মোহাম্মদ ইউসুফ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সোমবার (০৮ জানুয়ারি) সকালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড নিবিড়ভাবে তাঁর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষানিরীক্ষা করেছেন।
সূত্রমতে, মোহাম্মদ ইউসুফের রক্তচাপ খুবই কম। তার কিডনিও খুবই দুর্বল।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা.আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, মোহাম্মদ ইউসুফকে ঢাকায় নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। কিন্তু বিমানের চিকিৎসকেরা উনার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানতে চেয়েছেন। ব্লাড প্রেসার ডাউন থাকার বিষয়টি উনাদের জানানো হয়েছে। চিকিৎসকদের সম্মতি পেলে আজ (সোমবার) অথবা আগামীকাল উনাকে ঢাকায় নেওয়া হবে।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মোহাম্মদ ইউসুফের সার্বিক চিকিৎসা মনিটরিং করা হচ্ছে। ঢাকায় নিয়ে তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তির সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে অসুস্থ সাবেক সাংসকে দেখতে সোমবার চমেক হাসপাতালে গেছেন সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড.হাছান মাহমুদ ও চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নানও তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গেছেন।
চট্টগ্রাম উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী ও দক্ষিণের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, আওয়ামী লীগের উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম এবং দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান অসুস্থ এই রাজনীতিককে দেখতে হাসপাতালে যান।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক বেদারুল আলম চৌধুরী বেদার বাংলানিউজকে বলেন, কয়েক বছর আগে ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ ইউসুফের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছিল। দুই মাস চমেক হাসপাতালে রেখে উনাকে চিকিৎসা করানো হয়েছিল।
‘এরপর মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উনাকে ঢাকায় নিয়ে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করেন। কয়েক মাস আগেও মাননীয় মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তাঁর রাঙ্গুনিয়ার বাড়ীতে যান। কিন্তু মাস দু’য়েকের উনার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ’ বলেন বেদার
একসময়ের তুখোড় বামপন্থী নেতা মোহাম্মদ ইউসুফ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তিনি সিপিবি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
বর্ষীয়ান রাজনীতিক হলেও মোহাম্মদ ইউসুফের অর্থবিত্ত নেই। বিয়েও করেননি। বার্ধক্যে পৌঁছা মানুষটি নানা রোগে ভুগলেও অর্থাভাবে যথাযথ চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না।
অসহায় এই সাবেক সংসদ সদস্যের করুণ অবস্থা নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি ফেসবুকে একটি মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি হাসান ফেরদৌস। এরপর ইউসুফকে নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড় উঠে। বিষয়টি গড়ায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত।
শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রোববার (০৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন রাঙ্গুনিয়ায় মোহাম্মদ ইউসুফের গ্রামের বাড়িতে যান। তাঁকে এনে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
মৃত্যুমুখে নিঃস্ব এমপি, অবশেষে পাশে প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ সময়: ১৯০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৮
আরডিজি/টিসি