বামপাশে ‘পরম্পরা’ নামের সভা ও প্রদর্শনী কক্ষ, সদস্য-কোণ, কার্যালয়, চাতক নামের ক্যাফে। নগরের মেহেদিবাগে ‘বিস্তার: চিটাগাং আর্টস কমপ্লেক্স’র চিত্র এটি।
বিস্তার পরিচালিত হচ্ছে ট্রাস্টের অধীনে। ট্রাস্টের সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন লেখক-অনুবাদক ও সংস্কৃতি-শিল্প সংগঠক আলম খোরশেদ।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, বিস্তারের কথা বলতে গেলে এর আগের সংস্করণ বিশদবাঙলার কথা বলতে হয়। যা শুরু করেছিলাম বাংলার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, ভাষা, ভাবসম্পদ ইত্যাদির প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে। আরেকটি লক্ষ্য ছিল বাঙালি সংস্কৃতির নিয়মিত চর্চা। বিশদবাঙলা ছিল একধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে লক্ষ্য রাখতে গিয়ে সংস্কৃতি চর্চা খানিকটা ব্যাহত হচ্ছিল। ৮-৯ বছর বিশদবাঙলা চালানোর পর মনে হলো আমাদের লক্ষ্য সফল হয়েছে। মানুষ নিজস্ব ভাবসম্পদের ব্যাপারে সাধারণ সচেতনতা তৈরি হয়েছে। চর্চাটা সমাজে ছড়িয়ে গেছে।
এরপর আমরা পরের ধাপে ‘বিস্তার: চিটাগং আর্টস কমপ্লেক্স’ প্রতিষ্ঠা করি। শুধু দেশি ও বৈশ্বিক সংস্কৃতি ও শিল্পচর্চাই এর লক্ষ্য। এর প্রচণ্ড অভাব আমরা চট্টগ্রামে লক্ষ করেছি। যদিও সংস্কৃতি চর্চা হচ্ছে নানা ভাবে। তবে তার মধ্যে বৈশ্বিক মান, পেশাদারিত্ব, ভবিষ্যৎমুখী চিন্তার অভাব ছিল। ২০১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শততম জন্মদিনে বিস্তারের কার্যক্রম শুরু করি।
নগরের তরুণ শিল্প-সংস্কৃতিকর্মীদের নিজস্ব ঠিকানা বা মঞ্চ হিসেবে তাদের বোধ শাণিত করতে, এগিয়ে নিতে বিস্তার কাজ করবে। পাশাপাশি বিশাল জনগোষ্ঠীর, মধ্যবিত্তের সাংস্কৃতিক-ক্ষুধা, শিল্পতৃষ্ণা মেটানোর জন্য সুস্থ বিনোদন, সাংস্কৃতিক জীবন দেওয়া আমাদের লক্ষ্য।
তিনি জানান, বছরজুড়ে নিয়মিত নানা উৎসব, নাট্য-আলোকচিত্র-শিল্পকর্ম প্রদর্শনী, আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা, বই উৎসব, সাপ্তাহিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী করি আমরা। প্রতি বছর ডিসেম্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে তিন দিনের বিস্তার শিল্পোৎসব করি জেলা শিল্পকলা একাডেমির মুক্তমঞ্চে। শিল্পের সব শাখার মানসম্পন্ন কিছু পরিবেশনা আমরা উপহার দিই। দেশজুড়ে এর সুনাম রয়েছে। বিদেশ থেকেও শিল্পীরা আসেন। ইন্টারনেটে দেখলাম, বিস্তার চট্টগ্রামের ১০টি পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে।
নেপালের ফিল্ম সাউথ এশিয়ার ‘সাউথ এশিয়ান ডকুমেন্টারি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’র সেরা ১০টি চলচ্চিত্র আমরা প্রদর্শন করি বিস্তারে। কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘শো আস দ্যা ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী করে। এরপর সেটি আমরা প্রদর্শন করি। এবারের বিষয় ‘আন্ডার ওয়াটার ফটোগ্রাফি’। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের শহর। তাই এটি বিস্তারে করা হবে। এর বাইরে ভারত, জার্মান, ফরাসি নাটক আমরা করেছি।
বিস্তারে শতাধিক সদস্য রয়েছেন বর্তমানে। দাতা, জীবন, সাধারণ ও ছাত্র ক্যাটাগরিতে ২৫ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা ফি দিতে হয় সদস্যদের। সদস্যরা বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন।
‘চাতক’ ক্যাফে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে খেতে ভাবনা বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। যেখানে ৬-১৫ টাকায় রং, দুধ, আদা, লেবু, সবুজ, মসলা, তুলসী, জুঁই চা পাওয়া যায়। বেল বা লেবুর শরবত ৩০ টাকা। সাদা ভাত, ভার্জি, ভর্তা, মশুর ডাল, সালাদ দিয়ে ভাত ৬০ টাকা। ছোলা ১ প্লেট ১৫ টাকা। সিঙ্গাড়া জোড়া ১৫ টাকা।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে কবি আলম খোরশেদ বলেন, আমাদের সার্বক্ষণিক স্বপ্ন হচ্ছে স্থায়ী ঠিকানায় একটি যথার্থ শিল্পপল্লি গড়ে তোলা। যেখানে থাকবে আধুনিক কালচারাল মিলনায়তন, প্রদর্শনশালা, স্টুডিও, পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, ভাস্কর্য উদ্যান, মুক্তমঞ্চ, দূরদূরান্ত থেকে আসা শিল্পীদের জন্য নিবাস ইত্যাদি। এ লক্ষ্যে আমরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
>> চেয়েছি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আবার যুদ্ধ হোক: মিনার মনসুর
বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৯
এআর/টিসি