ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফুলের ব্যবসায় ভাটা, বাড়ছে প্লাস্টিক ফুল আমদানি

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২০
ফুলের ব্যবসায় ভাটা, বাড়ছে প্লাস্টিক ফুল আমদানি ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রভাবে মন্দা যাচ্ছে ফুলের ব্যবসায়। স্বাভাবিক সময়ের মতো বিয়ে নেই, অনুষ্ঠান-আয়োজন-উৎসব নেই, জৌলুস নেই।

তাই ফুলের কদর ও বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। এমনকি মহান বিজয় দিবসেও নেই হাঁকডাক, কর্মচাঞ্চল্য আর বেচাকেনা।

ফলে হতাশ ফুলচাষিরা ঝুঁকছেন সবজিসহ অন্যান্য ফসলের আবাদে। সরবরাহ কমছে দেশি ফুলের। এ সুযোগে কমদামি প্লাস্টিক ফুল ও আমদানি করা রকমারি বিদেশি ফুলের দখলে যাচ্ছে দেশি ফুলের বাজার।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ফুলের বড় বিপণিকেন্দ্র চেরাগি মোড়, মোমিন রোডের ফুল ব্যবসায়ীরা এসব তথ্য জানান।

চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জসিম বাংলানিউজকে বলেন, চেরাগি-মোমিন রোডে ৫৬টি ফুলের দোকান আছে। যেখানে পাইকারি খুচরা ফুল বিক্রি হয়। গত বছর বিজয় দিবসের সঙ্গে এবারের তুলনা করলে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে বেচাকেনা। করোনা গ্রাস করেছে ফুলের ব্যবসা। স্থায়ী কর্মচারী, কারিগর, ব্যাংক ঋণ, ধার দেনা নিয়ে বেহাল অবস্থা আমাদের।

অপরাজিতা, অতিথি, সানফ্লাওয়ার, কাশফুল, স্টার, রেডরোজ, হেভেনস, সিলসিলাসহ বাহারি নামের ফুলের দোকানে বিজয় দিবসের জন্য কিছু ফুলের রিং তৈরি করতে দেখা গেলেও তাড়া ছিল না কারিগরদের। দুইহাতে ফুলের কাজ করলেও চোখে মুখে উদ্বেগ, হতাশা আর অজানা শঙ্কা। অন্যান্যবার এ সময়টাতে দম ফেলার ফুরসত মিলতো না তাদের।  

সর্বনিম্ন ৩০০-৪০০ টাকায় ফুলের রিং মিলছে। ২ বাই ২, ৩ বাই ৫, ৩ বাই ৩ ফুটের রিং পাওয়া যায়। ৩ বাই ৩ ফুটের একটি ফুলের রিং বানাচ্ছিলেন মো. নাসির হোসেন। তিনি বলেন, ২৫০টি হলুদ গাঁদা, ১০০ লাল গোলাপ আর ২০০ চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে এটি বানাচ্ছি। ৭০০ টাকা দর হয়েছে এটির।  

পাঁচ বছর ধরে ফুলের দোকানে কাজ করছেন জানিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিজয় দিবসে তিন ফুট বাই তিন ফুটের ২টা ফুলের রিংয়ের অর্ডার পেয়েছি মাত্র। ৭০০ টাকায় দিয়ে দিচ্ছি। মালিকের লাভ দূরে থাক, আমাদের খোরাকিও উঠবে না।

তিনি জানান, পহেলা বৈশাখসহ বছরে ৫-৭ দিন ফুলের চাহিদা বেশি থাকতো। এরপর বিয়েশাদি, সামাজিক অনুষ্ঠানে ফুল বিক্রি হতো সারা বছর। করোনা সব শেষ করে দিয়েছে। লকডাউন গেল। চাষিরা পুঁজি হারালো। ফুলের কারিগররা বেকার হলো। দোকান মালিকরা অনেকে ব্যবসা ছাড়লো, কেউ কেউ ব্যবসা পরিবর্তন করলো।

একজন ফুলের দোকানি বলেন, সামনে থার্টিফার্স্ট নাইটে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, ভালোবাসা দিবসেও ব্যবসা হবে কিনা জানি না। এখন হাতেগোনা কিছু বিয়ে, সামাজিক অনুষ্ঠান, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুবার্ষিকী এসবে ফুল বিক্রি হচ্ছে।  

আরেকজন দোকানি বলেন, ফুল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নয়, শখের জিনিস। তাও পচনশীল পণ্য। করোনায় মার্চ থেকে জুলাই একপ্রকার বন্ধ ছিল ব্যবসা। চাষির বিনিয়োগ করা অর্থ জলে গেছে। উৎপাদিত ফুল জমিতেই পচেছে। লাখ লাখ টাকা লোকসান। এখন তারা ফুল চাষের চেয়ে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। তার ওপর কৃত্রিম ফুল বাজার দখল করছে। হরেক প্রজাতির বিদেশি ফুল আমদানি হচ্ছে। সব মিলে অস্থির অবস্থা, অশনি সংকেত।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০২০
এআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।