চট্টগ্রাম: ‘সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না, প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসুন’ স্লোগানে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্মরণ অনুষ্ঠান থেকে সিআরবিতে শহীদের স্মৃতির ওপর হাসপাতাল করতে দেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদসহ পেশাজীবীরা।
সিআরবিতে প্রস্তাবিত হাসপাতালের প্রকল্প এলাকায় শতবর্ষী রেইন ট্রিতে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রবের নামফলক স্থাপনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়।
কর্মসূচিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে দুঃসাহসী যে কাজটি তা হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, তা করে ফেলেছেন।
আশাকরি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এ প্রকল্প এখান থেকে সরিয়ে নেবেন। বড়লোকের প্রস্তাবিত হাসপাতাল চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের কোনো কাজে আসবে না। চট্টগ্রামের মেয়র আর সিডিএ চেয়ারম্যান বলছেন তারা এখানে হাসপাতাল চান না। তারপরও কত বড় সিন্ডিকেট যে এখানে হাসপাতাল করতে চায়। দুদককে বলব রেলের কারা এ কাজ করছে তাদের খোঁজ নিন। রেল কারো বাবার সম্পত্তি না। এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরো জোরদার করতে হবে। যতদিন প্রকল্প বাতিলের ঘোষণা না হবে ততদিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য গণমঞ্চ তৈরি করুন। বীর মুক্তিযোদ্ধারা এ আন্দোলনের সঙ্গে আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো বয়স নেই। এদেশের মাটিতে লাখো মুক্তিযোদ্ধা ঘুমিয়ে আছেন। তাই এ মাটি এত প্রতিবাদী। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। হাসপাতালের নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বানানোর চেষ্টা যারা করছেন তারা ভুল করছেন। আজকের কোনো কোনো রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য, মন্ত্রীদের দেশপ্রেমে ঘাটতি আছে বলেই আমলারা তাদের ঘিরে ফেলেছে। রাজনীতিবিদদের উচিত মানুষের কথা শোনা। শহীদের রক্তে রঞ্জিত মাটি নিয়ে যারা ব্যবসা করতে চান এটা বাংলাদেশের চেতনার বিরুদ্ধে অবস্থান। প্রধানমন্ত্রী অদম্য নেত্রী। তিনি চট্টগ্রাম নিয়ে ভাবেন। নিশ্চয় উনার কাছে এত দিনে এ বার্তা পৌঁছে গেছে। আশাকরি তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত দেবেন। আর যেই রাজনীতিবিদরা ইনিয়ে বিনিয়ে হাসপাতালের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন তারা অপকর্ম করছেন। এর প্রায়শ্চিত্ত তাদের এ জীবনেই করতে হবে। পূর্ব রেলের জিএম যে বক্তব্য দিয়েছেন তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। রেল কারো পৈতৃক সম্পত্তি না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে প্রতারণা করলে জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না।
কবি কামরুল হাসান বাদল বলেন, রেলের জমি সংরক্ষণ করার কথা রেল কর্তৃপক্ষের। উল্টো তারাই সে জমি দিয়ে দিচ্ছে আর আমাদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি এখানে কোনো হাসপাতাল হবে না। কেউ বলছে শিরীষতলায় হবে না গোয়ালপাড়ায় হবে। তাদের চিহ্নিত করে রাখুন। এরাই দেশের শীর্ষজনকে ভুল বুঝিয়ে এ প্রকল্প নিয়েছেন। তারা গণশত্রু। টাকা খেয়ে তারা এ কাজ করছে। শেষ কথা এখানে আমরা কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দেব না।
আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মনসুর বলেন, এখানে শহীদের কবর। পূর্বসূরিদের স্মৃতির জায়গা। একাত্তরের পরাজিত শক্তির মতো কিছু উচ্চাভিলাসী আজ চক্রান্ত করছে। তারা রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত করে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার করে। সিআরবিতে যে হাসপাতালের পরিকল্পনা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশকে পরিচালিত করছেন। উনার সুশাসনকে কলঙ্কিত করার জন্য প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা কিছু ষড়যন্ত্রকারী আমলা এ রেলের সরকারি জায়গায় বেসরকারি হাসপাতাল প্রকল্পের দুঃসাহস দেখিয়েছে। প্রাইভেট হাসপাতালকে রেলের দামি জমি কেন দেবেন? আমরা অনেক জীবন দিয়েছি। আর জীবন দেব না। আমরা সংগ্রাম করে দাবি আদায় করব। রেলের জমিতে, শহীদের স্মৃতির জমিতে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল হতে দেব না।
পিপল’স ভয়েসের সভাপতি শরীফ চৌহান বলেন, এ মাটি শহীদের স্মৃতিধন্য। এ সিআরবিতে অনেকে শহীদ হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধে। রেলের অনেক শ্রমিক কর্মচারী মুক্তিযুদ্ধে জীবন দিয়েছেন। সেই স্মৃতি সংরক্ষণে রেল উদ্যোগ নেয়নি। অথচ শহীদের কবর, শহীদের নামে কলোনি, শহীদের নামে যে সড়ক সেই জমি তারা বেসরকারি হাসপাতালকে বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা বলতে চাই এ সিআরবিতে কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা আমরা চাই না। এমনকি এখন যে একটি রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে সেটি কেন এখানে থাকবে? রেল আয় করতে নাকি জমি লিজ দিচ্ছে। তারা আগে নিজেদের লোকসান কমাক। কেন তাদের লোকসান হয় তা বের করুক। কী দুর্নীতির কারণে রেল লাভ করতে পারে না সেটার অনুসন্ধান করুক। আমাদের এক কথা এখানে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল করতে দেব না।
বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাঈনুদ্দিন দুলাল ও খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মোরশেদুল আলম চৌধুরী।
উপস্থিত ছিলেন খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী রূপক চৌধুরী, সাংবাদিক ও শিল্পী আলোকময় তলাপত্র, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ঋত্বিক নয়ন, কারিতাসের শ্যামল মজুমদার, শিক্ষিকা মাগ্রেট মনিকা জিন্স, শেখ বিবি কাউসার, সংগঠক বনবিহারী চক্রবর্তী, সাংবাদিক উজ্জ্বল ধর, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, যুব সংগঠক রুবেল দাশ প্রিন্স, যুব মৈত্রীর খোকন মিয়া, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাদাত নবী খোকা, প্রকৌশলী অমিত ধর, সাংবাদিক পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, সাংবাদিক আমিন মুন্না, তাপস দে ও নিউটন দাশ। প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন নারায়ণ দাশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ ঘন্টা, জুলাই ১৮, ২০২১
এআর/টিসি