ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

স্বামী হারিয়ে বিবর্ণ ঈদ কাটালেন চবি উপাচার্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২, ২০২০
স্বামী হারিয়ে বিবর্ণ ঈদ কাটালেন চবি উপাচার্য উপাচার্য শিরীণ আখতার ও তার স্বামী মো. লতিফুল আলম চৌধুরী

চট্টগ্রাম: ঈদুল ফিতরেও যে পরিবারটিতে ছিল আনন্দ ও উৎফুল্লতা। দুই মাস ঘুরতেই স্বামী শূন্য সেই পরিবারের ঈদুল আযহা যেন হয়ে উঠেছে বিবর্ণ।

স্বামীর শূণ্যতায় ঈদের দিন স্ত্রী যেমন চোখের জলে ভেসেছেন তেমনি পিতার জন্য কেঁদেছেন দুই সন্তান। বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের পরিবারের কথা।
 


গত মঙ্গলবার অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের স্বামী মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) লতিফুল আলম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তারপর থেকেই পরিবারটিতে নেমে আসে শোকের ছায়া। পরিবারের বটবৃক্ষের মৃত্যুতে ভেঙ্গে পড়েন উপাচার্যসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা। তাই অন্যবারের মত এবারের ঈদ ছিল না তাদের কাছে।


প্রতিবছর ঈদে লতিফুল আলম নামাজে যাওয়ার আগে জায়নামাজ, নতুন কাপড় আর তসবি নিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন স্ত্রী। নামাজ শেষে বাসায় ফিরে পরিবারের সকল সদস্যদের  বসে এক সঙ্গে খাবার খেতেন। এবার ঈদে সবাই আছে নেই শুধু সেই মানুষটি।


গত ১১ জুলাই উপাচার্য শিরীণ আখতার, তার স্বামী মো. লতিফুল আলম চৌধুরী, মেয়ে এবং তিন নাতনিসহ পরিবারের সাত সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়। পরে ১৩ জুলাই রাতে উপাচার্য, তার স্বামী ও মেয়ে রিফাত মোস্তফা সিএমএইচে ভর্তি হন। পরবর্তীতে ১ সপ্তাহ পর লতিফুল করোনামুক্ত হলেও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।


অসুস্থতার পরও পরিবার-আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছে ছিল লতিফুল ইসলামের। রোববার (২ আগস্ট) দুপুরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের মেয়ে রিফাত মোস্তফা টিনার সাথে কথা হয়।  


তিনি বাংলানিউজকে জানান, গতকাল শনিবার  ফজরের নামাজের পর ছয়টা পর্যন্ত আব্বুর জন্য কান্না করেছে আম্মু। আব্বুর খুব ইচ্ছে ছিল কুরবানি করবে ছেলে মেয়ের সাথে। প্রতি ঈদে নামাজ শেষ করে আব্বু এলে সালাম করে খেতে বসতাম। এবার আব্বু নেই, বাসায় তেমন কিছু রান্না হয়নি। বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু রান্না হয়েছে। কথা বলতে গিয়ে যেন গলা ধরে আসছিল রিফাত মোস্তফার।


তিনি আরও বলেন, আব্বুকে দেখতে ভাইয়া মালোশিয়া থেকে আসার পরে, আব্বু ভাইকে বাসায় ঈদ করবে বলেছিলেন। আমি বছরের একটা ঈদ আব্বু-আম্মুর সাথে করি। তিনি নাতি নাতনিদের খুব আদর করতেন। তারা আব্বুর আদর যত্নে বড় হয়েছে। আমার সন্তানরাও তাদের নানুকে খুঁজছে।  


বাবার চলে যাওয়ায় তার মা অধ্যাপক শিরীণ আখতার অনেকটা ভেঙ্গে  পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আম্মাকে সব বিষয়ে সাহস যোগাতেন আব্বা। করোনার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে ভাল রাখতে আম্মাকে কাজ করতে উৎসাহ দিয়েছেন। আম্মাও করোনার প্রথম থেকে সব রকম সহায়তা নিয়ে কর্মচারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় কাজ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার একটি ল্যাব স্থাপনের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের উন্নয়নে কাজ করেছেন।


করোনা সংকটে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। এরপরেও মা দিন-রাত কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দিয়েছেন ১কোটি টাকা। স্বামী ঘর থেকে বের না হলেও শিরীণ আখতার বের হতেন কাজের প্রয়োজনে। এভাবেই শিরীণ আখতারের সংস্পর্শে তার স্বামী আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২০
এমএম/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।