তিনি বলেছেন, পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করায় আমরা খুশি। বিষয়টি এখন মীমাংসিত হয়ে গেছে।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই জানায়, সালমান শাহকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। ঢাকায় পিবিআইয়ের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য আসার পর চট্টগ্রামে সাংবাদিকদের দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় সালমানের শ্বশুর এসব কথা বলেন।
শফিকুল হক হীরা বলেন, আমরা জানতাম ও (সামিরা) কোনো কিছুতে ইনভলব ছিলো না। সুতরাং এতোদিন যা হয়েছে, শুধু সময়ক্ষেপন করা হয়েছে। ২৪ বছর পর আজকে প্রমাণিত হয়েছে সালমান আত্মহত্যা করেছে। এতেই আমরা খুশি। এ জন্য পিবিআইকে ধন্যবাদ জানাই।
>>> ‘সালমান শাহ ইস্যুতে বিচারের রায় দেবেন আদালত, পিবিআই নয়’
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নিজ বাসা থেকে চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহ’র মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সে সময় এ নিয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা করেন সালমানের বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।
এরপর ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ এনে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করার আবেদন জানান তিনি। আবেদনের প্রেক্ষিতে অপমৃত্যুর মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে (অপরাধ তদন্ত বিভাগ) নির্দেশ দেন আদালত।
তদন্তের পর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিবেদনটি গৃহীত হয়।
কিন্তু সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা করেন। ফলে ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছরে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।
>>> সালমানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে যা বলেছিলেন শাবনূর
২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। ওই প্রতিবেদনেও সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহ’র মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের উপর নারাজির আবেদন করেন তিনি।
নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহ’র হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন।
পরে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। কিন্তু র্যাবের তদন্ত চলাকালে বেশ কয়েকবার শুনানি নিয়ে ২০১৬ সালের ১৯ মে মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা বিব্রত প্রকাশ করে ঢাকার ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে মামলার নথি পাঠিয়ে দেন।
এ আদালতের বিচারক মো. ইমরুল কায়েস ওই বছরের ২১ আগস্ট র্যাবের মাধ্যমে পুনঃতদন্তের (অধিকতর) আদেশ আইনসম্মত হয়নি উল্লেখ করে বিষয়টি আবারও শুনানি নেওয়ার জন্য সিএমএম আদালতকে দায়িত্ব দেন।
এর ধারাবাহিকতায় ওই আদালতের বিচারক লস্কর সোহেল রানা নারাজি আবেদনের ওপর আবারও শুনানি করেন। পরে ৭ ডিসেম্বর শুনানির পর সালমান শাহ’র মৃত্যুর ঘটনা হত্যা না আত্মহত্যা— তা তদন্ত করতে পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সর্বশেষ গত ২ ফেব্রুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন প্রতিবেদন দাখিল না করে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় সময় চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত আগামী ৩০ মার্চ তারিখে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ নিয়ে সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার জানান, নায়ক সালমান শাহকে হত্যা করা হয়নি। সহশিল্পী ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে তার সম্পর্কের জের ধরে পারিবারিক কলহের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
এমআর/টিসি