ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সিআরবিতে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন

সোহেল সরওয়ার, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৫, ২০২১
সিআরবিতে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: কংক্রিটের শহরে এক টুকরো অরণ্য সিআরবি (সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং) ঘিরেই। এখানে আছে ১৯৭ প্রজাতির উদ্ভিদ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন।

প্রাণভরে শ্বাস নিতে এবং একটু সময় কাটাতে নগরবাসী বেছে নেন এই এলাকাকে।

সিআরবি রেলওয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন জমি ও রেলওয়ে হাসপাতাল কলোনির ৬ একর জমি সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) প্রকল্পের আওতায় ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ কোম্পানিকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ১০০ আসনের মেডিক্যাল কলেজ ও ৫০ আসনের নার্সিং ইনস্টিটিউট নির্মাণের জন্য।

এই খবরে সিআরবির ঐতিহ্য নষ্ট না করার দাবিতে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সিআরবি তার ঐতিহ্য হারাবে বলে মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ডরিফরম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) সরকারের কাছে পাঠানো লিগ্যাল নোটিশে দাবি জানিয়েছে, পরিবেশের গুরুত্ব অনুধাবন করে শতবর্ষী গাছ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য এলাকাটিকে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ‘বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা’, জাতীয় ঐতিহ্য, স্মারক বৃক্ষ এবং কুঞ্জ বন ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহ্যগত স্থান ঘোষণা এবং শতবর্ষী গাছগুলোকে স্মারক বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণার।

সিআরবির শতবর্ষী শিরীষ তলায় প্রতি বছর আয়োজন করা হয় বাংলা বর্ষবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানের। এসময় বসে বলিখেলার আসর ও মেলা। অন্যান্য সময় ছোটো মাঠে খেলতে আসে শিশু-কিশোররা। বিনোদনপ্রেমীরা এসে আড্ডা দেয়।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান অপিনিয়নের (ইকো) উদ্যাগে পরিচালিত গবেষণায় সিআরবিতে ১৯৭টি উদ্ভিদ প্রজাতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বড় গাছ ৭৪ প্রজাতির ও মাঝারি গাছ ৩৭ প্রজাতির, গুল্ম প্রজাতি ৬৭টি এবং লতা জাতীয় উদ্ভিদ ১৪ প্রজাতির। বিপন্নপ্রায় ৯টি প্রজাতির গাছও আছে এখানে।

সিআরবিতে ঔষধি গাছ মস, টোনা, অর্জুন, লজ্জাবতী, আপাং, নিশিন্দা, টগর, সজিনা, দেবকাঞ্চন ও মাটিসুন্দার, বিলুপ্তপ্রায় দুধকুরুস, বাঁকা গুলঞ্চ, সোনাতলা, গুলঞ্চ, সর্পগন্ধা, বকুল, পিতরাজ, দুরন্ত-এর দেখা মিলেছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ ওমর ফারুক রাসেল জানান, সিআরবির বৃক্ষরাজি সংরক্ষণ করা না হলে ভবিষ্যতে অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শতবর্ষী রেইনট্রিগুলোতে অনেক ধরনের পরগাছা, যেমন: ছত্রাক, শৈবাল, অর্কিড ও পরজীবীর বসবাস। এসব প্রজাতির সংখ্যা দেড়শতাধিক হবে। এছাড়া সিআরবি ব্যাঙ, সাপ ও পাখির বিচরণ ক্ষেত্র।

সিআরবিতে আছে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রফিকের তৎকালীন কমান্ড অফিস কাঠের বাংলো, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চাকসু) জিএস শহীদ আবদুর রবের সমাধি, শহীদ শেখ নজির আহাম্মদের সমাধি, শহীদ এম এ মনোয়ার হোসেন, বিমল সিং, ফখরুল আলম, মো. সিরাজউদ্দিন, আলী নূর চৌধুরী, মহিউদ্দিন, নুরন্নবী চৌধুরী ও গঙ্গারামের স্মৃতিস্তম্ভ।

হাসপাতাল হলে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের এই স্মৃতিচিহ্নও হারিয়ে যাবে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না। শহীদ আবদুর রব কলোনিতে শহীদদের কবরসহ নানা স্মৃতির ওপর হাসপাতাল করতে দেওয়া যাবে না।  

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০২১
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।