৭০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (০৪ জানুয়ারি) নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট হল প্রাঙ্গনে আলোচনা সভার আয়োজন করে নগর ছাত্রলীগ। এতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া অতিথি ছিলেন।
জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। শুরু থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনেই পাল্টাপাল্টি স্লোগান, ধাক্কাধাক্কি এবং মোবাইলে সেলফি তোলার জন্য মঞ্চের সামনে হুড়োহুড়িতে লিপ্ত হন নেতাকর্মীরা।
নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রণি মঞ্চ থেকে কয়েক দফা নেমে বিশৃঙ্খলা সামলানোর চেষ্টা করেন। কেন্দ্রীয় এবং চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারাও প্রত্যেকেই বক্তব্য দেওয়ার সময় বিশৃঙ্খলা নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন।
প্রধান অতিথি মাহবুবুল আলম হানিফ বক্তব্যের শুরুতেই স্লোগান বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এরপরও পেছন থেকে একদল নেতাকর্মী স্লোগান দিতে থাকলে হানিফ ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, ‘এই ছেলেরা, তোমরা পেছন থেকে স্লোগান দিচ্ছ কি উদ্দেশ্যে ? আমি যেটা বলছি সেটা শুনবে নাকি তোমাদের স্লোগান শোনার জন্য আসছি ? এই স্লোগানের রাজনীতিতে কোন অর্জন হবে না। তোমাদের দেশের ইতিহাস জানতে হবে। ’
এরপরও স্লোগান অব্যাহত থাকলে হানিফ আবারো বলেন, ‘এরা কারা, আমি তো বুঝলাম না। শোন, তোমাদের মতো ছেলেদের দিয়ে কিছুই হবে না। এই কর্মী দিয়ে কোন অর্জন হবে না, যদি এই মানসিকতা থাকে। ’
এর আগে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে অতীতের ছাত্ররাজনীতির উদাহরণ তুলে ধরে হানিফ বলেন, একটি সংগঠন এগিয়ে যেতে পারে না যদি শৃঙ্খলা না থাকে। এখন ছাত্ররাজনীতি অনেক বদলে গেছে। বর্তমান ছাত্রসমাজের মধ্যে শৃঙ্খলার বড়ই অভাব, যা আমাদের ব্যথিত করে, কষ্ট দেয়।
‘ছাত্ররাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তোমাদের মধ্য দিয়েই আমাদের ভবিষ্যৎ নেতা তৈরি হবে। তোমাদের মধ্য থেকেই ভবিষ্যতে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, সচিব হবে। কেউ হবেন রাজনীতিবিদ। তোমাদের মধ্যে যদি নিয়ম-শৃঙ্খলাবোধ না থাকে, তাহলে জাতি হতাশ হবে। ’
একই সভায় নওফেল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এখন যারা ধাক্কাধাক্কি করছেন, দলের যখন দুর্দিন ছিল তখন এই ধরনের সভায় ৪-৫ জনও পাওয়া যেত না। এখন দল সরকারে আছে বলে অনেকে এসেছেন। আপনাদের কাছে করজোড়ে আবেদন-সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। আপনারা শিক্ষিত না হলে যারা এই রাষ্ট্রের মূল আদর্শে বিশ্বাসী নয়, তারা নেতৃত্বে চলে আসবে। নেতাকর্মীরা শিক্ষিত না হলে ছাত্রলীগ টিকবে না। ছাত্রলীগ না টিকলে যুবলীগ টিকবে না। যুবলীগ না টিকলে আওয়ামী লীগও টিকবে না।
‘লেখাপড়া করুন। আপনাদের মধ্য থেকেই সচিব হতে হবে, জেনারেল হতে হবে, উকিল-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। শিক্ষিত হয়ে প্রশাসনে যান। তাহলে দলকে কেউ সরকার থেকে সরাতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে থাকবে। আর কখনো দুর্দিন আসবে না। ’ বলেন নওফেল
বক্তব্য শুরু সময় মহিউদ্দিন চৌধুর ও নওফেলের নামে স্লোগান আসতে থাকলে ক্ষুব্ধ হয়ে এক পর্যায়ে বক্তব্য না রেখে চেয়ারে বসে পড়েন। সেসময় অবশ্য মসজিদ থেকে আজান শোনা যাচ্ছিল। আজান শেষ হলে নওফেল আবারো বক্তব্য দিতে উঠে বলেন, কোন ভাইয়ের নামে স্লোগান ভবিষ্যতে দেবেন না। স্লোগান দেবেন বঙ্গবন্ধু এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নামে।
বক্তব্য দিতে উঠে বিপ্লব বড়ুয়াও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কিছুদিন আগে আমাদের প্রিয় নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা গেছেন। শুধু চট্টগ্রামে নয়, জাতীয়ভাবেও আওয়ামী লীগ পরিবারে একটা শোকের আবহ বিরাজ করছে। এসময় এভাবে স্লোগান দেওয়া, হাততালি দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। ছাত্রলীগ করতে হলে সাংগঠনিক দায়িত্ববোধ, নীতি-আদর্শ ধারণ করতে হবে।
সভার একপর্যায়ে বিশৃঙ্খলা থামাতে না পেরে নূরুল আজিম রণি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলে নেতাকর্মীরা কিছুক্ষণ শান্ত থাকেন।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইমরান আহমেদ ইমু চট্টগ্রামে কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা হত্যার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ শেখ হাসিনার ভ্যানগার্ড। কারা ছাত্রলীগকে শেখ হাসিনার কাছ থেকে দূরে সরাতে চায়, সেটা আপনারা অনুসন্ধান করে দেখুন।
‘আমাদের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে খুন করা হয়েছে। সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব এসে বলেছিলেন খুনিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা হবে। কিন্তু খুনিদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না ? এর পেছনে কারা আছে, সেটা আপনারা তদন্ত করে দেখুন। দিয়াজ ইরফান চৌধুরী, নাসিম আহমেদ সোহেলের হত্যাকারী কেন গ্রেফতার হচ্ছে না ?’
ইমু বলেন, আমরা যারা চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ করি, আমরা এখন মৃত্যুভয়ে ভীত। আমরা জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা সবাই জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছি। যে ছাত্রলীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে, সেই ছাত্রলীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে কারা, আপনারা সেটা দেখুন।
নূরুল আজিম রণি বলেন, দিয়াজ ইরফান, সুদীপ্ত, সোহেলের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করা হবে বলে আমরা বারবার আশ্বাস পেয়েছি। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে না। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। এভাবে চলতে থাকলে ভালো ছেলেরা আর ছাত্রলীগ করতে আসবে না।
তবে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউই ছাত্রলীগ নেতাদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছুই বলেননি।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন ও আলতাফ হোসেন বাচ্চু এবং কোষাধ্যক্ষ ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০১৮
আরডিজি/টিসি