চট্টগ্রাম: ১১টি ভৌত ও রাসায়নিক প্যারামিটারে দেশের মিঠা পানির প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদার পানির গুণগত মান স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন হালদা গবেষক ড. সফিকুল ইসলাম।
শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দিনভর হালদায় সরেজমিনে পরিদর্শন, পাঁচটি পয়েন্ট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ ও নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা শেষ করেন তিনি।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে বাংলানিউজকে পরীক্ষালব্ধ ফলাফল জানান। এতে হালদা আর কর্ণফুলীর সংযোগ অংশের কাছাকাছি মদুনাঘাট অংশে পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ সামান্য কম থাকলেও তা আশঙ্কাজনক নয় বলে মন্তব্য করেছেন ড. সফিকুল।
তিনি হালদা নদী ও বোয়ালিয়া খালের পানি এবং প্লাংকটন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ডক্টর অব ফিলোসফি (পিএইচডি) ডিগ্রি অর্জন করেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভায় এই ডিগ্রীর অনুমোদন দেওয়া হয়।
ড. সফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে জীববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। সর্বশেষ ২৪ সেপ্টেম্বর রাশিয়ান অ্যাকোয়াটিক বায়োরিসোর্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে হালদার ফাইটোপ্লাংকটন নিয়ে তার একটি একক গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়।
এ বিষয়ে তিনি জানান, একটি জলজ বাস্তুসংস্থানের জন্য ফাইটোপ্লাংকটন (উদ্ভিদ কণা) মুখ্য উৎপাদক। হালদায় এমন ৭৪ প্রজাতির ফাইটোপ্লাংকটন রয়েছে। একইসঙ্গে জু-প্লাংকটন (প্রাণিকণা) রয়েছে ৭১ প্রজাতির। জু-প্লাংকটন ফাইটোপ্লাংকটনকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। ছোট মাছকে বড় মাছ খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এভাবেই জলজ বাস্তুসংস্থান পরিচালিত হয়। আবার এসব প্লাংকটনের উপস্থিতির মাধ্যমে বায়োলজিক্যালি পানি দূষণ পরিমাপ করা হয়। এর আগেও আমেরিকার পিয়ারড রিভিউ জার্নালে হালদা ও বোয়ালিয়া শাখা খালের পানির গুণগত মান নিয়ে দুইটি গবেষণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে।
হালদার বিভিন্ন পানির গুণগত মান নিয়ে ড. সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, শনিবার দিনভর হালদাতেই ছিলাম। মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও বিভিন্ন অংশে জেলেরা অবৈধভাবে মাছ ধরছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। নাজিরহাট, পেশকারহাট, সাত্তারঘাট, রামদাশ হাট, মদুনাঘাট পয়েন্ট থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করেছি।
তিনি বলেন, পাঁচটি পয়েন্টেই লবণাক্ততা নেই বললেই চলে। ফ্রি কার্বন ডাই অক্সাইড ছিল যথাক্রমে ৮ মিলিগ্রাম/লিটার, ৬ মিলিগ্রাম/লিটার, ৯ মিলিগ্রাম/লিটার, ৮ মিলিগ্রাম/লিটার এবং ৯ মিলিগ্রাম/লিটার। স্বাভাবিক কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ৫ মিলিগ্রাম/লিটার থেকে ১০ মিলিগ্রাম/লিটারের মধ্যে ছিল। একইসাথে অক্সিজেনের পরিমাণও স্ট্যান্ডার্ড মান ৫ মিলিগ্রাম/লিটার এর সামান্য ওপরে ছিল। শুধুমাত্র মদুনাঘাটে অক্সিজেনের মাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৬ মিলিগ্রাম/লিটার, যা আশঙ্কাজনক নয়। মদুনাঘাট অংশটি কর্ণফুলীর সঙ্গে সংযুক্ত অংশের কাছাকাছি হওয়ায় এমনটা হয়ে থাকে।
তবে অক্সিজেনের মাত্রা ২ মিলিগ্রাম/লিটারের নিচে নেমে গেলে মাছ মারা যাবে বলে মন্তব্য করেন এই হালদা গবেষক। পরীক্ষালব্ধ ফলাফল নিয়ে তিনি আরও বলেন, পানিতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ, টোটাল হার্ডনেস, টোটাল অ্যালকালিটি, তাপমাত্রা, ট্রান্সফারেন্সি, পিএইচ, ইলেকট্রিক্যাল কনডাক্টিভিটি, টিডিএসের মান স্বাভাবিক মাত্রার মধ্যে ছিল।
উল্লেখ্য, ড. সফিকুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ২০০৯ সালে ৩ দশমিক ৬৩ সিজিপিএ (প্রথম শ্রেণি) নিয়ে অনার্স (সম্মান) শেষ করেন। ২০১০ সালে হালদা ও শাখা খালের পানি নিয়ে থিসিসসহ ৩ দশমিক ৯৪ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে মাস্টার্স (স্নাতকোত্তর) শেষ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১
এমআই/এসি/টিসি