চট্টগ্রাম: মাদকের মামলায় ৬ বছর সাজার আদেশ হয়েছিল হাসিনা আক্তারের। তার জায়গায় ১ বছর সাড়ে ৪ মাস ধরে সেই সাজা খাটছেন হাছিনা বেগম।
কারাগারে থাকা হাছিনা বেগমের অপরাধীর তালিকায় নাম নেই।
আদালত সূত্র জানায়, কর্ণফুলী থানার ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারের পর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা ২৮(২)১৭, জি.আর মামলা নম্বর ৫৭/১৭ ও দায়রা মামলা ৩৬৩৭/১২ হয়। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হাসিনা আক্তার ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে কারাগারে যান। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে একই বছর ২৭ নভেম্বর জামিন নেন। ২০১৯ সালের ১ জুলাই চট্টগ্রাম অতিরিক্ত মহানগর ৫ম আদালতের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী রায়ে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
আদালতে হাছিনা বেগমের প্রতিবেদন দেওয়া টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মো. খোরশেদ আলম বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে সাজা পরোয়ানা মূলে কারাগারে থাকা হাসিনা বেগম পূর্বে গ্রেফতার হওয়া হাসিনা আক্তার এক নয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান কারাগারে থাকা হাছিনা বেগমের স্বামী পালাতক থাকায় পূর্ণাঙ্গভাবে তদন্ত করা যায়নি। ঐ এলাকায় হাসিনা আক্তার নামে কারও অস্তিত্ব নেই।
এদিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, প্রকৃত আসামি হাসিনা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০১৭ থেকে প্রায় ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। সাজা হওয়ার পর ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে হাছিনা বেগম কারাগারে আসেন। কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই। মূল আসামি হাসিনা আক্তারের ছোট একটা ছেলে ও একটা মেয়ে ছিল কারাগারে থাকার সময়।
বিনা অপরাধে কারাগারে সাজাভোগ করা হাছিনা বেগমের ছেলে শামীম নেওয়াজ বাংলানিউজকে জানান, আমাদের দুই বোন এক ভাইয়ের সুন্দর পরিবার। আমাদের এলাকায় আমার মা পানের দোকানের আয় দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন। এক রাতে হঠাৎ করে টেকনাফ থানা পুলিশ বাড়ি থেকে মাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। মায়ের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মামলা কখনো ছিল না। এরপর থেকে গত ১ এক বছর সাড়ে ৪ মাস যাবত কারাগারে। আমি ও বড় বোন মানুষের বাড়িতে কাজ করি। ছোট বোন নানির কাছে থাকে।
তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে কারাগারে মা অসুস্থ। কয়েকদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। মায়ের সঙ্গে কথা হয়, মা বার বার মুক্তির বিষয়ে কথা বলেন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় মায়ের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারিনি। অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ স্যারের সঙ্গে এক ভাইয়ের মাধ্যমে যোগাযোগের পরে মাকে মুক্ত করার জন্য আদালতে এসেছি। স্যার মায়ের মুক্তির জন্য ফ্রি আইনি সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বাংলানিউজকে জানান, হাছিনা বেগম মামলার প্রকৃত সাজাপ্রাপ্ত আসামি নয় টেকনাফ থানার প্রতিবেদনে দিয়েছে। হাছিনা বেগমকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেয়ার আবেদন করা হয়েছে। রোববার (২ মে) চট্টগ্রাম মহানগর চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে শুনানি করা হয়েছে। আদালত আদেশের জন্য রেখেছেন।
নাম বিভ্রাটে নিরপরাধের কারাবরণ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, যেকোনো অপরাধীকে গ্রেফতার সময় তিনি প্রকৃত অপরাধী কি-না সেটা ক্রসচেক করে নেওয়া পুলিশ ও আদালতের দায়িত্ব। এতে নিরাপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হলে বা জেল খাটলে সেটা ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে যে পুলিশ কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারণে নিরাপরাধ ব্যক্তি জেলে গেলেও তার কোনো বিচার হচ্ছে না বলেই এসব ঘটনা দেশে বার বার ঘটছে। ভুল প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আদালতের উচিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু সেটা করতে দেখা যায় না।
>> এক নারীর সাজা খাটছেন অন্য নারী!
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২১
এমএম/টিসি