চট্টগ্রাম: চিরকুমার কবি অরুণ দাশগুপ্ত জীবন সায়াহ্নে এসে এখন অসুস্থ অবস্থায় পটিয়ার ধলঘাট গ্রামের বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন।
নব্বই ছুঁইছুঁই এই সাংবাদিক দৈনিক আজাদীর প্রয়াত সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের হাত ধরে ১৯৭৩ সালে যোগ দেন দৈনিক আজাদীতে।
১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি ধলঘাট গ্রামে জমিদার যশোদা নন্দন ওয়াদ্দেদার (দাশগুপ্ত) এর পুত্র অবিনাশ ওয়াদ্দেদারের ঔরসে জন্ম অরুণ দাশগুপ্ত’র। কবিতা, চিত্রকলা, ছোটগল্প, সঙ্গীত ক্ষেত্রে তাঁর অবাধ বিচরণ। পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। অরুণ দাশগুপ্ত রচিত ও প্রকাশিত গ্রন্থাবলী ‘রবীন্দ্রনাথের ছয় ঋতুর গান ও অন্যান্য’, ‘নবীনচন্দ্র সেন’, ‘কবিতা চিন্তা ও অন্যান্য প্রবন্ধ’, কবিতার বই ‘খাণ্ডবদাহন’।
ধলঘাট স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়। সেখানে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করেন তিনি। দেশমাতৃকার টানে ফিরে আসেন চট্টগ্রামে। ততদিনে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পথে। হাতছাড়া হয়ে গেছে বিপুল সম্পদ। এসময় মিরসরাইয়ের এক গ্রামে প্রতিষ্ঠিত উচ্চ বিদ্যালয়ে তিনি নিলেন শিক্ষকতার চাকরি। এরপর ফটিকছড়ির নারায়ণহাট স্কুলে। অবশেষে সব ছেড়ে আসেন সাংবাদিকতায়।
কবির সর্বশেষ অবস্থা জানিয়ে লেখক রবিন ঘোষ বলেন, অরুণ দাশগুপ্ত কখনো ভাবেননি পূর্বপুরুষের সম্পদ নিয়ে। কিছু দান করেছেন, কিছু হাতছাড়া হয়েছে নানা কারণে। এখন নিজের বাড়িতেই আছেন। নারায়ণ দে নামের এক ভদ্রলোক ও তার পরিবার পিতৃতুল্য কবিকে দেখভাল করছেন। আমরা কি পারি না গুরুতর অসুস্থ ৮৬ বছরের অরুণ দাশগুপ্তের পাশে দাঁড়াতে?
কবি ও নাট্যকার অভীক ওসমান বলেন, অরুণ দাশগুপ্ত এনায়েতবাজার মহিলা কলেজের পাশে কেশব সেনের নীচতলার ঘরটিতে থাকতেন। সেখানে চট্টগ্রামের শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিপ্রেমীদের আড্ডা জমতো। ‘কল্যাণী’র আড্ডার কথা বেশ মনে রয়েছে। কল্যাণী সেন অপর্ণা চরণের অ্যাসিটেন্ট হেড মিস্ট্রেস, টাঙ্গাইল নিবাসী চট্টগ্রামের প্রথম সিভিল সার্জন ডা. কেশব সেনের কন্যা। সেখানে ‘বুধ সন্ধ্যা’ আড্ডা বিখ্যাত ছিল। অরুণ দাশগুপ্ত আড্ডায় তরুণদের অধিকতর লেখার জন্য উৎসাহ দিতেন। চট্টগ্রামে তথা বাংলাদেশে অনেক লেখক গড়ে তুলেছে আজাদী। তার পেছনের কারিগর অরুণ দাশগুপ্ত। শান্তিনিকেতন অরুণ দাশগুপ্ত’র চাক্ষুষ অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করেছে।
অভীক ওসমান বলেন, একসময় অরুণ দাশগুপ্ত এনায়েত বাজার বাসভবন থেকে মিনতির বাসায় রহমতগঞ্জস্থ যোগেশ ভবনে গেলেন। যোগেশ ভবন সংস্কার কার্যক্রম শুরু হলে তিনি সংশ্লিষ্ট পেছনের গলিতে অন্য বিল্ডিংয়ের ওপর থাকতেন। সবসময় সুতি খাদি কাপড় পড়তেন। চিরকুমার বলতেন, ‘ধোবে কে? সেজন্য বস্ত্র পরিধান করি। ’ সর্বশেষ শুনেছিলাম তিনি হাসপাতালে। কল্যাণী এখন অট্টালিকা, যোগেশ ভবন হাইরাইজ বিল্ডিং। এই নগরে তার উপকারভোগী অনেকে রক্তীয় আত্মীয়-স্বজন আছেন। কলকাতায় থাকলে তার মর্যাদা হতো, ঢাকায় থাকলে প্রচার পেতেন, পদক পেতেন। এখন ধলঘাটে একা পড়ে রয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০২১
এসি/টিসি