মাস্ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নগরে ধুলা-বালুময় পরিবেশে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা থাকে। এসব থেকে বাঁচতেই তারা মাস্ক পড়ছেন।
চট্টগ্রাম: চীনসহ বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাস আতঙ্কে নগরে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। ভাইরাসজনিত রোগটি প্রতিরোধের প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে গণপরিবহণের মতো জনাকীর্ণ পরিবেশে অনেককেই মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
মাস্ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, নগরে ধুলা-বালুময় পরিবেশে ভাইরাসজনিত বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা থাকে। এসব থেকে বাঁচতেই তারা মাস্ক পড়ছেন।
নগরের বিভিন্ন রুটে চলা গণপরিবহণের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাস আতঙ্কে তারা মাস্ক ব্যবহার করছেন। যদিও দেশে এখনও এই ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলেনি। তবুও আগাম সতর্কতা হিসেবে সবাই সঙ্গে রাখছেন প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি। পাশাপাশি শিশুদের ঘর থেকে বাইরে নিতে অভিভাবকরা বাধ্য হয়েই মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন।
একইভাবে নগরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীকেও মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, সন্তানদের সুস্থতার কথা ভেবে মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছি। তাছাড়া বছরজুড়ে সড়কে ধুলা-বালুর দাপট থাকে। এজন্য মাস্ক ব্যবহার একপ্রকার বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে।
ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায় মাস্ক বিক্রেতা জসিম উদ্দিন বলেন, শীতকালে বৃষ্টি না থাকায় ধুলা বেশি থাকে রাস্তায়। তাই এসময় মাস্ক ভালো বিক্রি হয়। এখন শোনা যাচ্ছে, চীনে ভাইরাসে মানুষ মারা যাচ্ছে। তাই সবাই মাস্ক কিনছে। ৫ থেকে ১০ টাকায় বিক্রি হয় কাপড়ের তৈরি মাস্ক।
জানা গেছে, চীনে করোনা ভাইরাস ছড়ানোয় গত এক সপ্তাহে মাস্ক বিক্রি দ্বিগুণ বেড়েছে। নগরের হকার্স মার্কেট সহ বিভিন্ন দোকান ও ফুটপাতে এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানীরা বিক্রি করছেন মাস্ক।
কোন ধরনের মাস্ক বিক্রি হচ্ছে এমন প্রশ্নে কয়েকটি ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতারা বলেন, ফার্মেসিভেদে ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী বাজারে ১০ টাকা থেকে শুরু করে সাড়ে ৩ হাজার টাকা দামের মাস্কও রয়েছে। এসবের মধ্যে সার্জিক্যাল মাস্ক, ফিল্টার মাস্ক, রেসপিরেটর হিসেবে তৈরি ফেস মাস্ক ছাড়াও একটানা তিন-চারদিন ব্যবহার উপযোগী এন ৯৫ মাস্ক, পি ৯৫ মাস্ক, এন ৯৯, এন ১০০, এয়ার পিউরিফিকেশন মাস্ক ও রেসপ্রো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে।
ডিস্পোজেবল নন ওভেন ফ্যাব্রিক মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা, কটন মাস্ক ১২০ টাকা, স্পঞ্জ অ্যান্টি ডাস্ট মাস্ক ৫০ টাকা, এন ৯৫ (৮২১০) মাস্ক ২৫০ টাকা, এন ৯৫ (৮১১০এস) ১৮০ টাকা, পিএম-২.৫ মাউথ মাস্ক ১২০ টাকা, সাওমি এয়ারপপ থ্রি-সিক্সটি ডিগ্রি অ্যান্টি ফগ মাস্ক ৩৫০ টাকা, সাওমি স্মার্টলি ফিল্টার মাস্ক ৪৫০ টাকা এবং সাওমি পিএম-২.৫ লাইট ওয়েট মাস্ক বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭৫০ টাকায়।
ফার্মেসি ও অনলাইন শপিংয়ে বেশি দামে এসব মাস্ক বিক্রি করতে দেখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনো মাস্ক টানা কয়েকদিন ব্যবহার করলে তা উল্টো আরও ঝুঁকি বাড়াতে পারে। অপরিষ্কার ওই মাস্কই হয়ে উঠতে পারে জীবাণুর বাসা। সার্জিক্যাল মাস্ক সাধারণত একদিন এবং গেঞ্জি বা সুতি কাপড়ের তৈরি মাস্ক প্রতিদিন ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে ফেলতে হবে, তারপর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। সাবান ও গরম পানি দিয়ে নিয়মিত হাত ধুলে জীবাণু থাকার ঝুঁকি কমবে।
চায়না জিয়াংঝু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওয়াজিহা দৃষ্টি বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচতে এন ৯৫ রেসপিরেটরি মাস্ক অধিক কার্যকরী। সেটি পাওয়া না গেলে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
চসিক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন বাংলানিউজকে বলেন, করোনা সহ সকল প্রকার ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) থেকে জামালখান ওয়ার্ডে বিশেষভাবে সংগ্রহ করে আনা মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছি। সকালে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে মাস্ক পরিয়ে শুরু করা হয় কার্যক্রম। ওয়ার্ডের প্রত্যেক বাসায় ৫টি করে মাস্ক এবং প্রতিটি স্কুল-কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য মাস্ক বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২০
এসএস/এসি/টিসি