ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভূমিধসের শঙ্কা: ঝুঁকিপূর্ণদের সরাতে পাহাড়ে অভিযান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
ভূমিধসের শঙ্কা: ঝুঁকিপূর্ণদের সরাতে পাহাড়ে অভিযান

চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে অতিভারী বৃষ্টিতে ভূমিধসের শঙ্কায় নগরের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা লোকজনকে সরিয়ে নিতে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা প্রশাসন।

শুক্রবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর থেকে শুরু হওয়া এই অভিযানে জেলা প্রশাসনের ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পাহাড় থেকে ২৬০টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছেন তারা।

কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বেলা আড়াইটা থেকে কাট্টলী সার্কেলের ফয়েজ লেক সংলগ্ন ঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি বসতি থেকে প্রায় ১০০ পরিবারকে সরিয়ে দেন।

এর মধ্যে ৩০টি পরিবার জেলা প্রশাসনের চালু করা ফিরোজ শাহ পি-ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা আশপাশের আত্মীয়-স্বজনের বাসায় চলে গেছেন।  

বাকলিয়া ও আগ্রাবাদ সার্কেলের মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা থেকে লোকজনকে সরাতে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাকলিয়া সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল হাসান এবং আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সামাদ শিকদার।

তারা পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় এই দুই পাহাড়ে ‘মৃত্যুঝুঁকি’ নিয়ে বসবাস করা লোকজনকে সরিয়ে দেন। এর মধ্যে ৫০টি পরিবার জেলা প্রশাসনের চালু করা লালখান বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। বাকিরা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় চলে গেছেন।  

চান্দগাঁও সার্কেলের পাহাড়ি এলাকা রৌফাবাদ, আমিন জুট মিল, ট্যাংকির পাহাড়, বন গবেষণা ইনিস্টিউট সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্ব দেন চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামনুন আহমেদ অনীক। তিনি এসব এলাকায় বসবাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় সরিয়ে দেন।

এর আগে ‘মৃত্যুঝুঁকি’ নিয়ে পাহাড়ে বাস করা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বৃহস্পতিবার মাইকিংয়ের পাশাপাশি তাদের জন্য নগরের বিভিন্ন এলাকায় ১৫টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

এর মধ্যে কাট্টলী সার্কেলের অধীনে পাহাড়তলী, ফয়’স লেক, আকবর শাহ, কৈবল্যধাম, খুলশী, জালালাবাদ, চন্দ্রনগর এলাকায় ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। আগ্রাবাদ সার্কেলের অধীনে লালখান বাজার, পোড়া কলোনী এবং একে খান পাহাড় এলাকায় ৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়।

এছাড়া চান্দগাঁও সার্কেলের অধীনে আমিন জুট মিল সংলগ্ন পাহাড়, ভেড়া ফকিরের পাহাড়, ট্যাংকির পাহাড় এলাকার জন্য রৌফাবাদ রশিদিয়া মাদ্রাসাকে এবং বাকলিয়া সার্কেলের অধীনে মতিঝর্ণা, বাটালি হিল এলাকার জন্য ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তুত করা হয়।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এসএম জাকারিয়া বাংলানিউজকে জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরের বিভিন্ন পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করা ২৬০টি পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  

তিনি জানান, এর মধ্যে ১৮০টি পরিবার তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছে এবং ৮০টি পরিবার জেলা প্রশাসনের চালু করা আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজনকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

‘লোকজনকে পাহাড় থেকে সরে যেতে মাইকিংয়ের পাশাপাশি আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান অব্যাহত রেখেছেন। ভারী বৃষ্টিতে ভূমিধস হলে একজন লোকও যাতে প্রাণ না হারান, সে জন্য কাজ করছি আমরা। ’ যোগ করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এই কর্মকর্তা।

এদিকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে।  পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ও পূর্বাভাস কর্মকর্তা সেখ ফরিদ আহমেদ এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো বাতাসের সাথে মাঝারি থেকে ভারী এবং কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাতাস দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ দিক থেকে ঘণ্টায় ১৫-২০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে। যা অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়া আকারে ৪০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।   এ অবস্থায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad