চট্টগ্রাম: কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা রাসেল পরিচয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরী আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি তার স্ত্রী, শিক্ষিকা ইশরাত জাহান চৌধুরীর। রোববার ( ১১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্যাংক কর্মকর্তার আত্মহনের নেপথ্যে দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি।
ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, ২০১৮ সালের মে মাসে স্বামীকে পাঁচলাইশের এমএম টাওয়ারে নিয়ে যায় সৈয়দ সাকিন সাঈম উদ্দীন। সেখানে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন, আমাকে বেঁধে ১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত দাবি করে জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে সই নেওয়া হয়েছিল।
তিনি বলেন, পাওনার অতিরিক্ত অর্থ পাওয়ার পরও জামানত হিসেবে দেওয়া চেকগুলো ফেরত না দিয়ে আপস ও আলোচনার কথা বলে গত ২০১৯ সালে ২৭ সেপ্টেম্বর সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দীন অস্ত্রের মুখে ৮৪টি চেকে জোরপূর্বক সই নিয়ে নেন। ছয়টি অলিখিত ও স্বাক্ষরিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প রয়েছে তাদের কাছে।
ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, অত্যাচার-নির্যাতন থেকে চিরমুক্তি পেতে স্বামী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। হুমকিদাতাদের অর্থবিত্ত এবং রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে আমরা চরম অসহায়। আমি ও মেয়ের জীবন ও মানইজ্জত নিয়ে চরম শঙ্কিত রয়েছি। প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে স্বামীর আত্মহননের জন্য দায়ী ব্যক্তি ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীর আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীদের বিচার দাবি করছি।
লিখিত বক্তব্যে মা নুর নাহার বলেন, ছেলে পাওনা টাকা আদায় করে দেওয়ার পর আরও বেশি টাকা দিয়েছে। কিন্তু আরও টাকার জন্য মামলার আসামিরা যখন তখন হুমকি, ভয় ভীতির মাধ্যমে মানসিক নির্যাতন করে আমার ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে। আমি সন্তান হত্যার বিচার চাই। যাদের প্ররোচনায় আমার সন্তান আত্মহত্যা করেছে মানবতার মা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পুত্রহারা মা হিসেবে আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইশরাত জাহান চৌধুরী বলেন, এখনো পর্যন্ত মামলা করার পর রাজনৈতিক কোনো চাপ নেই। তবুও শঙ্কার মধ্যে রয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছি। পাওনার ৬ কোটি টাকা পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বুধবার (৭ এপ্রিল ) ভোরে নগরের পাচঁলাইশ থানার মিমি সুপার মার্কেট সংলগ্ন হিলভিউ আবাসিক এলাকায় নাহার ভবনের ৬ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নগরের পূর্ব মাদারবাড়ীর বাসিন্দা আব্দুল মৌমিন চৌধুরীর ছেলে আব্দুল মোরশেদ চৌধুরী। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যার ঘটনায় ৪ জনকে আসামি করে স্ত্রী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন- মধ্যম হালিশর মাইজপাড়ার আলী সওদারগরের বাড়ির ইসহাক মিয়ার ছেলে জাবেদ ইকবাল ও পারভেজ ইকবাল, পাঁচলাইশ এমএম প্যালেসের সৈয়দ মো. আবু মহসিনের ছেলে নাইম উদ্দিন সাকিব ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২১
এমএম/টিসি