয়। ইমতিয়াজের কাছে তার মামার দুবাই থেকে পাঠানো ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা, নিজের ১৩০০ টাকা ও দুটি মোবাইল ছিল।
ইমতিয়াজকে অটোরিকশায় নেওয়ার পর তাকে মারধর করতে করতে সিআরবির ভেতর দিয়ে কদমতলী ফ্লাইওভারের উপরে নিয়ে যাওয়া হয়। পথে একজন টাকার ব্যাগ কেড়ে নিয়ে নেমে যায়। পরে ফ্লাইভারের উপর ইমতিয়াজের মানিব্যাগ ও মোবাইল দুটি কেড়ে নিয়ে তাকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়।
ছিনতাইকারীরা চলে যাবার সময় ইমতিয়াজ অটোরিকশার নম্বর দেখে ফেলেন। ২ জানুয়ারি ইমতিয়াজ নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে এসে ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানান এবং অটোরিকশার নম্বরটি দেন। এর সূত্র ধরেই অভিযান চালিয়ে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এডিসি কামরুজ্জামান।
আটক ১১ জনের দলনেতা হলেন মো.কাইছার হামিদ প্রকাশ রাজু (৩১)। তার বাড়ি নগরীর এনায়েতবাজারে। কাইছার বাংলানিউজের কাছে দাবি করেছন, মাত্র দুইমাস আগে তারা এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়েছে।
আটক হওয়া সেলিম মাহমুদ (৪৪) রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর। নিজেকে আওয়ামী লীগ সমর্থক দাবি করা সেলিম বাংলানিউজকে জানান, ২০০২ সালে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে আর নির্বাচন করেননি।
বন্ধুদের সঙ্গে মিলে সেলিম এই কাজে জড়িত হয়েছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। ইমতিয়াজকে ছিনতাইয়ের সময় সেলিমের মোটর সাইকেলে তিনিসহ তিনজন ছিলেন বলেও জানিয়েছেন।
আটক হওয়া মামুন উদ্দিনের (৩৫) বিরুদ্ধে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা মামলা থাকার কথা জানিয়েছেন এডিসি কামরুজ্জামান।
আটক হওয়া এই চক্রে আছেন একজন সিএনজি অটোরিকশা চালকও। মাসুদ (২৭) নামে এই চালক নগরীর চান্দগাঁও থানার খাজা রোডে থাকে।
আটক চক্রের সদস্যদের মধ্যে আরো আছেন রাঙ্গুনিয়ার হারাধন দাশ (৩৭), ফটিকছড়ির জাহেদুল আজম (৩৫), মো.রুবেল (৩০) ও জাসেদুল করিম (৩৫), নগরীর সদরঘাটের শাহেদ রানা (৩১), বাকলিয়ার শওকন আলী মানিক (৩২) এবং রাউজানের রেজাউল করিম (৫১)।
ইমতিয়াজের কাছ থেকে ছিনতাই করা দুইটি মোবাইল সেট ও নগদ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
এছাড়া ইমতিয়াজকে তুলে নেওয়া সেই অটোরিকশা, দুটি মোটর সাইকেল, একটি অয়্যারলেস সেট ও এক জোড়া হ্যান্ডকাপ, ২টি জ্যাকেট এবং একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
এডিসি কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, ডিবি পরিচয়ে এ পর্যন্ত ১১ জন মিলে ৭-৮টি ডাকাতি করেছে বলে তথ্য পেয়েছি। বেশ কয়েক বছর ধরে তারা এই অপরাধ করছে। তবে ডিবি পরিচয়ে ছিনতাই-ডাকাতি শুরুর পর এই প্রথম তারা গ্রেফতার হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
আরডিজি/টিসি