ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র, গ্রেফতার ২

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২১
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র, গ্রেফতার ২ ...

চট্টগ্রাম: দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের দোকানের টাকা লেনদেনের হিসাব বই ভিডিও করে প্রতারক চক্রের সদস্যরা। কোনো ব্যক্তি বিকাশে টাকা পাঠালে সঙ্গে সঙ্গে টাকার পরিমাণ, প্রেরক ও প্রাপকের মোবাইল নম্বর ভিডিও করে নিয়ে দ্রুত চক্রের অন্য সদস্যের হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেয় তারা।

গ্রাহকের কাছে ফোন করে তথ্য হালনাগাদ, প্রলোভন ও  অসুবিধার  কথা বলে পিন, সিকিউরিটি বা ভেরিফিকেশন কোড নিয়ে নিচ্ছে তারা।  

মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপকে কেন্দ্র করে প্রতারণার নানা পদ্ধতি বের করেছে তারা।

এরপর গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা নিজেদের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করছে প্রতারকরা। সেই টাকাগুলো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্যাশ করে প্রতারকরা। এই রকম প্রতারক চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগ। তারা হলেন- মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার দারিয়াপুর ইউনিয়নের গোয়ালদাহ এলাকার শিশির কুমার বালার ছেলে মিঠুন কুমার বালা (২৬) ও একই থানার নাকোল ইউনিয়নের রায়নগর এলাকার মৃত আলীম মোল্লার ছেলে হামিদুল মোল্লা (২২)।

সোমবার ( ১৪ জুন) সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মাদ সালাম কবির এ তথ্য জানান।  

জানা গেছে, প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারকরা এমনভাবে ফাঁদ পাতে যে, গ্রাহক কিছু বুঝে ওঠার আগেই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। অনেক সময় 'এসএমএস' দিয়ে ব্যালান্স যোগ হওয়াসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে সরাসরি টাকা চাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি 'হেল্পলাইন' থেকে ফোন করে অ্যাকাউন্ট হালনাগাদ, নতুন অফার চালুসহ নানা প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহককে দিয়ে কয়েকটি 'বাটন' চাপিয়ে কৌশলে টাকা স্থানান্তর করে নেওয়া হচ্ছে অন্য অ্যাকাউন্টে। গ্রাহককে দিয়ে কিছু নম্বর চেপে মোবাইল ফোনের সিম ডাইভার্ট করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। প্রতারণার আরও নানা কৌশল অবলম্বন করে প্রতারকচক্র।  

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র আসিফ ইসতিয়াক বাংলানিউজকে জানান, আব্বু ৬ হাজার টাকা পাঠানোর কিছুক্ষণের মধ্যে মোবাইল ফোনে ইংরেজিতে 'বিকাশ' শিরোনামের এক বার্তায় বলা হয়, তার অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। কিছুক্ষণ পর একটি নম্বর থেকে ফোন করে বলা হয়, 'ভুলে আপনার অ্যাকাউন্টে ৬ হাজার টাকা চলে গেছে। ' আকুতি জানিয়ে টাকাটা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি তা ফেরত দেন। পরে যাচাই করে দেখেন, তার অ্যাকাউন্টে তার আব্বু ৬ হাজার টাকা পাঠিয়ে ছিল। পরে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারণার শিকার হয়েছেন। পরে নম্বরটি আর খোলা পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, আমার বাসায় স্ত্রী লটারি পেয়েছে। বাসায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে জানালে আমি বলেছি লটারি বা অফার জেতার নামে প্রতারণা হয়েছে। একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে বলা হবে, ওই নম্বরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠালে ১ মিনিটের মধ্যেই ফিরতি ম্যাসেজে লটারির বড় অঙ্কের টাকা আসবে। মূলত এভাবে টাকা পাঠানোর পর ওই নম্বর আর চালু পাওয়া যাবে না।  

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানে এজেন্টদের দোকান ঘুরে হামিদুল মোল্লা নম্বর সংগ্রহ করেছিল। নম্বর ভিডিও করে তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায় আরেক সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে মোবাইল ব্যাংকিং কর্মকর্তার পরিচয়ে ফোন করে ভেরিফিকেশন কোড চেয়ে নেওয়া হয়। ওই  কোড দিয়েই অ্যাপে ঢুকে পিন নম্বর পরিবর্তনের আবেদন জানায় প্রতারকচক্র। নতুন পিন নম্বর সৃষ্টি করে অ্যাকাউন্টের সব টাকা সরিয়ে নেয় তারা। হামিদকে একটি ভিডিওর জন্য ১০০ টাকা করে দিত চক্রটি। চক্রটির টাকা ক্যাশও করতেন হামিদ। হামিদ মাগুরা জেলা থেকে কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী ও গত ছয় দিন চট্টগ্রামে অবস্থান করে বিভিন্ন স্থানে এজেন্টদের দোকান ঘুরে নম্বর সংগ্রহ করেছিল। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানায় একাধিক প্রতারক চক্র রয়েছে। প্রতারক চক্রের ১৩৫ জনের মতো সদস্য হবে। তারা কোনো কাজ কর্ম না করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ফাঁদ পেতে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কাজ করে। দৈনিক একাধিক মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হয়।  

সিএমপি মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মাদ সালাম কবির জানান, গ্রেফতার দুইজন অপরাপর ব্যক্তিদের সহযোগিতায় বিভিন্ন কৌশলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। ​ চক্রের সদস্যরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন বিকাশের দোকানে টাকা বিকাশ করার কথা বলে অবস্থান নেয়। প্রতারক চক্রের সদস্যরা স্মার্টফোনের ক্যামেরা অন করে বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকানে গিয়ে সুকৌশলে লেনদেন বইয়ের ভিডিও ধারণ করে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। একপর্যায়ে বিকাশের খাতার ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে চক্রের সদস্যদের কাছে এলাকা উল্লেখ করে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ভিডিও দেখে বিভিন্ন গ্রাহকদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে বিকাশ কর্মকর্তা সেজে সেসব নাম্বারে ফোন করে কৌশলে পিন নম্বর সংগ্রহ করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ আত্মসাৎ ও  খুব কৌশলে তারা প্রতারণা করে থাকে। এভাবে হাতিয়ে নেওয়া টাকা বিভিন্ন হাতবদল করে ক্যাশ আউট করে, ফলে প্রতারকদের অবস্থান শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি-দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বাংলানিউজকে জানান, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। কিন্তু টাকার পরিমাণ অল্প হলে পুলিশের কাছে মানুষ অভিযোগ করে না। বর্তমানে নানাভাবে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ বাড়ছে।  প্রতিনিয়ত এসব প্রতারকদের আইনের আওতায় নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে দোকানের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবের খাতার কেউ যাতে ভিডিও বা ছবি তুলতে না পারে সেদিকে দোকানিদের নজর ও গ্রাহককে সতর্ক হতে হবে।

মহানগর গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপপুলিশ পরিদর্শক মুহাম্মদ উসমান গনি বাংলানিউজকে জানান, মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানাধীন গোয়ালদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের অ্যাপকে কেন্দ্র করে প্রতারক চক্রের মূলহোতা মিঠুন কুমার বালাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার তথ্য মতে চক্রের অন্য সদস্য হামিদুল মোল্লাকে ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড আবেদনও করা হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২১
এমএম/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।