ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অলস বড় জাহাজের একদিনে ক্ষতি ১০ হাজার ডলারের বেশি 

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
অলস বড় জাহাজের একদিনে ক্ষতি ১০ হাজার ডলারের বেশি  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বিদেশ থেকে গম, সার, তেল, পাথর, ক্লিংকার ইত্যাদি খোলাপণ্য (বাল্ক) নিয়ে আসা মাদার ভ্যাসেল হিসেবে পরিচিত বড় বড় জাহাজ অলস বসে আছে সাগরে। বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মবিরতির কারণে এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হচ্ছে না।

শুধু খালাস নয় সারা দেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন, লোড-আনলোডও বন্ধ রয়েছে। আড়াই হাজারের বেশি লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকার, বাল্ক হেড অপেক্ষমাণ চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা বন্দরের আশপাশের নদীতে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরীর বাংলানিউজকে বলেন, একটি মাদার ভ্যাসেল একদিন অলস বসে থাকা মানে ১০-১৫ হাজার ডলার বাড়তি খরচ। বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় শুধু নয়, মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা উচিত।

সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে গম, ভুট্টা, ডাল, সার, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, ভোজ্যতেল ইত্যাদি খোলাপণ্য বড় কার্গো জাহাজে আমদানি করা হয়। কর্ণফুলী নদীর ড্রাফট কম থাকায় এসব বড় জাহাজ সরাসরি জেটিতে ভিড়তে পারে না। তাই বহির্নোঙরে (সাগরে) অপেক্ষমাণ রেখে ছোট ছোট জাহাজে (লাইটার, ট্যাংকার) খালাস করে নদীপথে বিভিন্ন নদীবন্দর ও শিল্পকারখানার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় বিভিন্ন শিল্পকারখানার কাঁচামাল এবং বাল্কে আনা ভোগ্যপণ্য পরিবহন কার্যত বন্ধ রয়েছে।  

শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) চিঠিতে দিয়েছেন।

চেম্বার সভাপতি বলেন, সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা থেকে নৌযান শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। লাইটারেজ জাহাজ চলাচল না করায় সারাদেশে এসব কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজট নতুনভাবে সংকট তৈরি করছে। জাহাজের টার্ন অ্যারাউন্ড টাইম বৃদ্ধি এবং ডেমারেজ চার্জসহ পণ্য আমদানি-রফতানি ব্যয় বাড়বে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং সাধারণ ভোক্তাদের অতিরিক্ত মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনতে হবে। বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাসের এ সময়ে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ আরো চাপের মুখে পড়বে।

অর্থনীতির গতিধারা পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা নতুন করে অস্তিত্বের সংকটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।   

চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ ধরনের ধর্মঘট অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকর। এতে করে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। ফলে বাজার অস্থিতিশীল হবে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে যাবে যা সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক উভয় পরিসরে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।  

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘটে আমদানিকারক, শিপিং এজেন্ট, শিল্পোদ্যোক্তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তা বা সাধারণ মানুষের ওপরই আসছে। নদীপথে যেসব কারখানায় কাঁচামাল নেওয়া হয় সে সব কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন, সাপ্লাই চেন স্বাভাবিক রাখা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমদানিকারক ও শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে।

বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী আলম বাংলানিউজকে বলেন, ১৯ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে আমাদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাই নৌযান শ্রমিকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কঠোর কর্মবিরতি পালন করছে। দাবি মেনে নিলে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

সূত্র জানায়, কর্মবিরতির শুরুতে কিছু লাইটার জাহাজ চলাচল বা পণ্যখালাসের চেষ্টা করলেও আশপাশের লাইটার জাহাজের শ্রমিকরা জোর করে কাজ বন্ধ করে দেন। এতে আতঙ্কিত হয়ে ব্যক্তিমালিকানীন ও বড় শিল্পগ্রুপের মিলে আড়াই হাজার লাইটার, ট্যাংকার, বাল্কহেড অলস বসে আছে। শুধু যাত্রীবাহী নৌযান কর্মবিরতির বাইরে রাখা হয়েছে।  

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, সোমবার (১৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে আমাদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। আমরা সরকারি বিভিন্ন সংস্থা, জাহাজ মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন ঢাকায় ত্রিপাক্ষিক আলোচনা করেছি। তিন-চারটি বড় শিল্পগ্রুপ নৌযান শ্রমিকদের খোরাকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দাবি আদায়ে ফলপ্রসূ আলোচনা ও যথাযথ চুক্তি সম্পাদন হলেই নৌযান শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। নয়তো অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে জানান, বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ চলাচল না করলেও বন্দরের মূল জেটি জিসিবি, সিসিটি, এনসিটি, রিভারমুরিং, ডলফিন অয়েল জেটি ও স্পেশাল বার্থে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং এবং বন্দর থেকে লরি, ট্রাক, কাভার্ডভ্যানে পণ্য ও কনটেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক রয়েছে।

ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন লাইটার জাহাজগুলো ডব্লিউটিসি থেকে সিরিয়াল নিলেও কর্মবিরতির কারণে কোনো বুকিং নেই।  

সীকম গ্রুপ ও প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা, যুগোপযোগী প্যাকেজ, প্রণোদনা, বেসরকারি উদ্যোক্তাদের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান ভালো পজিশনে রয়েছে। কিন্তু কখনো পণ্যবাহী গাড়ি, কখনো পণ্যবাহী নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি, ধর্মঘটের কারণে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা হুমকির মুখে পড়ছে। এর পেছনে কোনো কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র, ইন্ধন আছে কিনা তা খুঁজে দেখতে হবে। এভাবে চললে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০২০
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।