ঢাকা, শনিবার, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ শাবান ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বৃদ্ধ পিতাকে হত্যার চেষ্টা, প্রতারণা করে জামিন নিলো আসামি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২১
বৃদ্ধ পিতাকে হত্যার চেষ্টা, প্রতারণা করে জামিন নিলো আসামি ...

চট্টগ্রাম: ৭৭ বছরের পিতাকে গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা চেষ্টা মামলায় আসামি ছেলে মো. হাসান জামিন নিতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন বাদী। মামলার বাদী পিতা মো. লোকমানের সঙ্গে আসামি পক্ষের আপোষ হয় মর্মে মিথ্যা তথ্য দেন আদালতের কাছে।

এছাড়া কার্যতালিকায় ওই মামলা নম্বর না থাকলেও করা হয়েছে জামিন শুনানি।  

সোমবার (১৭ মে) ওই মামলার জামিন শুনানি হলেও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম আঞ্জুমান আরা স্বাক্ষরে ১৬ মে প্রকাশ করা ভার্চুয়াল কোর্টের শুনানির তালিকায় সেই মামলাটি ছিল না।

ফলে আসামি পক্ষ প্রতারণার আশ্রয় নিলেও বাদীপক্ষের আইনজীবী বিষয়টি জানতে পারেন নি। কিন্তু বাদী মো. লোকমান আসামি মো. হাসানকে মঙ্গলবার (১৮ মে) দুপুরে বাড়িতে দেখে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে আসামিপক্ষের প্রতারণার বিষয়টি জানা যায়।  

ভার্চুয়াল শুনানির তালিকায় মামলার নম্বর না থাকলেও শুনানির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের জিআরও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. মকসুদ বাংলানিউজকে বলেন, তালিকায় মামলার নম্বর নেই সেটি বাদীর আইনজীবী মঙ্গলবার আমাকে জানানোর পর জানতে পেরেছি। হয়তো তালিকায় ভুলে বাদ পড়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের কোর্ট পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে জানান, আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানির জন্য তালিকা প্রস্তুত করার পর একজন বিজ্ঞ বিচারক তা স্বাক্ষর করেন। আমরা শুধু সহায়তা করি। তালিকায় কোনো অসঙ্গতি থাকলে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের সঙ্গে আলাপ করুন।

তবে আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৬ মে এই তালিকা প্রস্তুত করে বিচারকের কাছে উপস্থাপন করেন ওইদিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আনোয়ারার থানার জিআরও এএসআই এনামুল।  

লোহাগাড়ার জিআরও মো. মকসুদ বাংলানিউজকে বলেন, ওইদিন যিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি বা কম্পিউটার অপারেটর হয়তো ভুলে মামলার নম্বরটি তালিকায় তুলেননি।  

আদালত সূত্রে জানা যায়, আসামিপক্ষ জামিনের আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে জামিন শুনানি হয়। আদালত শুনানি শেষে আসামি মো. হাসানকে ৫০০ টাকার বন্ডে ২ জন জিম্মাদারের জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন।  

আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেন, বাদী মো. লোকমানের সঙ্গে আসামিপক্ষের আপোষ হয়েছে।  আর এ মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে আসামিপক্ষ জামিন নেন বলে অভিযোগ বাদীপক্ষের।  

বাদীপক্ষের আইনজীবী মামুনুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ১৭ মে তারিখের জন্য ১৬ মে বিকেলে প্রকাশ করা ভার্চুয়াল আদালতে শুনানির জন্য নির্ধারিত তালিকায় মামলাটির নম্বর ছিল না। আমার মক্কেলের লোহাগাড়া থানার মামলা নম্বর: ৭(০৫)২০২১। তালিকায় না থাকায় আমরা ভার্চুয়াল আদালতে জুম অ্যাপে জয়েন করিনি। এই সুযোগে আদালতের কাছে আপোষের ভুয়া তথ্য দিয়ে আসামিপক্ষ জামিন নেন।  

আসামির জামিন আবেদনে উল্লেখ করা আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নিজেকে আইনজীবী নন বলে দাবি করেন। তিনি নিজেকে একজন রিকশাচালক হিসেবে উল্লেখ করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবীর চৌধুরী বাংলানিউজকে, বিষয়টি শুনে মনে হলো এখানে কোনো না কোনো অনিয়ম হয়েছে। অনিয়ম হতে পারে সংশ্লিষ্ট জিআরও অফিস থেকে বা যারা তালিকা প্রণয়নের কাজ করেছেন তাদের কাছ থেকে। তবে আপোষের যে বিষয়টি উল্লেখ করে জামিন চাওয়া হয়েছে সেটি গর্হিত কাজ। বাদী যেহেতু আপোষ করেননি বলেছেন তাই এই মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন আদায় অপরাধের শামিল।

গত ৪ মে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের হাদুর পাহাড়া এলাকায় বাড়ির উঠানে কাজ করার সময় বৃদ্ধ বাবা-মাকে মারধর করে হত্যার চেষ্টা করেন মো. হাসান। এ সময় বাবা-মাকে বাঁচাতে আসলে বোনকেও মারধর করেন হাসান ও তার স্ত্রী। এ ঘটনায় লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে ৭৭ বছর বয়সী মো. লোকমান লোহাগাড়া থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত মো. হাসানকে গ্রেফতার করে। বাদী মো. লোকমানকে হাসানের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিয়ে আসছে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি। এ ঘটনায় গত ১৭ মে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লোহাগাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেন ৭৭ বছর বয়সী মো. লোকমান।

ভুক্তভোগী মো. লোকমান বাংলানিউজকে জানান, আমি আসামির সঙ্গে কোনো আপোষ করিনি। আমার আইনজীবীর সঙ্গেও তারা কোনো যোগাযোগ করেননি। মঙ্গলবার আসামি বাড়িতে আসলে তার জামিনের বিষয়টি জানতে পারি। আমার সঙ্গে আপোষ না করেও মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন নিয়েছে আসামি মো. হাসান।  

মো. লোকমান আরও জানান, হাসান এর আগেও একাধিকবার তাদের মারধর করেছে। স্থানীয়ভাবে শালিস বিচার হলেও তা তোয়াক্কা না করে বার বার মারধর করে এসেছে। হাসানের স্ত্রী নাসিমাও তাদের মারধর করেন।  

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএইচএম জিয়াউদ্দীন বাংলানিউজকে জানান, তালিকায় না থাকলে শুনানি করার কোনো সুযোগ নেই। আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে যদি কোনো আইনজীবী আসামির জামিন নেন তাহলে তার বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নিব। ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০২১
এমএম/টিসি
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।