চট্টগ্রাম: ‘নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বাজেটে নানামুখী প্রস্তাবনার সঠিক বাস্তবায়ন হলে, দেশের নারীর অগ্রযাত্রায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে এবং মহামারি করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তারা পুনরুজ্জীবিত হবে। ’
বৃহস্পতিবার (৩ জুন) তাৎক্ষণিক বাজেট প্রতিক্রিয়ায় চিটাগাং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিডব্লিউসিসিআই) সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী একথা বলেন।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০ লাখ টাকা করা, সিএমএসএমই খাতে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা- বাজেটের ইতিবাচক দিক। দরিদ্র নারীদের ক্ষুদ্র বিমার আওতায় আনার প্রস্তাব তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ১৯১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব নারীদের জন্য প্রস্তাবিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। স্বল্প শিক্ষিত দরিদ্র ও অসহায় নারীদের আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ ও আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ অবশ্যই প্রসংশনীয়। নারীদের জন্য ঢাকায় কমিউনিটি নার্সিং ডিগ্রি কলেজ স্থাপন, তৃণমূল পর্যায়ে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী উদ্যোক্তাদের বিকাশ সাধন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে পিছিয়ে পড়া নারীর উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি। তবে নারী উদ্যোক্তাদের একটি বড় খাত হচ্ছে বিউটি পার্লার ব্যবসা। যেখানে উদ্যোক্তা, কর্মী ও সেবা গ্রহীতা প্রায় সবাই নারী। এছাড়াও পিছিয়ে পড়া আদিবাসী নারীরাও এ ব্যবসায় সরাসরি সম্পৃক্ত। এ খাতে সেবার মূল্য বৃদ্ধির ফলে মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত নারী উদ্যোক্তা পূনরায় হুমকির মুখে পড়বে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক মহামারির এ কঠিন সময়ে প্রস্তাবিত বাজেট অত্যন্ত সাহসী ও সময়োপযোগী। পর পর দুই ধাপে মহামারির কারণে দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিল ঠিক সেই মুহূর্তে বর্তমান সরকারের ঘোষিত বাজেট দেশের মানুষকে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাল।
নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে এ ধরনের সময়োপযোগী বাজেট প্রণয়ন করায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে অভিনন্দন জানান তিনি।
মহামারি মোকাবেলায় ও স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, তবে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার বাইরের জেলাগুলোতে শিশু ও নবজাতক, নারী ও মাতৃস্বাস্থ্য, অনকোলজি, ওয়েল্ডিং ও প্রিভেনটিভ মেডিসিন ইউনিট থাকা সাপেক্ষে ন্যূনতম ২৫০ শয্যার সাধারণ হাসপাতাল এবং ২০০ শষ্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপনে ১০ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতির প্রস্তাব দেশের স্বাস্থ্য-খাতকে তৃণমূল পর্যায়ে পুনর্গঠন করতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি মহামারিতে ভেঙেপড়া শিক্ষা-খাতকে পুনরুজ্জ্বীবিত করবে।
কৃষি-পল্লী উন্নয়ন এবং কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে মহামারির এ দুঃসময়ে দেশের খাদ্য-নিরাপত্তার ঝুঁকি কমবে। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা খাত, যোগাযোগ ও অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির ফলে সাধারণ জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটবে এবং মানুষের জীবন থেকে অনিশ্চয়তা লাঘব হবে। মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতার উন্নয়ন ঘটবে। বাজেটে চাল, ডাল, চিনি, লবণ, গরুর দুধ, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, পাট ও তাঁতপণ্য, বোতলজাত পানি ইত্যাদির মূল্য কমানোর প্রস্তাব সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের নিশ্চয়তায় এক ধাপ এগিয়ে যাবে। বিড়ি-সিগারেটের মূল্যবৃদ্ধি দেশের সাধারণ জনগণকে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে উৎসাহিত করবে। প্লাস্টিক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে সাধারন জনগণের ওপর কিছুটা চাপ বাড়বে। বিশেষ করে প্রস্তাবিত বাজেটে ২ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট বাস্তবায়নকেহুমকির মুখে ফেলবে।
বাজেটে আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়ন এবং ক্ষুদ্র শিল্পে তাদের চলমান অংশগ্রহণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে আলাদাভাবে প্রকল্প গ্রহণের প্রস্তাব করেন মনোয়ার হাকিম আলী।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০২১
এআর/টিসি