ঢাকা, শনিবার, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চসিক নির্বাচন: প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই পূরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২০
চসিক নির্বাচন: প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই পূরণ আ জ ম নাছির উদ্দীন

চট্টগ্রাম: ঘনিয়ে আসছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। কে হবেন আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী, তা নিয়ে আছে নানান জল্পনা-কল্পনা। তবে দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের বিবেচনায় আবারও আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রার্থী হতে পারেন বলে মনে করছেন সমর্থকরা।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল জনরায়ে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৩৬১ ভোট।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম। তিনি পেয়েছিলেন ৩ লাখ ৪ হাজার ৮৩৭ ভোট।
আ জ ম নাছির উদ্দীন শপথ নেন ৬ মে। কিন্তু আইনি বাধ্যবাধকতায় মেয়রের দায়িত্ব নেন ওই বছরের ২৬ জুলাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইনে ২০২০ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

চট্টগ্রামকে ক্লিন ও গ্রিন সিটিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি সম্বলিত ৩৬ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। এসব প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই তিনি পূরণ করতে পেরেছেন বলে দাবি তার অনুসারীদের।

দায়িত্ব গ্রহণের পর আ জ ম নাছির উদ্দীন মাসে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা সম্মানী পেলেও সেই টাকা দান করেন অটিজম স্কুল, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অসহায় শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগীদের জন্য। তিনি সিটি করপোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করেন না। জ্বালানি খরচও বহন করেন নিজের পকেট থেকে।

ক্লিন ও গ্রিন সিটি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নগরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো নতুন রঙে সেজেছে। বিলবোর্ডমুক্ত হয়েছে পুরো শহর। হকারদের শৃঙ্খলায় আনতে কিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সেবাধর্মী বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করার নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন মেয়র। রেকর্ডসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে এনেছেন আমূল পরিবর্তন।

গত সাড়ে চার বছরে চসিকের সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন হয়েছে। জলাবদ্ধতার যে প্রতিশ্রুতি আ জ ম নাছির উদ্দীন দিয়েছিলেন, সেটিও পূরণ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর সহযোগিতায়। সেনাবাহিনীর সহায়তা নিয়ে তারা এ কাজ করছে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বর্তমানে চার হাজার ৯৭ জন অস্থায়ী এবং দুই হাজার ৯৬১ জন স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। ঈদ উপলক্ষে তাদের  বোনাস প্রদান ও প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে ১৩ কোটি এবং শিক্ষাখাতে ৪৩ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে চসিককে। কিন্তু নগরবাসীর কাছ থেকে গৃহকর বাবদ এই ভর্তুকির টাকাও আসছে না।

ক্লিন ও গ্রিন সিটিগত সাড়ে চার বছরে প্রায় ১৫ লাখ রোগীকে সেবা দিয়েছে চসিক। ইপিআই টিকা কার্যক্রমে একাধিকবার পুরস্কার পেয়েছে। প্রতিবছর লক্ষাধিক নগরবাসীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। নগরে ১৪ লাখ ৪০ হাজার হতদরিদ্র মানুষের জন্য পূর্বনির্ধারিত ৩০ টাকা থেকে কমিয়ে ১০ টাকা ফি’তে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

২০১৫ সালের আগে নগরের বিভিন্ন স্থানে ছিল উন্মুক্ত ডাস্টবিন। আ জ ম নাছির দায়িত্ব গ্রহণের পর ডোর টু ডোর প্রকল্প গ্রহণ করে নগরবাসীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন ময়লা রাখার ৯ লাখ প্লাস্টিক বিন। এ উদ্যোগের ফলে এখন গৃহস্থালি বর্জ্য অপসারণ করা হচ্ছে সহজে।

তিনি দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসের মধ্যেই উচ্ছেদ করা হয় প্রায় চার হাজার বিলবোর্ড, ইউনিপোল ও মেগা সাইন। নগরকে শতভাগ আলোকায়ন করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও তিনি পূরণ করেছেন শতভাগ। দায়িত্ব গ্রহণের পর এক হাজার ৫৫৬টি সুইচিং পয়েন্টের মাধ্যমে ৫১ হাজার এনার্জি, টিউব, হাইপ্রেসার সোডিয়াম, এলইডি ও অন্যান্য বাতি দিয়ে সড়ক আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম চার বছরে নগরের গুরুত্বপূর্ণ প্রধান প্রধান সড়কে চার কোটি ৭৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকায় ৭০৫টি এলইডি বাতি স্থাপন করা হয়েছে। আর দুই কোটি ৩৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকায় ৩৮১টি এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এছাড়া ২৭ কোটি ২ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ‘সোলার/নন-সোলার এলইডি স্ট্রিটলাইট প্রোগ্রাম ইন সিটি করপোরেশন’ নামের আরেকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বদলে যাবে চট্টগ্রাম নগর।

ক্লিন ও গ্রিন সিটিগ্রিন সিটি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফুটপাতকে অনেক জায়গায় নান্দনিক করা হয়েছে। আগে যেসব এলাকার ফুটপাতে দুর্গন্ধের জন্য হাঁটা যেত না, এখন সেখানে দেখা মিলছে সবুজের। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে নৌকার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে। আউটার স্টেডিয়ামের একাংশে দৃষ্টিনন্দন সুইমিং পুল করা হয়েছে। জাতিসংঘ পার্ক সংস্কার করা হয়েছে।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আমি রাজনীতি করছি নগরবাসীর কল্যাণের লক্ষ্যে। কিছু পাওয়ার জন্য মেয়র হইনি, দেওয়ার জন্য এসেছি। আল্লাহ আমাকে অনেক দিয়েছেন। অসহায়দের কল্যাণে আমার সম্মানীর টাকা ব্যয় হচ্ছে- এটা আমার জন্য আনন্দের। আমি সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভেতরে থেকেই দায়িত্ব পালন করতে চাই।

আ জ ম নাছির উদ্দীন স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে জড়িত হন। ১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ও নগর ছাত্রলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮০ ও ১৯৮২ সালে নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হন। তিনি পর পর দুইবার মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন। রাজনীতির বাইরে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক ফোরামের সভাপতি।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০২০
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।