চট্টগ্রাম: যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ৫ম আদালত থেকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব মামলার নথি থেকে ২৭ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭২ টাকার চেক চুরির ঘটনায় এসএ গ্রুপের আইনজীবী না হয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসএ গ্রুপের আইনজীবী দাবি করায় আদালতে মামলা করেছেন। সোমবার ( ২৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটি করেন এসএ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন আলমের পক্ষে এসএ গ্রুপের (এইচআর অ্যান্ড এডমিন) জিএম সৈয়দ রাফিকুল আলম।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড, এসএ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের একটি সহযােগী অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব জ্ঞাতসারে এসএ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিনকে ক্ষতি করার অভিপ্রায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নিজেকে উক্ত মামলায় নিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রচার করেছেন। সামাজিক, ব্যবসায়িক ও ব্যাংকিং মহলে অত্র এসএগ্রুপের পরিচালনাধীন প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এসএ অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ও ব্যবসার চরম ক্ষতিসাধন হয়। যার প্রভাব বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ পুনঃতফসিলকরণ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। যার কারণে এসএ গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আনুমানিক ১০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসএ গ্রুপের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুলতান মােহাম্মদ অহিদ বাংলানিউজকে বলেন, এসএ গ্রুপের বিচারাধীন মামলার নথি থেকে চেক চুরির ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব এসএ গ্রুপের আইনজীবী না হয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসএ গ্রুপের আইনজীবী বলে মিথ্যা বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। যার কারণে এসএ গ্রুপের দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনাম ও ব্যবসার চরম ক্ষতিসাধন হয়েছে। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেবের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে মামলাটি গ্রহণ করেছেন। জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব বিরুদ্ধে সমন ইস্যু করেছেন।
রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) চেক চুরির ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ৫ম আদালতের বিচারক মাে. জহির উদ্দিন মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ৫ম আদালতে দায়রা-১৮৩৭/২০১৪ নথি দেখার জন্য নেন অ্যাডভােকেট জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব। ঐ মামলার আইনজীবী না হয়েও তিনি নথি দেখার অনুরােধ করলে আদালতের অফিস সহায়ক নথিতে রক্ষিত সব কাগজপত্র সঠিক আছে যাচাই করে নথি অ্যাডভােকেটের কাছে দেন। নথি দেখার পর, রেকর্ড অফিস সহায়কের কাছে হস্তান্তর করলে, অফিস সহায়ক নথি যাচাই করে নথিতে রক্ষিত ২৭ কোটি ৯৭ লাখ ৮৮ হাজার ৭২ টাকার চেক নেই। অফিস সহায়ক এবং বেঞ্চ সহকারী আইনজীবীকে অনেক খোঁজাখুজির পরও না পেয়ে আদালতের বিচারককে অবহিত করেন। চেক চুরির বিষয়ে বারের সাধারণ সম্পাদক বেঞ্চ সহকারীকে চেক উদ্ধারের বিষয়ে তৎপর হওয়ার অনুরােধ করেন। মোবাইলে যােগাযােগ করে চুরি করা চেক উদ্ধারের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেন। বারের সাধারণ সম্পাদককে জ্ঞাত করে বেঞ্চ সহকারীকে জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজের কাছে পাঠানো হয়। চেক দেওয়ার কথা বলে বার বার স্থান পরিবর্তন করেন আইনজীবী। নগরের হোটেল আগ্রাবাদ থেকে রাতে ১০টার দিকে আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফরিদ চুরি হওয়া চেক জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব থেকে উদ্ধার করেন।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজের ব্যক্তিগত সহকারী দীপেন দাশগুপ্ত বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে জোবায়ের মােহাম্মদ আওরঙ্গজেব নামে এক আইনজীবী নথি দেখার নামে চেক চুরি ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ ৫ম আদালত থেকে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির অফিসে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) কারণ দর্শানো নোটিশ (শোকজ) পাঠিয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি। আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল হক বাংলানিউজকে বলেন, জোবায়ের মোহাম্মদ আওরঙ্গজেব বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) শোকজের জবাব দিয়েছেন। আমাদের আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের বড়ভাই সিরিয়াস অসুস্থ হয়ে ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক ঢাকায় থাকায় কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২১
এমআই/টিসি