চাটগাঁইয়া গানের কিংবদন্তি আবদুল গফুর হালীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে সুফি মিজান ফাউন্ডেশন ও পিএইচপি ফ্যামিলি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে গফুর হালীর গানের স্বরলিপিকার আবদুর রহিম, কাবেরী সেনগুপ্তা, সৈয়দুল হক ও স্বর্ণময় চক্রবর্তী, শিল্পী কল্যাণী ঘোষ, গফুর হালীকে নিয়ে প্রথম ডকুমেন্টারি নির্মাতা শৈবাল চৌধুরীকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
ড. সেন বলেন, গফুর হালী মুখ্যত সহজাত কবি, সংগীত শিল্পী।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, সংগীত জাতি-ধর্ম-সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে উঠে মানুষকে গুরুত্ব দেয়। নাগরিক জীবন কৃত্রিম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও আরোপিত। পরীক্ষা কেন্দ্রিক শিক্ষা। আমি মনে করি সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধিতা তৈরি করছে নাগরিক জীবন ও শিক্ষা।
তিনি বলেন, গফুর হালী বিলীয়মান সংস্কৃতি পুনরুদ্ধার করেছেন। কিন্তু উত্তরাধিকার তৈরি করে যেতে পারেননি। সংস্কৃতি জীবনচর্চার অংশ না হলে জাদুঘরে ঠাঁই পাবে। এখন মানুষের অন্তরে গান নেই, বাড়িতে গান নেই সুর বাজে না এটা আশঙ্কার বিষয়। তিনি গফুর হালী একাডেমিকে ভাব সংগীতের রত্নভাণ্ডার সংগ্রহ করার অাহ্বান জানান।
নাট্যজন প্রদীপ দেওয়ানজী বলেন, শিল্পী হতে হলে অকপট, সৎ ও সরল হতে হয়। গফুর হালীর এসব গুণ ছিল। অজস্র গানের বাইরে ছয়টি নাটক পেয়েছি গফুর হালীর কাছ থেকে।
বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক ড. সাইমন জাকারিয়া বলেন, গফুর হালীর বাড়িতে তিন দিন থাকার সুযোগ হয়েছিল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় টিন বাজিয়ে গান গেয়ে মানুষকে যুদ্ধে উদ্দীপ্ত করতেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাকে জনপ্রিয় করেছিলেন গানের মাধ্যমে। তিনি বলেন, আমাদের একাডমিক পর্যায়ে সংগীত সাধকদের স্থান নেই। অথচ পাশ্চাত্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে গফুর হালীও পাঠ্য।
তিনি হফুর হালীর বাড়িতে স্মরণ উৎসব ও মেলা, সর্বজনীন একাডমিক প্রকাশনা, রচনাসমগ্র প্রকাশ, ডিজিটাল আর্কাইভ গড়া, গানগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করার আহ্বান জানান।
আবদুল গফুর হালী একাডেমির পৃষ্ঠপোষক ও পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনওয়ারুল হক গফুর হালীর একটি সম্প্রীতির গান গেয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন বলেন, মোহছেন আউলিয়ার গান গফুর হালীর হাত ধরে এসেছে। তিনি চাটগাঁইয়া গানের ত্রাতা বা পুনর্জন্মদাতা। তিনি দুই হাজারের বেশি গান লিখেছেন। তিনি চট্টগ্রামের ভাষাকে আঞ্চলিক মানতে রাজি ছিলেন না।
আবদুল গফুর হালী একাডেমির সেক্রেটারি ও লোকসংগীত গবেষক নাসির উদ্দিন হায়দার বলেন, গফুর হালীর মূল্যায়ন বিদেশে হলেও দেশে যথেষ্ট হয়নি। তিনি পদক, সম্মাননা, সংবর্ধনার জন্য লালায়িত ছিলেন না। চট্টগ্রামের কোনো শিল্পীর গানের স্বরলিপির বই নেই, শুধু গফুর হালীর ৪০০ গানের স্বরলিপির বই আছে। এ গানগুলো কখনো হারাবে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গফুর হালী একাডেমির ভাইস চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল মোস্তফা। সবশেষে গফুর হালীর গান করেন জনপ্রিয় শিল্পীরা। এছাড়া 'দিওয়ানে মাইজভাণ্ডারী' বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৭
এআর/টিসি