চট্টগ্রাম: রেলওয়ে স্টেশন, বুধবার (২৮ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫টা। কুলিদের কেউ শুয়ে আছেন ফুটপাতে, আবার কেউ বসে আছেন মাথায় হাত দিয়ে।
তাদেরই একজন ৭৫ বছর বয়সী সিরাজ মিয়া। দুই ছেলে ও চার মেয়ের সংসারে স্বামী-স্ত্রীসহ আটজন। বাড়ি দক্ষিণ হাতিয়া। পাকিস্তান আমলে রেলওয়ে স্টেশনে কুলির কাজ শুরু করেন। লকডাউনের আগে দৈনিক আয় হতো ৪০০-৫০০ টাকা। করোনার কারণে ট্রেন বন্ধ থাকায় আয়ের একমাত্র পথটিও বন্ধ। এখন স্টেশনের পাশেই বসে থাকেন। কেউ কিছু দিলে খান, না দিলে হাত পাততে হয়।
সিরাজ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বড় ছেলে কাজ করতেন গাড়ির সহকারী হিসেবে। গাড়ি বন্ধ তাই সে-ও এখন বাড়িতে। কীভাবে সেহেরি আর ইফতার করবো সে চিন্তায় যেন মাথাব্যথা করছে। প্রতিদিনই একই চিন্তা। কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম। আর কত ধার করা যায়? এভাবে চলতে থাকলে গ্রামে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। সেখানে গেলেও কী কাজ করে সংসার চালাবো সে চিন্তায় হাঁপিয়ে উঠি।
২০ বছর আগে কুমিল্লার লাকসাম থেকে আসা মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, পরিবারের কাছে ইফতারি কী নিয়ে যাবো সে চিন্তায় স্টেশনে এসে বসে আছি। অনেকেই এসে ইফতার বিতরণ করেন সেখান থেকে নিয়ে যাই। পরিবারের সবাই ভাগ করে খাই। আরেকজন থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিলাম সেগুলো দিয়ে সেহেরির জন্য বাজার করেছি। এভাবেই চলছে সংসার।
সিরাজ মিয়া কিংবা মোহাম্মদ আলীই নন, রেলওয়ে স্টেশনে কাজ করা প্রায় ৫০ জন কুলির দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। অভাবের কারণে অনেকেই শহর ছেড়েছেন। আবার কেউ শহর ছাড়ার পথে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজ বাংলানিউজকে বলেন, যখন যাত্রীবাহী ট্রেন চালু ছিল তখন তাদের একটা ন্যূনতম আয় ছিল। যেটা দিয়ে তারা সংসার চালাত। কঠোর লকডাউনে ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তারা কারো কাছে চাইতেও পারছে না। মাঝে মধ্যে কেউ দিলে খায়, না হয় দেনা করে চলতে হয়।
স্টেশন মাস্টার জাফর আলম বাংলানিউজকে বলেন, রেলওয়ে থেকে অনুমতি নিয়ে তারা কাজ করত। যাত্রীদের মালামাল বহন করে তারা যে টাকা আয় করত সেটা দিয়েই সংসার চালাত। এখন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাদের আয়ের উৎসও বন্ধ। টানাপোড়েনের মধ্যে যাচ্ছে তাদের দিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০২১
এমএম/টিসি