ঢাকা, শনিবার, ০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নগর পরিকল্পনাবিদসহ জনবল সংকটে ধুঁকছে চসিকের পরিকল্পনা বিভাগ

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
নগর পরিকল্পনাবিদসহ জনবল সংকটে ধুঁকছে চসিকের পরিকল্পনা বিভাগ সৌন্দর্যবর্ধনের বেহাল দশা।

চট্টগ্রাম: টবে লাগানো চারা মরে গেছে। যেগুলো বেঁচে আছে তা-ও ধুলোবালিতে বিবর্ণ।

মাটি ফেটে চৌচির। নতুন চারা রোপণ, পানি ছিটানোসহ পরিচর্যার ছাপ নেই।
সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ পরিণত হয়েছে সৌন্দর্য বিনাশের কেন্দ্রে।      

লালখান বাজার মোড় থেকে হেঁটে টাইগারপাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কার্যালয়ে যাওয়ার পথে এমন চিত্র দেখে মন খারাপ হবে যে কারও। শুধু এখানে নয়, পুরো নগরজুড়েই সৌন্দর্যবর্ধনে ভাটা পড়েছে। নতুন উদ্যোগ দূরে থাক যেগুলো আছে সেগুলোতেই পরিচর্যা বা যত্নের ছাপ নেই। নেই তদারকিও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চসিকের নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান একেএম রেজাউল করিম ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর অবসর গ্রহণের পর, সহকারী স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমরকে নগর পরিকল্পনাবিদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় গত ১৪ জানুয়ারি থেকে। নগর পরিকল্পনা বিভাগে বর্তমানে অস্থায়ী তিনজন কর্মকর্তা রয়েছেন। বাকি দুইজন হলেন- সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন আলী চৌধুরী। এর বাইরে অস্থায়ী ভিত্তিতে আছেন ১ জন বাগান পরিদর্শক, ২ জন সুপারভাইজার,  ২ জন বাগান কেয়ারটেকার, ১ জন সার্ভেয়ার, ১ জন ব্লু প্রিন্ট ও ফটোকপিয়ার মেশিন অপারেটর, ১ জন অটোক্যাড অপারেটর, ১ জন অফিস সহকারী, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে ৭৯ জন মালী, ৩ জন অন্যান্য কর্মচারী। সব মিলে ৯৫ জন।

চসিকের নতুন অর্গানোগ্রামে নগর পরিকল্পনা বিভাগের জন্য ১৫৫ জনের প্রস্তাবনা রয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম গ্রেডের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ, ব্যক্তিগত সহকারী, অফিস সহায়ক, নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, অর্থনীতিবিদ, পরিবেশবিদ, সমাজতাত্ত্বিক, গবেষণা কর্মকর্তা, সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ (জিএসআই), সহকারী স্থপতি (ল্যান্ডস্ক্যাপ), অটোক্যাড অপারেটর, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক, ফটোকপিয়ার অপারেটর, অফিস সহায়ক, বাগান কর্মকর্তা, বাগান পরিদর্শক, ফোরম্যান, বাগান সুপারভাইজার, কম্পিউটার অপারেটর, মালী, কেয়ারটেকার, নিরাপত্তা প্রহরী, বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা, পরিদর্শক, সুপারভাইজার ইত্যাদি পদ রয়েছে।       

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নগর পরিকল্পনা বিষয়ে ডিগ্রিধারী কিংবা সরকার নির্ধারিত শর্ত পূরণ করেন এমন নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ না দেওয়া ও জনবল সংকটে ধুঁকছে চসিকের এ বিভাগটি।  

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নগর পরিকল্পনা  বিভাগ একটি শহরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে নগর পরিকল্পনা সংক্রান্ত কোনো ডিগ্রি না থাকা ব্যক্তিকে কীভাবে দায়িত্ব দেওয়া হলো? আর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরকে বাসযোগ্য ও পরিকল্পিত শহর গড়তে হলে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দক্ষ কোনো নগর পরিকল্পনাবিদকে নিয়োগ দিতে হবে।  

সূত্র জানায়, দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে চসিকের মালী হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ জন হিসাবের খাতায় থাকলেও বাস্তবে মাঠে খুঁজে পাওয়া যায় না। সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত একজন মালী কাজ করার বিনিময়ে ৩৫৫ টাকা মজুরি নেন। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে এবং সঠিক নির্দেশনা ও তদারকি না থাকায় মালীদের কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।

নগর পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- সৌন্দর্যবর্ধন, বনায়ন ও ল্যান্ডস্ক্যাপ, বস্তি উন্নয়ন, নকশা প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং জিআইএস ম্যাপিং। বস্তি উন্নয়নের আওতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) সহযোগিতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প, দারিদ্র হ্রাসকরণ প্রকল্প, ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম, ইউনিসেফের শিশু বিষয়ক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। রুটিন কাজের মধ্যে লালদীঘি পার্ক, জাতিসংঘ পার্ক, ঠাণ্ডাছড়ি পার্ক, বুদ্ধিজীবী সৌধ, বিমানবন্দর সড়কসহ নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ডিভাইডার, সড়কদ্বীপ ইত্যাদির সৌন্দর্যবর্ধন রয়েছে এ বিভাগের অধীনে।  

ডিগ্রি ছাড়াই নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্বে থাকা প্রসঙ্গে স্থপতি আবদুল্লাহ আল ওমর বাংলানিউজকে বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এটি আমি পালন করছি। নগর পরিকল্পনাবিদ নিয়োগ দেওয়া হলে তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে- আমি নগর পরিকল্পনার বিষয়ে ডিগ্রি অর্জনের জন্য স্টাডি শুরু করেছি।  

মালীদের দায়িত্ব তদারকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওরা কাজ করে। সুপারভাইজার তদারক করেন। আমি মাঝেমধ্যে সারপ্রাইজ ভিজিটে গিয়ে তদারক করি। ওদের মজুরি দেওয়া হয় নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে। এখানে কারও নয়ছয় করার সুযোগ নেই। সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়ে ৪৪টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চসিকের চুক্তি রয়েছে। কিছু কাজের পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন।    

যোগাযোগ করলে চসিক মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, চসিকের নগর পরিকল্পনা বিভাগকে ঢেলে সাজানো, জনবল সংকট নিরসনের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করব আমরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২১
এআর/টিসি  

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।